দিনের দৈর্ঘ্যের উপর কেন্দ্রের গতিবিধি কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কেও নতুন প্রশ্ন সামনে এনেছে গবেষণাটি।
Published : 14 Feb 2025, 03:56 PM
পৃথিবীর কেন্দ্র বিজ্ঞানীরা যেমন ভাবেন তেমন কঠিন নাও হতে পারে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
গবেষকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্রের পৃষ্ঠটি, যা আমাদের গ্রহের গভীরে কী ঘটছে সে সম্পর্কে আগের বিভিন্ন ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এসব পরিবর্তনের সঙ্গে যোগ থাকতে পারে পৃথিবীর কেন্দ্রে ঘূর্ণনের গতি ও দিনের দৈর্ঘ্যে সামান্য পরিবর্তনের মতো বিষয়ের।
গবেষণাটি করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’ বা ইউএসসি’র বিজ্ঞানীদের একটি দল। এটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এ।
পৃথিবীর কেন্দ্রটি আমাদের পায়ের প্রায় তিন হাজার মাইল নীচে চাপা পড়ে আছে এবং একে ঘিরে রয়েছে গলিত এক স্তর, যেটিকে বলা হচ্ছে ‘আউটার কোর’ বা কেন্দ্রের বাইরের অংশ।
কেন্দ্র কীভাবে সরে যায় ও ঘুরে চলেছে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা বিতর্কের বিষয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ গবেষণাটি নতুন প্রমাণ দিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কেন্দ্রের পৃষ্ঠটিও পরিবর্তিত হচ্ছে ও নিজের আকার পরিবর্তন করছে।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও ইউএসসি’র অধ্যাপক জন ভিদালে বলেছেন, মূলত পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের ঘূর্ণন কীভাবে ধীর হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে গবেষণার ওপর নজর দিয়েছে গবেষণা দলটি।
কয়েক দশকের ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে এখানে অস্বাভাবিক ভূমিকম্পের তরঙ্গ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা, যা দিয়েছে অপ্রত্যাশিত কিছুর ইঙ্গিত।
“আমরা এমন কিছু খুঁজে পাব বলে আশা করিনি। তবে আমাদের এ আবিষ্কারের মাধ্যমে ইঙ্গিত মিলেছে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রটি পুরোপুরি কঠিন নয়,” বলেছেন ভিদালে।
এসব পরিবর্তন খতিয়ে দেখার জন্য দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের কাছে একশ ২১টি ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করেছে গবেষণা দলটি। ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ঘটেছিল এসব ভূমিকম্প, যা রেকর্ড করেছিল আলাস্কা ও কানাডার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ স্টেশন।
কানাডার ‘ইয়েলোনাইফ’-এর একটি স্টেশন থেকে আসা ভূমিকম্পের একগুচ্ছ তরঙ্গে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু দেখেছেন যা অন্যান্য তরঙ্গের চেয়ে আলাদা। প্রথমে তারা হতবাক হয়ে পড়েন। তবে গবেষণার বিভিন্ন কৌশল উন্নত করার পর তারা বুঝতে পারেন, এ অদ্ভুত তরঙ্গ পৃথিবীর কেন্দ্রের পৃষ্ঠে গতিবিধির লক্ষণ।
এ পরিবর্তনের কারণ কী?
সবচেয়ে কার্যকর ব্যাখ্যা হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার চেয়েও কেন্দ্রে প্রভাব ফেলছে এটিকে ঘিরে থাকা গলিত বাইরের কোরটি।
বাইরের কেন্দ্রটি মূলত অশান্ত হিসেবে পরিচিত অর্থাৎ এটি এলোমেলো উপায়ে চলাচল করে। তবে প্রথমবারের মতো গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন, বাইরের কোরের এই অশান্ত আচরণের ফলে অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রটি পুনরায় গঠিত হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে চালিত করে ও গ্রহের তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে এমন বিভিন্ন শক্তিকে আরও ভালভাবে বুঝতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করতে পারে এ আবিষ্কার। দিনের দৈর্ঘ্যের উপর কেন্দ্রের গতিবিধি কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কেও নতুন প্রশ্ন সামনে এনেছে এটি।
“এটা সবে শুরু। পৃথিবীর গভীরে কী ঘটছে সে সম্পর্কে আমাদের এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে,” বলেন ভিদালে।