পুতিনের প্রত্যাশিত জয়, এরপর কোন পথে রাশিয়া?

এবার পুতিন ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। যা সোভিয়েত পরবর্তী যুগে রাশিয়ার কোনও নেতার সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2024, 03:42 PM
Updated : 18 March 2024, 03:42 PM

তিন দিন ধরে চলা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটে প্রত্যাশিত ফলাফলই পাওয়া গেছে। নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে পঞ্চমবারের মত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়ার রাজনীতি এমনকি দেশটির নির্বাচন ব্যবস্থার উপরও যে ক্রেমলিনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা আগেই বোঝা গিয়েছিল।

তা বলে ৮৭ শতাংশ ভোট? পুতিন এত ভোট দিয়ে কী করবেন? কিংবা পুতিনের পঞ্চম মেয়াদ কেমন হবে?

এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, পুতিনের চুতর্থ মেয়াদের শাসন ব্যবস্থার মতই হতে চলেছে পঞ্চম মেয়াদ। খুব বেশি পার্থক্য আশা না করাই ভালো।

কারণ, কোনো জাদুবলেই তীক্ষ্ণ শিকারি বাজপাখি থেকে শান্তির প্রতীক কবুতরে পরিণত হবেন না পুতিন।

বরং চতুর্থ মেয়াদের মত পঞ্চম মেয়াদেও পুতিন বিদেশে যুদ্ধ এবং দেশে ধরপাকড় চালিয়ে যাবেন বলেই বিবিসির এক প্রতিবেদনে ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে।

যার অর্থ, ইউক্রেইন যুদ্ধ যেমন চলছিল তেমনই হয়তো চলবে। পশ্চিমাদের সঙ্গে পুতিনের বিরোধও আগেরমতই থাকবে। সেইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে একটি আদর্শিক প্রচারাভিযান আরো সামনে অগ্রসর হবে। যেখানে পুতিন রাশিয়াকে একটি ক্রমবর্ধমান সামরিক সমাজে রূপান্তরিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন।

রাশিয়ার নাগরিক সমাজ আগে থেকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। পুতিনের নতুন মেয়াদে যে চাপ আরো বাড়বে।

এবারের নির্বাচনে পুতিন ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। যা সত্যিই আশ্চর্যের। যদিও এটাও সত্যি যে, পশ্চিমা বিশ্ব কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না যে রাশিয়ায় স্বচ্ছ ভোট হয়েছে এবং নিজ দেশে পুতিন এতটাই জনপ্রিয় যে ৮৭ শতাংশ ভোটার তাকে ভোট দিয়েছেন।

রাশিয়ায় ভোটের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, “এভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না।”

তবে পশ্চিমারা যত কথাই বলুক, ক্রেমলিন এখন এটা বলতে পারবে যে, পুরো দেশ পুতিনের পেছনে একত্রিত হয়েছে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার উপর জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, তিনি এখন ইউক্রেইনে তার যুদ্ধের জন্য এবং তিনি দেশকে যে পথে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, দেশে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে দাবি করতে পারবেন।

৮৭ শতাংশ ভোট রাশিয়ার রাজনীতির মোড়লদের জন্যও একটি স্পষ্ট বার্তা। সেটা হলো: “মাথায় রাখুন, এখনও এখানে একজনই সর্বেসর্বা। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তারই হাতে এবং খুব শীঘ্রই এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”

Also Read: পুতিনের ছয় বছর পশ্চিমাদের জন্য উদ্বেগ, স্বস্তি চীন-ভারত-ইরান- উ. কোরিয়ার

এবং বাকিদের কাছে এই বার্তা পৌঁছানো ভ্লাদিমির পুতিনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একবছরের কম সময় আগে সংক্ষিপ্ত হলেও নাটকীয় এক বিদ্রোহের মুখোমুখি হতে হয়েছিল পুতিনকে। যে বিদ্রোহ করেছিল রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের দল ওয়াগনার গ্রুপ। ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বে ওই বিদ্রোহ পুতিনের একক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছিল।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য পুতিনই জিতেছেন। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ যে তার হাতে তা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, বিদ্রোহের মাত্র দুই মাস পর উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন।

৮৭ শতাংশ ভোট পাওয়ার আরো একটি বড় সুবিধা হলো, এটা আপনার আত্মবিশ্বাসকে একদম রকেট গতি দেবে। যখন আপনি প্রেসিডেন্ট এবং আপনি এটা বলতে পারবেন যে, আপনি আরেকটি ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন, তখন আপনার নিজেকে আরো শক্তিশালী মনে হবে, এমনকি অপরাজেয় মনেও হতে পারে।

প্রায় ২৫ বছর ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন পুতিন। ক্যাথেরিন দ্য গ্রেটের পর তিনি এখন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাশিয়া শাসন করা নেতা হতে চলেছেন।

তাইতো দেশ যুদ্ধরত থাকা অবস্থাতেও তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাশিয়ার উন্নয়নের কথা বলতে পারেন। যেখানে তিনি দাবি করেন, নিজ দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় তিনি এ যুদ্ধ করছেন। তিনি পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ছিন্ন করেছেন। এবং তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, নির্বাচন-পরবর্তী রাশিয়া আরও শক্তিশালী হবে।

তবে পুতিনের সমালোচকরা বলছেন, একজন নেতার রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস বিশেষ করে অতি-আত্মবিশ্বাস তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

বিশেষ করে যখন কোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য বলে আর কিছু থাকে না। রাশিয়ায় বর্তমানে ক্ষমতার ভারসাম্যের অস্তিত্ব সামান্যই রয়েছে।