সালতামামি ২০২৩: প্রেম-ভালবাসায় সামাজিক মাধ্যমে উদ্ভট ট্রেন্ডের বছর

এ বছরের অনলাইন ডেটিং জগতে বেশ কিছু ভাইরাল ট্রেন্ড দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে রোমান্স, ভাগ্য ও বিভিন্ন এমন উদ্ভট আচরণ, যেগুলো এর আগে কখনোই দেখা যায়নি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2023, 10:35 AM
Updated : 28 Dec 2023, 10:35 AM

এ বছর বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বেড়েছে সত্যিকারের ভালোবাসার সঙ্গী খোঁজার প্রবণতা।

আর পছন্দের সঙ্গী নিজেও সম্পর্কটিকে গভীরে ধারণ করেন কি না, সেটি খুঁজে দেখতে নিজেদের পছন্দের শিল্পী, নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারি ও বিভিন্ন স্মার্টফোন অ্যাপের সহায়তা নিতে দেখা গেছে একক ও যুগল ব্যবহারকারীদের।

এ বছরের অনলাইন ডেটিং জগতের ভাইরাল ট্রেন্ডগুলোতে বেশ কিছু পুরনো রেওয়াজকে ফিরতেও দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে রোমান্স, ভাগ্য ও বিভিন্ন এমন সব ঘটনা, যেগুলো স্রেফ উদ্ভট। কোনো যুক্তই মেলে না এসবের পেছনে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে, সঙ্গী খোঁজার কয়েকটি ট্রেন্ড নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।

ডেটিং র‍্যাপড ২০২৩

ডিসেম্বরের শুরুতে অনলাইনে ‘স্পটিফাই র‍্যাপড ২০২৩’ শীর্ষক পোস্ট শেয়ার করতে দেখা গেছে ব্যবহারকারীদের, যেখানে তারা এর আগের এক বছর কোন শিল্পী, গান, গানের ‘জনরা’ ও পডকাস্ট সবচেয়ে বেশিবার শুনেছেন, তা শেয়ার করেছে সুইডিশ অডিও স্ট্রিমিং সেবাটি।

তবে, এ বছর বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সিঙ্গল ব্যক্তিদের ‘ডেটিং আনর‍্যাপড’ হ্যাশট্যাগওয়ালা ট্রেন্ড শেয়ার করার প্রবণতা বেড়েছে।

এ ট্রেন্ডের বেশিরভাগই এসেছে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আকারে, যেখানে গোটা বছর জুড়ে বিভিন্ন মানদণ্ডে নিজেদের ডেটিং অভিজ্ঞতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছেন ব্যবহারকারীরা। এর মধ্যে রয়েছে কীভাবে তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে, সে সম্পর্ক কতদিন টিকেছে, সম্পর্কটি কার মাধ্যমে কীভাবে ভেঙেছে ও কোন জায়গায় তাদের দেখা হয়েছিল, এমন বিষয়গুলো।

টিকটকে এ হ্যাশট্যাগওয়ালা পোস্টের সংখ্যা ১১ কোটি ৬২ লাখ।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে ‘টারা’স ডেটিং র‍্যাপড’ হ্যাশট্যাগ থাকা এক ভিডিও, যেটির ভিউ ১১ কোটি ৭০ লাখ। ওই নারীর দাবি, এ ‘ট্রেন্ড’ নিয়ে তিনি এতটাই সিরিয়াস ছিলেন যে, মাসে অন্তত একবার বাধ্যতামূলক ডেটিংয়ে যেতেন তিনি।

এমনটি করতে গিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে দুইবারও দেখা হয়েছে তার। তবে, ডেটিংয়ে যাওয়া ১৪ ব্যক্তির মধ্যে কেবল তিনজনকেই তার পছন্দ হয়েছিল। আর এর মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে তার আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল, যাদেরকে ‘রিটার্নিং ক্যারেক্টার’ বলে লিখেছে স্কাই।

এতে কি কাজ হয়?

