গোটা জীবনের অর্জন নিরর্থক, বলছেন এআই গডফাদার

এইআই প্রযুক্তির অন্যতম পথপ্রদর্শক এই বিজ্ঞানী তার কাজের জন্য পেয়েছেন টিউরিং অ্যাওয়ার্ড, যা কম্পিউটার বিজ্ঞানের নোবেল প্রাইজ হিসাবে পরিচিত।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 12:32 PM
Updated : 31 May 2023, 12:32 PM

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘আদিপিতা’ হিসাবে পরিচিত তিনজনের একজন অধ্যাপক ইউশুয়া বেনজিও আফসোস প্রকাশ করে বলেছেন, এই গতিতে এআই এগিয়ে যাবে জানলে তিনি এর কার্যকরীতা বাড়ানোর আগে নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিতেন। 

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, তার মনে হচ্ছে পুরো জীবনের কাজ “বিফলে গেছে”।  

এআই মানবজাতির অস্তিত্বকে নিঃশ্চিহ্ন করে দেবে –সচেতন বিশেষজ্ঞ মহল এমন আশংকা প্রকাশের পর সরব হলেন এই প্রথিতযশা কম্পিউটার বিজ্ঞানী।

এআই নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনে যুক্ত হওয়া এই অধ্যাপক বলেছেন, কোন সামরিক শক্তির হাতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। 

এইআই প্রযুক্তির অন্যতম পথপ্রদর্শক এই বিজ্ঞানী তার কাজের জন্য পেয়েছেন টিউরিং অ্যাওয়ার্ড, যা কম্পিউটার বিজ্ঞানের নোবেল প্রাইজ হিসাবে পরিচিত। আর তার আশংকা এআই উন্নয়নে দুর্বার গতি নিয়ে। 

বিবিসিকে তিনি আরও বলেন, গোটা জীবন তিনি এআই নিয়ে কাজ করে যে যশ বা খ্যাতি পেয়েছেন, তা এখন নিজের কাছেই দুর্বোধ্য লাগছে। 

“যারা কাজ করছেন তাদের জন্য এই ক্ষেত্রটি  চ্যালেঞ্জিং, সেইসঙ্গে আবেগের।” 

“আমি বলতেই পারি আমার সবকিছু আমার কছে নিরর্থক লাগছে, কিন্তু তারপরেও নিশ্চুপ বসে থাকা যাবে না, অন্যদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যেতে হবে যেন সবাই সচেতন হয়।”

ভবিষ্যতে এআই সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় সম্প্রতি কানাডায় দুইটি স্মারকলিপি সাক্ষরিত হয়েছে। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কেউ কেউ বলছেন, যে গতিতে এআই এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ঝুঁকির সম্ভবনা প্রবল, এআই পড়তে পারে অশুভ হাতে, কিংবা অ্যালগরিদম নিজে নিজেই নিতে পারে বিধ্বংসী কোনো সিদ্ধান্ত।

টুইটার ও টেসলার মালিক ইলন মাস্কও তার শংকার কথা জানিয়েছেন।  “আমি মনে করি না এআই মানবজাতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে, তবে একে অবশ্যই কড়া নিয়ন্ত্রণে রাখাতে হবে।”

“মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার সম্ভবনা খুবই কম, শূন্যের কাছাকাছি, তবে অসম্ভব নয়।” 

এআইয়ের অপর গডফাদার ড. জিওফফ্রি হিনটনও আওয়াজ তুলেছেন এআইয়ের ঝুঁকি নিয়ে, সেই সঙ্গে তার সারা জীবনের করা কাজ নিয়ে অনুতাপ প্রকাশ করে গুগল ছেড়েছেন।

অধ্যাপক বেনজিও আরো বলেন, যেসব কোম্পানি শক্তিশালী এআই পণ্য তৈরি করছে, তাদের সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। 

“ঔষধ শিল্প, গাড়ি ও বিমান নির্মাণের মতো অন্যান্য যে কোনো খাতের মতো সরকারসমূহের এআইকেও পর্যবেক্ষণ এবং নিরীক্ষণের সক্ষমতা থাকতে হবে, এটাই লঘুতম নিয়ন্ত্রণ” বলেছেন অধ্যাপক বেনজিও। 

“যারা যারা এই সেক্টরে কাজ করবে তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে, সবাইকে নীতিশাস্ত্র এবং মূল্যবোধ পড়াতে হবে, কম্পিউটার বিদ্যায় যার খুব একটা নজীর নেই।”

এআই দ্বারা মানবজাতির বিলুপ্তির সম্ভবনা দেখছেন না এই প্রযুক্তির প্রথমদিককার সব অগ্রদূতেরা। 

অধ্যাপক বেনজিও এবং ড. হিনটনের সঙ্গে টিউরিং পদকজয়ী তৃতীয় এআই গডফাদার অধ্যাপক ইয়ান লেকুন এআই চূড়ান্ত ধ্বংসের কারণ হবে এমন সম্ভবনাকে অতিরঞ্জিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

অন্য বিশেষজ্ঞরা আরও কিছু ঝুঁকি আসার কথা উল্লেখ করে বলেছেন সেসব নিয়ে আলাপ হওয়া প্রয়োজন।

এআই’র পক্ষপাতমূলক প্রবণতা, সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মোড়লপনা এবং চ্যাটবটগুলোর ভুলভাল তথ্য ছড়ানো “খুবই স্পষ্ট হুমকি” বলেছেন এআই কোম্পানি হাগিংফেইসের গবেষক ড. সাশা লুচ্চিওনি।

“এআই পৃথিবীর সর্বনাশ ডেকে আনবে এসব কাল্পনিক ভীতি না ছড়িয়ে প্রযুক্তিটির দৃশ্যমান ত্রুটিগুলোর দিকে আমাদের মনযোগ দেওয়া উচিৎ।  

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সামাজের উপকারে এসেছে এমন উদাহরণও আছে। গত সপ্তাহে এআই প্রযুক্তি নতুন একটি এন্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করেছে, যে মাইক্রোচিপটির সহযোগিতায় একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যাক্তি পুনরায় হাঁটতে পারছেন সেটা নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বসিত হওয়া উচিৎ। 

তবে, এআই প্রযুক্তি বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটাবে এমন আশংকা করছেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সিনেমা প্রযোজনা সংস্থা চিত্রনাট্যকারদের পরিবর্তে এআই প্রযুক্তির শরণাপন্ন হচ্ছে যার প্রতিবাদে বর্তমানে হলিউডে লেখক চিত্রনাট্যকাররা কর্মবিরতি পালন করছে।

এআইয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অধ্যাপক বেনজিও বলেন “এখনও সংশোধনের পথ খোলা আছে” এবং “সংকটটি ঠিক জলবায়ু পরিবর্তনের মতো।”

“আমরা বাতাসে যথেষ্ট কার্বন নিঃসরণ করে ফেলেছি, যেটা আমরা না করলেই ভালো হতো, কিন্তু করেই যখন ফেলেছি, এবার দেখা যাক এর সমাধানে আমরা আসলে কি করতে পারি।”