চলতি বছরে নানাভাবে বিদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করেছে রাশিয়া সরকার। চাপে পড়েছে ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক সেবাদাত প্রতিষ্ঠাগুলোও। সমালোচকরা বলছেন, রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডগুলো ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে।
রাশিয়ার ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ রসকমনাডজোর জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্লক করা হয়েছে টর ওয়েবসাইট (www.torproject.org)।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, “এই সিদ্ধান্তের মূলে ছিল সাইটটিতে এমন তথ্যের উপস্থিতি যার মাধ্যমে বেআইনি কন্টেন্ট খোঁজার টুল ব্যবহার করা যেতো।”
টর ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের সেবায় প্রবেশাধিকার না থাকলে, রাশিয়ার কয়েক লাখ নাগরিক দেশের ভিতরে ও বাইরে নিরাপদ যোগাযোগের পথ হারাবেন।
টর ওয়েবসাইটের সেবা কম্পিউটারের আইডি অ্যাড্রেস লুকিয়ে ফেলে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখে। মানবাধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অগ্রগতিকে নিজেদের মূল লক্ষ্য বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি। রাশিয়ায় তিন লাখ নিয়মিত ব্যবহারকারী আছে বলে জানিয়েছে টর, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট দৈনিক ব্যবহারকারীর ১৪ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর টরের সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে রাশিয়ায়।
রাশিয়া থেকে টর ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। টর ওয়েবসাইট ব্লক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে গ্লোবালচেক; রাশিয়া থেকে কোন ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করা যায়, বা যায় না, সেদিকে নজর রাখে সংস্থাটি।
মঙ্গলবারের এক ব্লগ পোস্টে টর জানিয়েছে, কিছু কিছু ইন্টারনেট সেবাদাতা তাদের ওয়েবসাইট ব্লক করা শুরু করেছে ১ ডিসেম্বর থেকে। মূল সাইট ব্লক হলেও, ব্যবহারকারীদের এখনও সক্রিয় ‘মিরর সাইট’ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে টর কর্তৃপক্ষ।
“টর ব্লক করা আদতে অসম্ভব। এখানে অনেক ব্যবহারকারী আছে যারা রাশিয়ার ব্লককে পাশ কাটিয়ে সংগঠিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল গঠনের উপায় ঠিকই খুঁজে নেবে।”-- মন্তব্য করেছেন ‘ইন্টারনেট ডিফেন্স সোসাইটি’ প্রধান মিখাইল ক্লিমারেভ। রাশিয়ার ইন্টারনেট সেন্সরশিপের মোকাবেলার চেষ্টা করছে অলাভজনক সংস্থাটি।
তবে ইন্টারনেট অধিকারকর্মীদের সঙ্গে একেবারেই একমত নন রাশিয়া সরকারের কর্মকর্তারা। রাশিয়ার তথ্য ও যোগাযোগবিষয়ক ‘স্টেট দুমা কমিটি’র সদস্য আন্তন গোরেলকিন চলতি সপ্তাহেই টর প্ল্যাটফর্মকে আখ্যা দিয়েছেন “বেআইনি কর্মকাণ্ড আড়াল করার মাধ্যম” এবং “চরম বিপদ” হিসেবে।
উত্তরে টর বলেছে, “এমন প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তাকে নাকচ করে দেওয়ার মতো বক্তব্য দিয়ে বা এই প্রযুক্তিকে এভাবে উত্থাপন করার চেষ্টা করে, বাস্তবতাকে ঘোলাটে করে তুলছে সরকার। টর এবং এমন প্রযুক্তিগুলো অতি জরুরী।”