রাশিয়ার মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নাভালনির স্ত্রীর

একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইউলিয়া সমর্থকদেরকে তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং স্বামী নাভালনির মৃত্যুর জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দায়ী করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2024, 01:59 PM
Updated : 19 Feb 2024, 01:59 PM

রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিরোধী নেতা প্রয়াত অ্যালেক্সি নাভালনি রাশিয়ার মুক্তির জন্য যে লড়াই করে আসছিলেন, তা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তার বিধবা স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া।

একটি ভিডিও প্রকাশ করে তিনি সমর্থকদেরকে তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং স্বামী নাভালনির মৃত্যুর জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দায়ী করেছেন।

এর আগে নাভালনির দেহ যে মর্গে রাখা আছে বলা হয়েছিল, সেখানে ঢুকতে নাভালনির মা এবং আইনজীবীদের বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।

৪৭ বছর বয়সী নাভালনি গত শুক্রবার প্রত্যন্ত আর্কটিক অঞ্চলের একটি কারাগারে মারা যান। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে ‘সাডেন ডেথ সিনড্রোমে’ তিনি মারা যান। কিন্তু নাভালনির মিত্রদের বিশ্বাস তাকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে মেরে ফেলা হয়েছে।

ক্রেমলিন এইসব অভিযোগকে আপত্তিকর আখ্যা দিয়েছে। নাভালনির মৃত্যু তদন্তে এখনও কোনও ফল পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তারা। ওদিকে, পুতিন এখনও নাভালনির মৃত্যু নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

বহু দেশে রাশিয়ার দূতাবাসের কাছে নাভালনির মৃত্যুর খবরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।তার স্মরণে মোমবাতি মিছিল করছে মানুষ। রাশিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে ৪০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করেছে পুলিশ।

নাভালনির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষকে বাধা দিচ্ছে রুশ কর্তৃপক্ষ।নাভালনির জন্য শোক প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে আটক হয়েছে।

এ পরিস্থিতির মধ্যে নাভালনির বিধবা স্ত্রী ইউলিয়া রুশ নাগরিকদেরকে বিক্ষোভে ক্ষ্যান্ত না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বামীর রাজনৈতিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি রুশদেরকে তার পাশে দাঁড়ানোর এবং ভিন্ন একটি রাশিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউলিয়া বলেন, “আমি ভীত নই। আপনারা ভয় পাবেন না।” পুতিনের বিরুদ্ধে নাভালনির প্রচারাভিযানকালে প্রায় সবসময়ই স্বামীর পাশে থাকতেন ইউলিয়া। তা রাজনৈতিক সমাবেশই হোক কিংবা ২০২০ সালে নাভালনি বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার পরই হোক।”

ইউলিয়ার জন্ম মস্কোয় ১৯৭৬ সালে। রাশিয়ার প্লেখানোভ ইকোনোমিক্স ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করার পর একজন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকার হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন তিনি।

১৯৯৮ সালে তুরস্কে ছুটি কাটানোর সময় আইনজীবী অ্যালেক্সি নাভালনির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে। এর দু’বছর পর তারা বিয়ে করেছিলেন। তাদের দুই সন্তান আছে।

নাভালনিকে সমর্থন করলেও ইউলিয়া এর আগে বলেছিলেন তিনি রাজনীতিতে আগ্রহী নন। কিন্তু এখন নাভালনি মারা যাওয়ার পর প্রকাশ করা ভিডিও বার্তায় তিনি এ অবস্থান পরিবর্তন করার বার্তা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমার জায়গায় আরেকজন মানুষের এখানে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেই মানুষকে ভ্লাদিমির পুতিন মেরে ফেলেছেন। কারাগারে আর্কটিক সার্কেলের পেছনে পুতিন কেবল একজন ব্যক্তি হিসাবে নাভালনিকেই হত্যা করেননি। তিনি আমাদের আশা, স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যৎকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন।”

“আমরা জানি ঠিক কেন পুতিন তিনদিন আগে অ্যালেক্সিকে মেরেছেন। আমরা শিগগিরই সেটি আপনাদেরকে বলব। কিন্তু অ্যালেক্সি এবং আমাদের জন্য আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি করতে পারি, তা হল লড়াই চালিয়ে যাওয়া।”

বিবিসি জানায়, ইউলিয়া নাভালনায়াকে ব্রাসেলসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ব্রাসেলসে সোমবার ইইউর পররাষ্ট্র কাউন্সিলের বৈঠক হবে। সেখানে ইউলিয়াকে স্বাগত জানাবেন জোটের পররাষ্ট্রনীতি–বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল।

ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে আলোচনা করবেন।

ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শুরুর আগে সোমবার সকালে ব্রাসেলসে লিথুনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি মনে করেন অ্যালেক্সির মৃত্যু ভয়াবহভাবে এটিই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, তিনি আশা করেন, ইইউ শিগগিরই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৩ তম দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।