চার বছর আগে ভারত ও পাকিস্তান ‘পারমাণবিক দাবানলের’ কাছাকাছি ‘চলে এসেছিল’ বলে নিজের নতুন আত্মজীবনীমূলক বইয়ে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল বলে তার ‘নেভার গিভ অ্যান ইনচ: ফাইটিং ফর দ্য আমেরিকা আই লাভ’ ব্ইতে বলা হয়েছে, জানিয়েছে বিবিসি।
ওই সময় কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে কথিত জঙ্গি আস্তানায় হামলা চালিয়েছিল ভারত। তখনই ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলে দাবি পম্পেওর।
পাকিস্তান সেসময় বলেছিল, তারা ভারতের দুটি জঙ্গি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে এবং এক জঙ্গিবিমানের পাইলটকে আটক করেছে।
‘নেভার গিভ অ্যান ইনচ: ফাইটিং ফর দ্য আমেরিকা আই লাভ’ বইতে পম্পেও বলেন, ওই সময় ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা যে পারমাণবিক দাবানলের কতটা কাছে চলে এসেছিল, বিশ্ব তা সঠিকভাবে জানে বলে মনে করেন না তিনি।
“সত্যিটা হচ্ছে, আমি নিজেও সুনির্দিষ্ট উত্তরটা জানি না, কেবল জানি তারা (পারমাণবিক যুদ্ধের) খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল,” লিখেছেন তিনি।
পম্পেও জানান, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য এক সম্মেলনে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে ছিলেন তিনি, সেসময়ের এক রাতের কথা তিনি ‘কখনোই ভুলবেন না’, যখন ‘ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরের উত্তর সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে কয়েক দশকের বিরোধের সূত্রে একে অপরকে হুমকি দেওয়া শুরু করেছিল’।
কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর ওপর হামলায় ৪০-এর বেশি সৈন্য নিহত হওয়ার পর সেসময় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছিল।
“জঙ্গি হামলা, অংশত যা পাকিস্তানের শিথিল সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার নীতির কারণে হতে পেরেছে,” বলেছেন পম্পেও।
ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালায়।
“এরপর আকাশে দুই বিমানবাহিনীর মুখোমুখি লড়াইয়ে পাকিস্তানিরা একটি বিমান ভূপাতিত করে এবং ভারতীয় বিমানচালককে বন্দি করে,” বলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ভারতের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে ওই রাতে হ্যানয়ে তাকে ঘুম থেকে ওঠানো হয়েছিল বলে জানান পম্পেও। ওই ভারতীয় কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
“তিনি (ভারতীয় কর্মকর্তা) বিশ্বাস করছিলেন যে, হামলার জন্য পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত করা শুরু করেছে। সেই সূত্রেও ভারতও নিজেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তিনি আমাকে জানান।
“আমি তাকে কিছু না করতে এবং সবকিছু বুঝে নিতে আমাদেরকে এক মিনিট সময় দিতে বলি,” লিখেছেন পম্পেও।
তিনি এরপর ‘হোটেলের ছোট নিরাপদ যোগাযোগ সুবিধা’ ব্যবহার করে সঙ্গে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে নিয়ে কাজ শুরু করেন।
পম্পেও পাকিস্তানের তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল কামার আহমেদ বাজওয়ার সঙ্গে কথা বলেন।
“তার সঙ্গে অনেকবারই কথা ও সাক্ষাৎ হয়েছে আমার। তাকে আমি ভারতীয়রা আমাকে কী বলেছে, তা জানাই।
“তিনি (বাজওয়া) বলেন, ভারতের আশঙ্কা সত্য নয়। উল্টো নয়া দিল্লির এমন কথা থেকে তিনি স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করে বসেন যে, ভারতই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা ধরে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদে থাকা আমাদের দলগুলোর দুর্দান্ত কাজের পর দুইপক্ষকেই বোঝানো সম্ভব হয় যে, কেউই পারমাণবিক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে না,” লিখেছেন একসময় সিআইএ-র পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা পম্পেও।
“ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে ওই রাতে আমরা যা করেছিলাম, কোনো দেশই তা করতো না,” লিখেছেন তিনি।
পম্পেওর এই দাবি প্রসঙ্গে এখন পর্যন্ত ভারত বা পাকিস্তান কেউই কোনো মন্তব্য করেনি।
২০১৯ সালে ভারতীয় সেনাদের ওপর ওই হামলায় দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ, ভারত তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল।
পরে নয়া দিল্লি কাশ্মীরকে ভাগ করে রাখা নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) অতিক্রম করে পাকিস্তানি ভূখণ্ডের ভেতরে বিমান হামলা চালায়; ১৯৭১ সালের পর এটিই ছিল এ ধরনের প্রথম হামলা।
এই বিমান হামলায় বিপুল সংখ্যক জঙ্গি প্রাণ হারায় বলে ভারত দাবি করলেও পাকিস্তান একে ‘বেপরোয়া’ অ্যাখ্যা দিয়েছিল।
ভারত ও পাকিস্তান, উভয় দেশ কাশ্মীরের পুরো ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করে আসলেও এর কিছু অংশ ভারত, কিছু অংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পাকিস্তান কাশ্মীর উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের সমর্থন দিয়ে আসছে বলে ভারত দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করলেও ইসলামাবাদ তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ এ পর্যন্ত তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে, যার মধ্যে দুটিই হয়েছে কাশ্মীরকে ঘিরে।