বিশ্বের অন্যতম গুরুতর জনস্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি এই ওষুধ অগ্রাহ্য করা ম্যালেরিয়া। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার উপর ঝুঁকি আছে এই রোগের।
Published : 01 Oct 2024, 01:51 PM
সামুদ্রিক স্পঞ্জ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্প্রতি এক নতুন অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগ বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে দাবি তাদের।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ, যেখানে নতুন ওষুধটি কী ও কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক গবেষণা দল।
মানবদেহে ম্যালেরিয়া ছড়ায় এককোষী ‘প্লাজমোডিয়াম’ পরজীবী বহনকারী মশার কামড়ের মাধ্যমে। প্রথমদিকে মানবদেহের লিভারে সুপ্ত অবস্থায় থাকে এটি এবং পরে লোহিত রক্তকণিকায় আক্রমণ করে পরজীবীটি। ফলে মানবদেহ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে দেখা দিতে পারে জ্বর, মাথাব্যথা, রক্তস্বল্পতা ও অঙ্গহানির মতো জটিলতা।
‘এমইডি ৬-১৮৯’ নামের ওষুধটি পরজীবী আক্রমণের দুটি আলাদা সেলুলার পথকে বাধাগ্রস্থ করে ‘প্লাজমোডিয়াম’কে মেরে ফেলে। এই দ্বিমুখী প্রক্রিয়াটি ‘এমইডি ৬-১৮৯’ ওষুধের বিরুদ্ধে পরজীবীর বিবর্তন বা বেড়ে ওঠাকে আরও কঠিন করে তোলে।
বিশ্বের অন্যতম গুরুতর জনস্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি এই ওষুধ অগ্রাহ্য করা ম্যালেরিয়া। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার উপর এই রোগের ঝুঁকি আছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস।
মারাত্মক প্লাজমোডিয়াম পরজীবী প্রজাতির মধ্যে অন্যতম ‘পি ফ্যালসিপেরাম’, যা বর্তমানের প্রায় সব অ্যান্টিম্যালেরিয়াল বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘আর্টেমিসিনিন’-এর আংশিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যা গোটা বিশ্বে ব্যবহৃত বিভিন্ন অ্যান্টিম্যালেরিয়ার প্রধান শ্রেণি।
সামুদ্রিক স্পঞ্জ থেকে পাওয়া প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বিভিন্ন যৌগের উপর ভিত্তি করে নতুন ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধের নকশা তৈরি করেছে গবেষণা দলটি।
“সেরা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী এজেন্টগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই প্রাকৃতিক পণ্য বা এগুলো থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউসি আরভাইন’-এর রসায়ণ ও ওষুধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহ-লেখক ক্রিস্টোফার ভ্যান্ডারভাল।
“যেমন– আর্টেমিসিনিন, যা প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয় ওয়ার্মউড কাঠজাতীয় গাছ থেকে।”
জ্যান্ত প্রাণীদের ওপর ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে ‘পি ফ্যালসিপেরাম’ পরজীবীতে আক্রান্ত ইঁদুরকে ‘এমইডি৬-১৮৯’ ওষুধটি দেয় এ গবেষণার সহযোগী এক স্প্যানিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ‘জিএসকে’।
দেখা গেছে, ইঁদুর থেকে ম্যালেরিয়ার পরজীবী সাফ করেছে ওষুধটি। এখানে বিভিন্ন ইঁদুরকে তৈরি করা হয়েছে মানুষের মতো লোহিত রক্তকণিকা থাকার উপযোগী করে।
এদিকে, বানরদের মধ্যে ‘এমইডি৬-১৮৯’ ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটি’র এক সহযোগী পরীক্ষাগার, যেখানে এই রোগ থেকে মুক্তি মিলেছে বানরদের।
এ থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্লাজমোডিয়াম পরজীবীর সব ধরনের প্রজাতি ও স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে ‘এমইডি৬-১৮৯’ ওষুধটি।
২০২২ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় প্রায় ২৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এবং এ রোগে মারা যান প্রায় ৬ লাখ ১৯ হাজার মানুষ। এসব মৃত্যুর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলের শিশুরা।