প্রেমের সম্পর্ক, মানসিক যোগাযোগ ও অনলাইনে মানুষের আচরণ নিয়ে গবেষণায় ইচ্ছুক ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট লন্ডনের মনোবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মার্ক কলসন বলছেন, বছর শেষ হলে মানুষ তার সম্পর্ক নিয়ে কাঁটাছেড়া করার সুযোগ পায়, যা প্রচলিত মানসিক ক্ষেত্রে ‘খুবই স্বাভাবিক’ হিসেবে বিবেচিত।

“কয়েকটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অন্যতম ভালো দিক হল, সেগুলো আপনাকে ডিজিটাল জার্নালিংয়ের সুযোগ দেয়।”

অনেক ঘটনাই আমাদের মনে থাকে না। তাই, সেগুলোর রিমাইন্ডার পাওয়ার বিষয়টিকে ভালোই বলা যায় বলে মনে করেন তিনি।

“আপনার অভিজ্ঞতা রেকর্ড করার বিষয়টি, ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, কাজে আসে।”

তিনি আরও যোগ করেন, এমন ট্রেন্ডের ফল সাধারণত ভালো হলেও এতে খারাপ অভিজ্ঞতার নজিরও আছে, যেখানে ভুক্তভোগীর এমনসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, যেগুলো গোপন থাকাই ভালো ছিল।

অন্যদিকে, ডেটিংবিষয়ক ভিডিওতে শেয়ার করা কারো নেতিবাচক অভিজ্ঞতা অন্যদের জন্য বোঝাপড়ার ক্ষেত্রেও সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

“যখন আমরা কারও বাজে সম্পর্ক বা ডেটিংয়ের অভিজ্ঞতা দেখি, তাদের কাছে সেটি কেয়ামতের মতো অভিজ্ঞতা মনে হলেও যখন দেখা যায় যে অনেকেই এমন অবস্থার মধ্যে পড়েছেন, সেটি জানলে ঘটনাটি স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে সহজ হয়।”

কলসনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে মনোবিজ্ঞানী ড. ভেনেশিয়া লিওনিডাকি আরও যোগ করেন, এমন ট্রেন্ডের ‘ব্যবসায়িক ধরন’ মানুষকে প্রেম জীবনের টেনশন ও ভয়াবহ অনিশ্চয়তা থেকে দূরে রাখতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।”

কমলার খোসা তত্ত্ব (ও অন্যান্য পরীক্ষা)

সামাজিক মাধ্যম টিকটকে ‘বয়ফ্রেন্ড পরীক্ষা’র সর্বশেষ ট্রেন্ড হল ‘অরেঞ্জ পিল থিওরি’ বা কমলার খোসা তত্ত্ব।

এটি শুরু হয়নভেম্বরে, যখন লোকজন পছন্দের সঙ্গীকে একটি কমলা খোসা ছাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করতে শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে সঙ্গীর আচরণ দেখে তাদের সম্পর্কের গভীরতা মাপা হয়।

আর এ নিরীহ অনুরোধ কাজ করে সঙ্গীর ‘সেবার মানসিকতা’ পরীক্ষা করার উপায় হিসেবে। একই নামে ১৯৯২ সালে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন লেখক ও মন্ত্রী গ্যারি চ্যাপম্যান, যেখানে প্রেমের ভাষার পাঁচটি তত্ত্ব তুলে ধরেছিলেন লেখকরা।

এর মধ্যে কেউ কেউ তাদের সঙ্গীর জবাব ভিডিওতে ধারণ করলেও অনেকেই কেবল এ পরীক্ষার ফলাফল পোস্ট করেছে অনলাইনে।

এর মধ্যে একজন লেখেন, “তত্ত্বটি আমাকে সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন আমার বয়ফ্রেন্ড বৃষ্টির মধ্যে আমার জন্য গাড়ি নিয়ে এসেছিল যাতে আমি ভিজে না যাই।”

আরেক নারী লেখেন, “সে সবসময় আমার বাজারের ব্যাগ বহন করে, আমার থালা বাসন মেজে দেয় কারণ সে জানে, আমি এ কাজগুলো অপছন্দ করি। এ ছাড়া, অসুস্থ হলে সে আমাকে গরম তোয়ালে এনে দেয়, আমার মেজাজ খারাপ থাকলে চকলেট আনে কারণ সে জানে এতে আমি খুশি হব। আর কেউ যদি আপনাকে এতটা ভালবাসে, তবে সেটি বিশ্বের সবচেয়ে সুখের অনুভূতি।”

এদিকে, নিজেদের দশক দীর্ঘ বন্ধুত্ব পরীক্ষার জন্য এ ট্রেন্ড ব্যবহার করতে দেখা গেছে ‘ব্রিটেন’স গট ট্যালেন্ট’-এর দুই উপস্থাপক অ্যান্ট ও ডেককেও।

যখন ডেক অ্যান্টকে কমলার খোসা ছাড়াতে বলেন, তখন অ্যান্ট রাজি হলেও তার মধ্যে সন্দেহ কাজ করেছে এটি কোনো ‘কৌতুক’ বা ‘ফাঁদ’ কি না। তবে, ডেক তাকে জোর দিয়ে বলেন, ‘এটা স্রেফ একটা কমলা।’!

