‘ইলেকট্রনিক যুদ্ধক্ষেত্রে’ রাশিয়ার কাছে হারছে ইউক্রেইন

‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’ সক্ষমতার কারণে ইউক্রেইনের গোলন্দাজ বাহিনীকে খুঁজে বের করে হামলা চালানো সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়ার জন্য।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2022, 08:49 AM
Updated : 2 August 2022, 08:49 AM

রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেইন শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুললেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের তড়িৎ প্রকৌশলীদের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণমুখী প্রতিবেদন বলছে, ‘ইলেকট্রনিক যুদ্ধক্ষেত্রে’ রাশিয়ার কাছে হারছে ইউক্রেইন।

ইউক্রেইনের মাটিতে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন যতোই দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ‘ইলেকট্রনিক’ যুদ্ধের নানা কৌশলের সুবাদে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ক্ষেত্রবিশেষে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে মনে করছেন গোয়েন্দা তথ্যের বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

ষষ্ঠ মাসে পা দিয়েছে ইউক্রেইন যুদ্ধ। যুদ্ধের একাধিক পর্যবেক্ষক বলছেন, আগ্রাসনের শুরুর দিনগুলোর চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে রাশিয়ার ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ)’ সিস্টেমগুলো।

এক্ষেত্রে ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’ বা ইডব্লিউ সিস্টেম মানে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বিত ব্যবহার। পূর্ব ইউক্রেইনেই রাশিয়ার ইডব্লিউ সিস্টেমগুলোর ব্যবহার বেশি নজরে পড়ছে বলে উঠে এসেছে জুন মাসের একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনে।

রাশিয়া থেকে পূর্ব ইউক্রেইনের যুদ্ধক্ষেত্রের দূরত্ব কম হওয়ায়, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বিশেষায়িত ইডব্লিউ সরঞ্জামগুলো সহজে যুদ্ধক্ষেত্রের কাছে নিতে পারছে। ড্রোনের দিকনির্দেশনা ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী জিপিএস জ্যামারের কারণে ড্রোনগুলোর কার্যকারীতা খর্ব হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ইউক্রেইনীয় কর্মকর্তারাই।

এ ছাড়াও ইডব্লিউ সক্ষমতার সুবাদে ইউক্রেইনের গোলন্দাজ বাহিনীকে খুঁজে বের করে হামলা চালানো সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য। ইউক্রেইনীয় সামরিক যোগাযোগের চ্যানলেগুলোতে আঁড়িপাতার চেষ্টাও সফল হয়েছে রাশিয়ার।

বিদ্যুৎ প্রকৌশলীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই)’-এর প্রকাশনা ‘স্পেকট্রাম’-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদন বলছে, আগ্রাসনের প্রথম দিকে ইডব্লিউ সিস্টেমগুলো কোনো নির্ধারণী ভূমিকা না রাখলেও এখন যুদ্ধের মোড় রাশিয়ার দিকেই ঘুরিয়ে দিচ্ছে এই প্রযুক্তি।

স্পেকট্রামে হাডসন ইনস্টিটিউটের ‘সেন্টার ফর ডিফেন্স কনসেপ্টস অ্যান্ড টেকনোলজি’-এর পরিচালক ব্রায়ান ক্লার্ক লিখেছেন, “রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং সেরা ইডব্লিউ যন্ত্রাংশে সজ্জিত বেশ কিছু ইউনিট আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়ে আসছেন আগে থেকেই। তাই ২৪ ফেব্রুয়ারির আগ্রাসন শুরুর পরপরই রাশিয়া দ্রুত বিদ্যুৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রের দখল নিয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে বলে ধারণা করেছিলেন বিশ্লেষকরা।”

“তবে পূর্ব ইউক্রেইনে প্রায় এক দশক ধরে শক্তি ও অস্ত্রের সক্ষমতা প্রদর্শন করলেও ফেব্রুয়ারিতে আগ্রাসন শুরুর সময়ে রাশিয়ান ইডব্লিউয়ের দেখা মিলছিল না।”

কিন্তু এখন রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে ইডব্লিউ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে বলে লিখেছেন ক্লার্ক।

যুদ্ধের শুরুর দিনগুলোর চেয়ে ইউক্রেইনের ভেতরে আরও বেশি এলাকা দখলে নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেইনের শহরগুলোকে সামরিক অবরোধে রাখছে দেশটির সামরিক বাহিনী। আর এক্ষেত্রেই ইডব্লিউ ইউনিটগুলোর ব্যবহার নজরে আসছে বলে লিখেছেন ক্লার্ক।

ইডব্লিউ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইউক্রেইনীয় ড্রোনের রেডার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছে রাশিয়া। যার ফলে, ইউক্রেইনীয় বাহিনীর কাছে ধরা পড়েনি রাশিয়ার গোলন্দাজ বাহিনীর অবস্থান। অন্যদিকে, ইউক্রেইনীয় গোলন্দাজ বাহিনীর যোগাযোগে আঁড়ি পেতে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।