এআই ডে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রকে বদলে দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলির।
Published : 19 Jul 2023, 02:25 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে প্রথমবারের মত বৈঠক করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
বৈঠকে চীন বলেছে, এ প্রযুক্তির ‘লাগামহীন ঘোড়ার মত’ ছোটা থামাতে হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, প্রযুক্তি যেন সেন্সরশিপ বা দমন-পীড়নের হাতিয়ার না হয়।
বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি। তার মতে, এআই মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রকে বদলে দেবে।
তার ভাষ্য, জরুরি ভিত্তিতে এ ধরনের প্রযুক্তির ওপর বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে, কারণ এআই ব্যবহারকে কোনো সীমানার মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে না।
তিনি এও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা এবং অর্থনীতির গতি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
তবে তিনি সতর্ক করেন, ভুল তথ্য ছড়ানোর কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার হতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি– দুই পর্যায়েই ‘হাতিয়ার’ করা হতে পারে এ প্রযুক্তিকে।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, এআই স্টার্টআপ ‘অ্যানথ্রোপিক’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ক্লার্ক এবং গবেষণা সংস্থা ‘চায়না-ইউকে রিসার্চ সেন্টার ফর এআই এথিক্স অ্যান্ড গভর্নেন্স’ এর সহ-পরিচালক অধ্যাপক জেং ইয়ি বক্তব্য দেন।
গুতেরেস বলেন, “সামরিক ও বেসামরিক খাতে এআই এর ব্যবহার বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে।”
‘অসাধারণ’ এই প্রযুক্তিকে সুশাসনের মধ্যে আনতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা বা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের আদলে জাতিসংঘের অধীনে আদালাদ একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির যে দাবি উঠেছে, তাতে সমর্থন দেন গুতেরেস।
জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বর্ণনা করেন ‘দুই ধারী তলোয়ার’ হিসেবে। তিনি বলেন, এআই এর নীতিমালা তৈরির বিষয়ে জাতিসংঘকেই কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবে দেখতে চায় বেইজিং।
“এটা ভালো না খারাপ, তা নির্ভর করে মানবজাতি কীভাবে এটা ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করছে এবং এর বৈজ্ঞানিক বিকাশ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখছি, তার ওপর।”
ঝ্যাং বলেন, এই প্রযুক্তির বিকাশ যেন মঙ্গলের জন্য হয়, এটা যেন লাগামহীন ঘোড়া হয়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এর ওপর নিয়ন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মনযোগ দিতে হবে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপ রাষ্ট্রদূত জেফ্রি ডিলরেনটিস বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত বিকাশমান যেসব প্রযুক্তি শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি তৈরি করছে, মানবাধিকারকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে, সেসব বিষয়ে বিশ্বের দেশগুলোর একজোট হয়ে কাজ করা জরুরি।
“মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব বা বাধাগ্রস্ত করতে, জনগণের ওপর পীড়ন চালাতে বা তাদের অধিকার হরণ করতে এআই ব্যবহার করা জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের উচিৎ হবে না।”
এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এআই নিয়ে আলোচনা করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাশিয়া।
জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, “এখানে যেটা দরকার, সেটা হল পেশাদার, বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা, তাতে হয়ত কয়েক বছর লাগতে পারে। আর বিভিন্ন বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্মে এরইমধ্যে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।”