সম্প্রতি টিকটকে এ তত্ত্বের হ্যাশট্যাগযুক্ত পোস্টের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে পাঁচ কোটি ৪০ লাখে। তবে, এর চেয়েও জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘বেকহাম টেস্ট’ নামের পরীক্ষাটি, যার পোস্ট সংখ্যা এরইমধ্যে নয় কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে।

এর সূত্রপাত ঘটে অক্টোবরে, জনপ্রিয় ইংলিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহামের জীবন নিয়ে নেটফ্লিক্সের তথ্যচিত্র প্রকাশের পর। ওই তথ্যচিত্রের এক দৃশ্যে দেখা যায়, তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া বেকহাম বাড়ির রান্নাঘরে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী ডলি পার্টন ও কেনি রজার্সের গাওয়া ‘আইল্যান্ডস ইন দ্য স্ট্রিম’ গানটি বাজাচ্ছেন।

যখন তিনি গানের তালে নাচতে শুরু করেন, তখন ডেভিড বেকহাম কোনো কথা না বলেই তার সঙ্গে নাচে যোগ দেন।

একই ধরনের পরীক্ষা দেখা গেছে অনলাইনেও, যেখানে লোকজন তার সঙ্গীকে কোনো পাখি দেখানোর পর তারা একইরকম উচ্ছসিত হন কি না, সেটা দেখা হয়। এর লক্ষ্য হচ্ছে, একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কতটা আগ্রহী, তা পরখ করে দেখা।

কাজ হয় এসব পরীক্ষায়? না

এ ধরনের যাবতীয় পরীক্ষাই ‘ভিত্তিহীন’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন অধ্যাপক কলসন।

“মনোবিদ্যার ক্ষেত্রে, আমরা যদি কারও আচরণ পরিমাপ করতে চাই, তবে তা কোনো একক ঘটনা বা আচরণের ওপর ভিত্তি করে নয়।” --বলেন তিনি।

“আমরা যদি অন্য কারও ব্যক্তিত্ব বোঝার চেষ্টা করি, তবে আমাদেরকে অন্তত ৬০টি প্রশ্ন করতে হবে। এর চেয়ে কম হলে সেটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না।”

“আপনি সত্যিই কারও সঙ্গে মিশতে ও সারা জীবন তার সঙ্গে কাটাতে চাইলে, তারা কী ধরনের ব্যবহার করেন, তা আপনাকে শিখতে হবে ও সে অনুযায়ী নিজেকে ঢেলে সাজাতে হবে। আর তাকে পরীক্ষা না করে বরং তার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করুন।”

ইনভিজিবল স্ট্রিং থিওরি

দিনের মাত্রা ছোট হয়ে আসার পর থেকেই টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে কোটি কোটি ব্যবহারকারীকে এ তত্ত্ব সম্পর্কে পোস্ট করতে দেখা গেছে।

এ তত্ত্বের জনপ্রিয়তা বেড়েছে একই শিরোনামে মার্কিন পপ গায়িকা টেইলর সুইফটের গান প্রকাশের পর, যেখানে ‘ক্লুজ আই ডিডন’ট সি’ এবং ‘হাইডিং ইন প্লেইন সাইট’-এর মতো লাইন রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। আর এর সূত্রপাত ঘটেছে চীনা রূপকথা থেকে, যেখানে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়টি ‘রেড স্ট্রিং অফ ফেইট’ নামে পরিচিত।

ওই রূপকথা অনুসারে, কোনো ব্যক্তির ‘সোলমেট’ তাদের আশপাশেই থাকতে পারে। তবে, তাদের দেখা পাওয়ার সময়টি না আসা পর্যন্ত এ নিয়ে ভাগ্যের ওপরই নির্ভর করতে হয়।

