নতুন সাইবার নীতিমালা আনছে ইইউ, ঝুঁকিতে গুগল-অ্যামাজনের ব্যবসা

এই নীতিমালা মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ভিতকে অনিশ্চিত করে দেবে। জবাবে ইইউ বলেছে তাদের নাগরিকদের ডেটা অধিকার ও সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2023, 05:31 AM
Updated : 11 May 2023, 05:31 AM

ডেটা সুরক্ষায় নতুন সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সদস্য দেশগুলোতে বিদেশি কোনো কোম্পানিকে ক্লাউড সেবা দিতে হলে, তা কেবল যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় কোম্পানির মাধ্যমেই দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে এতে।

খসড়া আইনটি চূড়ান্ত হলে তা এই জোটভুক্ত দেশগুলোতে অ্যামাজন, গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো ক্লাউড সেবাদাতা বিদেশি কোম্পানিগুলোর ক্ষমতা খর্ব করবে- এমন সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

এই প্রস্তাবিত জয়েন্ট ভেঞ্চারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ইইউ’র মধ্যে ডেটা ব্যবহারে ক্লাউড সেবা দেওয়া শীর্ষ কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে খুবই কম। যে কর্মীরা এই ডেটা নিয়ে কাজ করবে তাদের একাধিক নিরাপত্তা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং এই ডেটা সদস্য ২৭ দেশের মধ্যেই সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া আছে খসড়ায়।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ক্লাউড সেবাকাঠামো অবশ্যই সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে হবে এবং ইইউতে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে এই বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনের সামনে অন্য দেশের আইন খাটবে না।

ইউরোপীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি (ইনিসা) প্রস্তাবিত খসড়ার সর্বশেষ সংস্করণে একটি ইইউ সার্টিফিকেশন স্কিমের কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় অংশীদার কোম্পানি নির্ধারণ প্রক্রিয়াসহ, সরকার ও কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের বিস্তারিত এই স্কিমে উল্লেখ থাকবে।

মার্কিন শীর্ষ কোম্পানিগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ইউরোপের বাজার ছেড়ে যেতে পারে এমন সম্ভাবনাসহ প্রস্তাবনায় গুরুত্বের সঙ্গে জোটের বাইরে কারো হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করা হয়েছে।

ক্লাউড সেবার সরকারি বাজার ধরতে শীর্ষ কোম্পানিগুলো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর মধ্যে ভাইরাল হওয়া ওপেনআই এর চ্যাটজিপিটি আগামিতে ক্লাউড সেবায় বড় ধরনের চাহিদার জানান দিচ্ছে।

“ইইউ অনুমোদিত ক্লাউড সেবা কেবল সদস্য দেশের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই পারিচালিত হবে এবং বহিরাগত করোরই ক্লাউড সেবাদাতা কোম্পানির (সিএসপি) উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এতে করে ইউরোপের নিয়ম, নীতি ও মূল্যবোধকে খাটো করতে বাইরের কোনো শক্তির অপচেষ্টার ঝুঁকি খর্ব হবে,”- বলা আছে খসড়ায়।

“যেসব কোম্পানির সদর দপ্তর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত নয়, ক্লাউড সেবা প্রদান নিবন্ধনে (সিএসপি সার্টিফিকেট) তাদের প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ, সম্পূর্ণ অথবা আংশিক, ইতিবাচক বা নেতিবাচক– কার্যত কোনো রকম নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।”

কোনো ব্যক্তিগত বা অ-ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর ডেটা ব্যবহারে আইনশৃঙ্খলা, জন-নিরাপত্তা, জীবন, স্বাস্থ্য ও মেধাস্বত্ত্বের ব্যাঘাত ঘটলে প্রস্তাবিত নীতিমালায় আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রত্যেক সদস্যদেশের তাদের সুবিধাজনক মতো সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বাধীনতা থাকায় খসড়া আইনটি অখণ্ড ইউরোপের বাজারকে খণ্ড খণ্ড করে দিতে পারে, বলেছে ক্লাউড ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

ইতোপূর্বে এই পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন চেম্বার অব কমার্স বলেছে, এটা বাস্তবায়ন হলে তা মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ভিতকে অনিশ্চিত করে দেবে। এর জবাবে ইইউ বলেছে তাদের নাগরিকদের ডেটা অধিকার ও সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।

এ মাসের শেষ ভাগে সদস্যদেশ গুলো তাদের মূল্যায়ন জানালে, যাচাই-বাছাই শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চূড়ান্ত স্কিমটি প্রণয়ণ করবে।