আর্টেমিস: একটি ভেড়া ও একটি কুকুরের চন্দ্রাভিযান

স্নুপি হবে শূন্য মাধ্যাকর্ষণ সূচক। আর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রতিনিধি হয়ে চাঁদে যাচ্ছে শউন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2022, 03:21 PM
Updated : 3 Sept 2022, 03:21 PM

আর্টেমিস ওয়ান ফ্লাইটে মানুষ না পাঠালেও এবারের চন্দ্রাভিযান ভরপুর বৈচিত্র্যময় যাত্রীতে। স্নুপি ও শউন নামে দুই বিশেষ নভোচারীও রকেট উৎক্ষেপণের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

স্নুপির দ্বিতীয় দফায় মহাকাশ ভ্রমণ

গত ৫০ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছে ছোট একটি কুকুর। তার নাম স্নুপি।

মিশন অ্যাপোলো থেকেই চার্লিস এম স্কুলজ ও স্নোপির সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার। নতুন নতুন শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে মিশন আর্টেমিসেও এই চুক্তি জারি রয়েছে।

চার্লিস এম স্কুলজ হলেন কমিক চরিত্র স্নুপির জন্মদাতা। পিনাটস কমিকে ১৯৫০ সালে প্রথম দেখা গিয়েছিল কার্টুন চরিত্র স্নোপিকে।

সেই স্নুপি এখন ’প্লাশ ডল’ বা পুতুল অবয়বে ওরিয়ন ক্যাপসুলে বসে চাঁদে যাচ্ছে শূন্য মাধ্যাকর্ষণ সূচক বা জিরো গ্রাভিটি ইন্ডিকেটর হয়ে।

মহাকাশ যখন মাইক্রোগ্রাভিটিতে ওজনহীন হয়ে উঠবে সেসময় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ সূচক ভেসে বেড়াতে শুরু করবে। ওরিয়ন ক্যাপসুলের মহাকাশ যাত্রীদের কেবিনে তিন ম্যানিকিনের সঙ্গে থাকা স্নুপি থাকবে তখন আলাদা নজরে। কারণ কেবিনে শূন্য মাধ্যাকর্ষণ সূচক হয়ে ভেসে বেড়াতে কেমন লাগছে সেসব তথ্য সরবরাহ করবে স্নোপি।

ঘরে ঘরে পরিচিত চরিত্র স্নুপি মহাকাশযাত্রার নিরাপত্তার দিকগুলো সবাইকে জানাত সেই অ্যাপোলোর সময় থেকেই। স্কুলজ স্নুপিকে নিয়ে কমিকে দেখাতেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ জয়ের গল্প।

১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১০ মিশনে নভোচারীরা আগে চাঁদের অক্ষে ঘুরে আসেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অ্যাপোলো ১১ মিশনের অবতরণ স্থান চিহ্নিত করা। নভোচারীরা এই মিশনের লুনার মডিউলের নাম দেন স্নুপি।

১৯৯০ সালে এসটিএস-৩২ মিশনে কলম্বিয়ায় চড়েছিল স্নুপি; সেই ছিল তার প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ।

নাসায় কর্মী ও সহযোগী সংস্থাদের উচ্চ সম্মান জানাতে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। অ্যাপোলো যুগ থেকে চালু হওয়া এই সম্মাননার নাম সিলভার স্নুপি অ্যাওয়ার্ড। স্নুপির আদলে একটি রুপালি পিনও দেওয়া হয় এই সম্মাননার সঙ্গে, যা পরে মহাকাশ পাড়ি দেন নভোচারীরা।

এই প্রথার রদ হচ্ছে না এবারও। আর্টেমিস ওয়ান মিশনও নিয়ে যাচ্ছে একগুচ্ছ রুপালি স্নুপি পিন।

২০১৯ সালে নাসা ও পিনাট ওয়ার্ল্ডওয়াইড মিলে অ্যাপোলো ১০ মিশনের ৫০তম বার্ষিকী পালন করেছিল। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল এই দু্ইয়ের যুথবদ্ধতার উদযাপনও। এরপর থেকে নাসা ও পিনাট মিলে ’স্টেম’ কার্যক্রম শুরু করে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ছোট প্রামাণ্যচিত্র ও আরো অন্য উপায়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের মজার দিকগুলো তুলে ধরা হত নতুন প্রজন্মের কাছে।