টিকটক বা ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমে এ ধরনের ট্রেন্ড রিল আকারে প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে সাধারণত সুইফটের ওই গানটি বাজে। এ ছাড়া, সম্ভাব্য সঙ্গীর একই শহরে বেড়ে ওঠা, একই অফিসে কাজ করা, বা কোনো ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কখনোই দেখা হয়নি, এমন কাকতালীয় তথ্যও শেয়ার করা হয় এ ধরনের পোস্টে।

হ্যাশট্যাগটি টিকটকে ২৩ কোটির বেশি ভিডিও’র সঙ্গে যোগ করা হয়েছে।

ওপরের ট্রেন্ডের একটি উদাহরণ হল, এক নারী এমন এক বয়ফ্রেন্ড খুঁজে পেয়েছেন, যিনি তার বড় ভাই ও বাবার মতোই একই পার্কে শিশু বয়সে বাস্কেটবল খেলতেন। তবে, এর বেশ কয়েক বছর পর এক ডেটিং অ্যাপে তাদের পরিচয় ঘটে।

আরেকটি ঘটনায় এমন এক যুগল খুঁজে পাওয়া গেছে, যেখানে পুরুষ সঙ্গীকে দেখা গেছে মেয়েটির সাবেক বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে যাওয়া এক কনসার্টের ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে।

এতে কি উপকার মেলে? 

অধ্যাপক পলসনের মতে, এ ধরনের সকল পরীক্ষাই ‘প্রতারণামূলক’, যেখানে পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে ইন্টারনেট ও টিকটক ব্যবহার করা ব্যক্তিদের ডেটা।

“আমরা এত বেশি তথ্যে প্রবেশাধিকার পেয়েছি, যেখানে মানুষের সবচেয়ে বিরল অভিজ্ঞতাগুলোও সাধারণ হয়ে ওঠে।”

“আর ওই ডেটার ভিত্তিতে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।”

তবে, ড. লিওনিডাকি বলছেন, এ ধরনের প্রক্রিয়া মানুষের বাজে সময়গুলোতে ‘ইতিবাচক অনুভূতি দেওয়া, রোমান্টিসিজম ধরে রাখা ও অনুপ্রেরণা যোগানোর ক্ষেত্রে’ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

বিজ ফ্ল্যাগ

মানুষের আচরণে রেড বা গ্রিন ফ্ল্যাগ দেওয়ার এ ধারণা আগে থেকেই প্রচলিত।

তবে, জুন মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ‘বিজ ফ্ল্যাগ’ নিয়ে আলোচনা বেড়েছে, যা ব্যবহারকারী সহজেই ফলোয়ারের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন।

এর মধ্যে রেড ফ্ল্যাগ দেওয়ার মানে, ওই সম্পর্ক শেষ হওয়া উচিৎ। আর গ্রিন ফ্ল্যাগের মানে, পছন্দের সঙ্গী খুবই সম্ভাবনাময়। আর বিজ ফ্ল্যাগের অবস্থান এ দুই পরিস্থিতির মাঝামাঝি জায়গায়।

স্কাই বলছে, ভালোবাসা খোঁজার ক্ষেত্রে এটি এক ধরনের অদ্ভুত, বিরক্তিকর ও বিব্রতকর বৈশিষ্ট্য।

ট্রেন্ডটি গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু হওয়ায় টিকটকে এরইমধ্যে এ হ্যাশট্যাগ সংশ্লিষ্ট পোস্টের সংখ্যা একশ কোটি ছাড়িয়েছে।

এর সূত্রপাত ঘটেছে, ফরাসি-কানাডীয় ইনফ্লুয়েন্সার লরা গউরিয়নের কাছ থেকে।

স্কাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিটিশ পপ ব্যান্ড ‘টেইক দ্যাট’-এর ফ্রন্টম্যান গ্যারি বার্লোর বিজ ফ্ল্যাগ বিষয়ক পোস্ট যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা পোস্টগুলোর একটি, যেখানে তিনি ট্রেন্ডটিকে বিদ্রুপ করে বলেছেন, ‘যে কোনো নতুন জায়গায় ভ্রমণ করলেই আমি সেলফি তুলে থাকি।”

