যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের নির্বাচনের পর থেকেই ভোটগ্রহণের কাজ অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সেই সময় থেকে নির্বাচনি কর্মকর্তা এবং কর্মচারিদের বিরুদ্ধে হুমকি বেড়ে গেছে।
Published : 28 Oct 2024, 10:25 PM
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের সময়গুলোতে এক দশক ধরে উইসকনসিন রাজ্যে নির্বাচন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন মেসিলা কোনো। এই প্রশিক্ষণের আওতায় তিনি কর্মীদেরকে নির্বাচনের নিয়মকানুন, যেমন: ফটো আইডি’র প্রয়োজনীয়তা এবং ভোটারদের যোগ্যতার মতো বিষয়গুলো শিখিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছরে বদলে গেছে প্রশিক্ষণের এই ধরণ।
এখন নির্বাচন কর্মীদেরকে শেখাতে হচ্ছে কীভাবে হুমকি মোকাবেলা করতে হবে, আসলেই যে হুমকি আছে সেটি কীভাবে বুঝতে হবে, কী কী লক্ষণ থাকলে সেই হুমকিকে বাস্তব বলে ধরে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি কীভাবে শান্ত রাখতে হবে।
নিউজউইক ম্যাগাজিনকে মেসিলা কোনো বলেন, “কর্মীরা ভোটকেন্দ্রগুলোতে হুমকি পাওয়া নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আমার মনে হয় কিছু মানুষ আতঙ্কিত।” সেকারণে, কর্মীদেরকে ভোটকেন্দ্রে জরুরি পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিতে হবে সে ব্যাপারে তথ্য দিতে শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। যে জরুরি পরিস্থিতি পাঁচ বছর আগে ছিল মূলত চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া এবং দাবানলের মতো বিষয়গুলো।
আর এখন সাধারণ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়টিকে একপাশে রেখে হুমকি মোকাবেলার জন্য একটি সেকশন করা হয়েছে, বলেন কোনো। প্রশিক্ষণ সেশনে তিনি যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হন সেগুলো বেশিরভাগই সংঘাত কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে তা নিয়ে, নয়ত ভোটারদের ভোট জালিয়াতির অভিযোগের ক্ষেত্রে কী করতে হবে তা নিয়ে।
মেসিলা কোনো নিজেও নির্বাচনকর্মী ও ক্লার্কদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কর্মীদের নিরাপদ রাখা এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে ঠিকমত প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিশাল এক দায়িত্ববোধ করি আমি। তারপরও এমন কিছু বিষয় আছে যা এমনকি আমার ধারণারও বাইরে।”
কোনো জানান, তিনি কিছু মানুষকে জানেন যারা নিরাপত্তায় ঝুঁকি থাকার কারণে আর নির্বাচনকর্মী হিসাবে কাজ করছে না। তিনি বলেন, “তারা বেশ ভাল কর্মী ছিল। কিন্তু তারা এখন আর একাজে অংশ নিতে উৎসাহ পাচ্ছে না “
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের নির্বাচনের পর থেকেই ভোটগ্রহণের কাজ অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সেই সময় থেকে নির্বাচনি কর্মকর্তা এবং কর্মচারিদের বিরুদ্ধে হুমকি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভোট জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগ শুনে যারা তৎপর হয়ে ওঠে তাদের দিক থেকে এই হুমকি বেড়েছে।
প্রায় চারজনে একজন (৩৮ শতাংশ) স্থানীয় নির্বাচনি কর্মকর্তার ভোটের কাজ করতে গিয়ে হুমকি পাওয়া, হয়রানি হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এবছরের শুরুর দিকে ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিস পরিচালিত জরিপের ফলে এমনটি দেখা গেছে।
জরিপে এও দেখা গেছে যে, ৫৪ শতাংশ নির্বাচন কর্মকর্তা তাদের সহকর্মী ও স্টাফদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আর ২৮ শতাংশ তাদের পরিবার কিংবা প্রিয়জনদের হুমকির মুখে পড়া এবং হয়রানি হওয়ার আশঙ্কায় আছে।
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার মধ্য যে বিষয়টি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তা হল নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে সাদা পাউডার ভর্তি চিঠি আসার খবর। ১৫ টি রাজ্যে এমন চিঠি আসার খবর মিলেছে। কানসাসে নির্বাচন কর্মীদেরকে এরকম চিঠি পাওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এবটি ভোটকেন্দ্রে সন্দেহজনক পোস্টকার্ড আসার পর কর্মীদেরকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে অনেক সময় ভুয়া ৯১১ কলও আসে। বেশকিছু সংখ্যক পুলিশকে কোনও একটি জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়ে থাকে। নির্বাচন কর্মীদের ক্ষেত্রে এমন ভুয়া কল বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় বলে জানান কোনো।
আর এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কর্মকর্তারা ভোটের দিনে কর্মী ও ভোটারদের সব ভোটকেন্দ্রে নিরাপদ রাখতে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।