নাসা ও পিনাটের স্পেস অ্যাক্ট এগ্রিমেন্ট এরপর সুযোগ করে দিল স্নুপিকে স্পেসস্যুটে দেখার। স্নুপিকে একটি কমলা রঙের স্যুট পরানো হবে। সেই সঙ্গে থাকবে হাতের গ্লোভস, পায়ে বুট এবং নাসার লোগো।

স্নুপি সঙ্গে করে শুধু যে রুপালি স্নুপি পিন নিয়ে যাচ্ছে তা নয়, চার্লিস এম স্কুলজের পিনাট স্টুডিও থেকে একটি কলমের নিব তার সঙ্গে যাবে এই চন্দ্রাভিযানে।

সামনেই ’স্নুপি ইন স্পেস’ এর নতুন পর্ব দেখানো শুরু হবে অ্যাপল টিভি প্লাসে।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির হয়ে চাঁদের পথে শউন

স্টপ-মোশন অ্যানিনেশনে শউনের জনপ্রিয়তা বেশ রয়েছে। ’শউন দ্য শিপ’ নামে একটি টেলিভিষণ সিরিজের মূল চরিত্র এই বুদ্ধিদীপ্ত ভেড়া এবার আলোচনায় এসেছে চন্দ্রাভিযানের যাত্রী হয়ে।

আর্টেমিস মিশনে পাওয়ার জোগান দেওয়া সার্ভিস মডিউলটি করে দিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)। তাদের প্রতিনিধি হয়েই প্লাশ ডল হয়ে চাঁদে যাচ্ছে শউন।

ইএসএর হিউম্যান অ্যান্ড রোবটিক এক্সপ্লোরেশন পরিচালক ডেভিড পারকার বলেন, ”এই মুহূর্তটি শউন ও আমাদের জন্য রোমাঞ্চকর।

”শউন যে এই মিশনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে তাতে আমরা দারুণ খুশি। এটি হয়ত মানুষের জন্য খুব ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মেষ প্রজাতির জন্য এ নিশ্চয়ই বড় একটি যাত্রা।”

শউনের জন্ম হয়েছে আর্ডম্যান অ্যানিমেশন স্টুডিওতে। এই ভেড়াশাবক পুতুলের সত্যিকার চন্দ্রাভিযানে আর্ডম্যানের সহযোগিতা নিয়েছে ইএসএ।

আর্ডম্যানের বিপণন পরিচালক লুসি ওয়েনডোভার বলেন, ”শউন এই চন্দ্রাভিযানে নেতৃত্বে থাকাদের একজন। আমাদের পশমী রোমাঞ্চে এ এক বিশাল সম্মান।”

”শউনের প্রথম টিভি ধারাবাহিকের ১৫ বছর পূর্তি হলো ২০২২ সালে। চন্দ্রাভিযান ছাড়া আর কি হতে পারে এমন উদযাপন করা যায়। এর আগে কোনো মেষশাবক এতদূর যায়নি”, বলেন লুসি।

২০১৯ সালে ’এ শউন দ্য শিপ মুভি: ফার্মাগেডন’ অ্যানিমেশনে শউন মহাকাশ থেকে আসা একজন নভোচারীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। আর আজ সে নিজেই ওরিয়ন ক্যাপসুলের কেবিনে থাকবে নভোচারী হয়ে।

ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রোববার প্রথম প্রহর) ছেড়ে যাবে রকেট, এখন চলছে সেই প্রস্তুতি পর্ব।

নাসার এবারের মিশনে মানুষ থাকছে না। তবে চাঁদে মানুষ পাঠানোর আগামীর মিশনকে সফল করতে কী কী প্রতিবন্ধতার মুখে পড়তে হতে পারে, তা বুঝে নিতেই এবার ওরিয়ন ক্যাপসুলে আরো থাকছে তিন ম্যানিকুইন।