এটা কি সহায়ক? হ্যাঁ

ড. লিওনডাকি বলছেন, এ তিনটি ফ্ল্যাগই ‘সম্পর্কের অবস্থা’ ব্যাখ্যা করার সহজ উপায়।

তবে, এ ধরনের পরীক্ষার ক্ষেত্রে ‘অতি সহজে’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি নিয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।

অধ্যাপক কলসনের মতে, এ ধরনের ট্রেন্ডে ‘সঙ্গী মেনে নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও’ মনে হতে পারে।

মাস্টারডেটিং

নিজের সঙ্গে প্রেম করা একেবারে পুরনো ধারণা, বিষয়টি এমন নয়। ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মে এমন আত্মকেন্দ্রিক ভালবাসা উদযাপন করতে দেখা গেছে।

তবে, এ বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন পপ গায়িকা মাইলি সাইরাসের ‘ফ্লাওয়ার্স’ গানটি বিলবোর্ডে রাজত্ব শুরুর পর নতুন নামে এ ট্রেন্ড আবারও ভাইরাল হতে শুরু করে।

গানের লাইন থেকে ইঙ্গিত মেলে, মাস্টারডেটিং বিভিন্ন রূপে ঘটতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নিজেকে ফুলের তোড়া কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে দামী নৈশভোজ করানো এমনকি নতুন কোনো কাজে যুক্ত করাও।

টিকটকে এরইমধ্যে এ ট্রেন্ড সংশ্লিষ্ট পোস্টের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৫০ লাখের কাছাকাছি। এ ছাড়া, এ শব্দ খোঁজার প্রবণতাও বাড়তে দেখা গেছে।

এটায় কাজ হয়? সম্ভবত

ড. লিওডিনাকি এ ধরনের ডেটিংকে আখ্যা দিয়েছেন ‘ক্ষমতায়নের এমন উৎস’ হিসেবে, ‘যা নিয়ে পরবর্তীতে ব্যাখ্যা দেওয়া লাগে না’।

“আমি কখনওই নিজেকে বোঝার বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করব না।” --বলেন কলসন। 

“তবে, এতে যেন বাস্তবতার ছোঁয়া থাকে ও এটি যেন ক্ষতিকারক উপায়ে ব্যবহার করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

গার্লফ্রেন্ড ইফেক্ট

অগাস্টে মার্কিন কনটেন্ট নির্মাতা গেইব এস্কোবার টিকটকে একটি ছবির সিরিজ পোস্ট করেন, যেখানে নিজ প্রেমিকার সঙ্গে পরিচয়ের পর তার বাহ্যিক রূপ কীভাবে বদলেছে, সে বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

পোস্টটি খুব দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। এমনকি দুই কোটির বেশি রিএকশন পায় পোস্টটি। এর পর থেকে অন্যান্য ব্যবহারকারীর মধ্যেও এ ট্রেন্ড শুরু হয়।

ট্রেন্ডটি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এ হ্যাশট্যাগযুক্ত পোস্টের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়েছে।

তবে, এর মাধ্যমে ছবির সিরিজ পোস্ট করায় সঙ্গীর ওপর জোর করার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে বলেও যুক্তি দেখিয়েছেন ব্যবহারকারীদের একটি অংশ।

এটা কি সহায়ক? হয়ত

“সম্পর্কে জড়িয়ে কাউকে পুরোপুরি বদলে ফেলা যদি আপনার লক্ষ্য হয়ে থাকে, তবে ‘গুড লাক’! আপনি খুবই বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাবেন।” --বলেন কলসন।

তিনি আরও যোগ করেন, এ ধরনের সামাজিক তুলনা মানুষকে ‘মানসিকভাবে চাঙ্গা’ রাখতে পারে।

“একটি ইতিবাচক সামাজিক তুলনা আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করে, ‘আমি ওই ব্যক্তির মতো হতে পারি’। তবে, নেতিবাচক তুলনার ক্ষেত্রে আপনি কেবল হতাশ হবেন, যেখানে আপনি হয়ত ভাবছেন– আমি কখনওই অতো ধনী বা সুন্দর হতে পারব না।”

সঙ্গীর অনুপ্রেরণায় কারও ড্রেসিং সেন্স বা অন্য কোনো অভ্যাস উন্নত হলে, তা সম্ভবত ইতিবাচক বিষয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে স্কাই।