ব্যবহারকারীরা বলছেন, অ্যাপল ও গুগলের অ্যাপ স্টোর থেকেও অ্যাপটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
Published : 19 Jan 2025, 12:20 PM
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আইন কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগেই বন্ধ হয়ে গেল জনপ্রিয় টিকটক অ্যাপ।
অ্যাপটিতে ঢুকতেই দেশটির ব্যবহারকারীদের মোবাইলে এখন টিকটক বন্ধের বার্তা ভেসে উঠছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
বার্তায় বলা হচ্ছে, “দুঃখিত, এই মুহূর্তে টিকটক সেবা বন্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার একটি আইন কার্যকর হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর মানে আপনি এখন টিকটক ব্যবহার করতে পারবেন না।”
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করা আইনে রোববার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি বন্ধ হলেও নতুন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অপেক্ষা করছে অ্যাপটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স। অ্যাপ বন্ধের বার্তায় সেই বিষয়টিও তুলে ধরেছে তারা।
বার্তায় লেখা হয়েছে, “দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষয়টি সমাধানে আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন বলে আভাস দিয়েছেন।”
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল ‘প্রটেকটিং আমেরিকানস ফ্রম ফরেন অ্যাডভারসারি কন্ট্রোলড অ্যাপলিকেশন অ্যাক্ট’ নামের একটি বিলে সই করলে যুক্তরাষ্ট্রে হুমকির মুখে পড়ে টিকটক।
টিকটক নিয়ে শুক্রবার দেওয়া রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বাইডেনের করা আইনকে সমর্থন দিলে দেশটিতে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। রোববার থেকে আইনটি কার্যকর হচ্ছে। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই বন্ধ হয়ে গেছে টিকটক।
ব্যবহারকারীরা বলছেন, অ্যাপল ও গুগলের অ্যাপ স্টোর থেকেও অ্যাপটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। টিকটক ডটকমও কোনো ভিডিও দেখাচ্ছে না।
টিকটক অফলাইনে যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ভিডিও পোস্ট করে তাদের ফলোয়ারদের বিদায় জানান।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর নিকোলে ব্লুমগার্ডেন বিবিসিকে বলেন, টিকটকে না থাকার ফলে তার আয় ব্যাপক কমে যাবে।
এরিকা থমসন নামে আরেক ব্যবহারকারী বলেন, টিকটকের শিক্ষামূলক কনটেন্ট না পাওয়াটা কমিউনিটির জন্য ‘বড় ক্ষতি’ হবে।
সামাজিক এই যোগাযোগমাধ্যমটি এমন সময়ে বন্ধ হয়েছে, যার পরদিনই নতুন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অবশ্য টিকটককে সময় দিতে চান।
শনিবার ট্রাম্প সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে বলেন, টিকটক নিষিদ্ধের ব্যাপারে তিনি ৯০ দিন সময় দিতে চান। আর যদি তিনি সেটির করার সিদ্ধান্ত নেন, তা সোমবারই ঘোষণা দেবেন।
হোয়াইট হাউজও বলছে, টিকটকের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে, তা নতুন প্রশাসনের ওপর নির্ভর করছে।
জো বাইডেনের করা আইনটিতে বলা হয়, চীনা মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স টিকটকে তাদের অংশীদারত্ব ছয় মাসের মধ্যে কোনো আমেরিকান কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেবে, নয়ত যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হবে।
টিকটক ওই আইন আটকাতে ৭ মে আদালতে যায়, তাদের আবেদনে বলা হয়, এ ধরনের আইন বাকস্বাধীনতার অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এরপর ২ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্র সরকার টিকটকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। সেখানে অভিযোগ করা হয়, চীনা এই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি অবৈধভাবে শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করছে এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার চেষ্টা করলে তাতে সাড়া দিচ্ছে না।
৬ ডিসেম্বর ফেডারেল আপিল আদালত টিকটকের মামলা খারিজ করে দেয়। ফলে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে বাইটড্যান্সের শেয়ার বিক্রি না করলে টিকটক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আরো জোরালো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টকে তার শপথ না হওয়া পর্যন্ত টিকটক নিষিদ্ধের আইনটি পেছানোর অনুরোধ করেন। তার আইনজীবী বলেন, প্রেসিডেন্ট ‘রাজনৈতিক উপায়ে’ এ সমস্যা সমাধানের একটি সুযোগ চান।
এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে টিকটক। টিকটক এবং কন্টেন্ট নির্মাতাদের আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে যুক্তরাষ্ট্রে এ প্ল্যাটফর্মের ১৭ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘিত হবে।
কিন্তু শুক্রবার দেওয়া রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বাইডেনের করা আইনকে সমর্থন দিলে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়।
বিষয়টি সমাধানের পথ খুঁজতে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর তাকে ধন্যবাদ জানান টিকটকের প্রধান নির্বাহী শো জি চিউ। সোমবার ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-
মার্কিন প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে রোববারই অ্যাপ বন্ধ, জানাল টিকটক