মেটাভার্স: ‘টিমস’-এ থ্রিডি অ্যাভাটার আনছে মাইক্রোসফট

‘টিমস’ চ্যাট সেবায় থ্রিডি অ্যাভাটার যোগ করার ঘোষণা দিয়েছে মাইক্রোসফট। মেটাভার্স গড়ার বৃহত্তর চেষ্টার অংশ হিসেবে টিমস সেবায় একসঙ্গে ভার্চুয়াল পরিবেশ (মেশ) আর থ্রিডি অ্যাভাটার যোগ করার কথা জানিয়েছে মার্কিন সফটওয়্যার জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2021, 10:35 AM
Updated : 4 Nov 2021, 10:35 AM

‘মেশ’ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল দুনিয়াতেই দেখা-সাক্ষাৎ করতে দেবে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট; তবে এটির ব্যবহারে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) বা অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) হেডসেটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়।

নতুন ফিচারগুলোকে ‘ইমার্সিভ মিটিংস’ নামে ডাকছে মাইক্রোসফট, ২০২২ সালের প্রথম অংশে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য ফিচারগুলো উন্মুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্প্রতি রিব্র্যান্ডিংয়ের ঘোষণা দেওয়ার সময় ফেইসবুক প্রায় একই ধরনের ভার্চুয়াল চ্যাট রুম দেখানো পর এই ঘোষণা দিল মাইক্রোসফট।

বিবিসি বলছে, কার্যক্রম ও ব্যবহারবিধি বিবেচনায় ‘মেটাভার্স’ আদতে কীভাবে সংজ্ঞায়িত হবে, সেই বিষয়টি এখনও পরিষ্কার না হলেও প্রাথমিক পরিকল্পনায় ভার্চুয়াল থ্রিডি চ্যাট এবং পারস্পারিক সহযোগিতা কেন্দ্রিক সেবার উপরই বেশি জোর দিচ্ছে মেটা ও মাইক্রোসফট উভয় প্রতিষ্ঠান।

আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনার জায়গা থাকলেও এই খাতের বেশিরভাগ উদ্যোক্তা একে ইন্টারনেট নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করছেন যেখানে একাধিক ভার্চুয়াল জগৎ সংযুক্ত থাকবে এবং গেইমিং থেকে শুরু করে শিক্ষা পর্যন্ত সব সেবা মিলবে।

জুম বা গুগল মিটের মতোই মাইক্রোসফটের ‘টিমস’-ও ব্যবসায়িক আলাপচারিতা এবং ভিডিও কল সেবা। ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের জন্য আছে অ্যাপটির আলাদা সংস্করণ।

নিজস্ব সেবাগুলোতে ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি হেডসেটের উপর আলাদা জোর দিচ্ছে না মাইক্রোসফট, যদিও উভয় ডিভাইসই ব্যবহার করা যাবে মাইক্রোসফটের সেবাগুলোর সঙ্গে।

বিবিসি জানিয়েছে, টিমস মিটিং চলাকালীন কেউ যদি তার ওয়েবক্যামটি চালু করতে না চান তবে তার প্রতিনিধিত্ব করবে ত্রিমাত্রিক অ্যাভাটারগুলো, বাকিরা দ্বিমাত্রিক কম্পিউটার স্ক্রিনে অ্যাভাটার হিসেবে দেখতে পাবেন ওই ব্যক্তিকে।

মাইক্রোসফট বলছে তাদের প্রযুক্তি “এআই দিয়ে ব্যবহারকারীর নড়াচড়া ও অঙ্গভঙ্গি নকল করবে যার ফলে ব্যবহারকারী ক্যামেরা বন্ধ রাখলেও স্ক্রিনে তার শারীরিক উপস্থিতি থাকবে।”

টিমস-এর বাণিজ্যিক ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রয়োজন মতো বৈঠকের জন্য থ্রিডি স্থান তৈরি করে সেটি নিজেদের পছন্দমতো সাজিয়ে নিতে পারবেন। দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক উভয় ব্যবস্থায় চলবে ওই টিমস বৈঠক।

যাদের এআর বা ভিআর হেডসেট আছে তাদের বৈঠকের ভার্চুয়াল স্থানেই ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানোর সুবিধা দেবে মাইক্রোসফট, তবে এই হার্ডওয়্যারগুলোর ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেনটিউরে ফিচারগুলোর কার্যক্ষমতা যাচাই করে দেখেছেন কয়েক হাজার নতুন কর্মী। মহামারী চলাকালীন নতুন ফিচার ব্যবহারে আগ্রহী কর্মীদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজস্ব অগমেন্টেড রিয়ালিটি বা এআর প্রযুক্তি বিভাগ আছে মাইক্রোসফটের। ‘হলোলেন্স’ হেডসেট বানায় ওই বিভাগটি। তবে ফেইসবুকের অকুলাস বা ভালভের ইনডেক্স ভিআর হেডসেটের মতো এর মূল ক্রেতা গেইমাররা নয়।

বাণিজ্যিক ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে হলোলেন্স বানায় মাইক্রোসফট। অন্য দুই হেডসেটের তুলনায় হলোলেন্সের ব্যবহারও ভিন্ন বলে জানিয়েছে বিবিসি। বাস্তব চিত্রের উপর ডিজিটাল ওভারলে’র সংমিশ্রণ ঘটায় হলোলেন্স; ফলে এর নির্মাণ খরচ তুলণামূলক বেশি, কয়েক হাজার ডলার খরচ হয় এর নির্মাণে।

মাইক্রোসফট বলছে, অগমেন্টেড রিয়ালিটি খাতে তাদের প্রাথমিক চেষ্টার মূল লক্ষ্য ছিল থ্রিডি ডিজাইনাররা। যেন তারা “বাইসাইকেল থেকে শুরু করে ব্যয়বহুল আসবাবপত্র, জেট ইঞ্জিন, এমনকি স্পোর্টস স্টেডিয়ামের” মতো যে কোনো কিছুর নকশা করার সময় ভার্চুয়াল জগতেই তার পরীক্ষামূলক সংস্করণ নির্মাণ করে দেখতে পারেন।

মাইক্রোসফট বলছে, ‘মেশ’ প্ল্যাটফর্মকে টিমস সেবায় যোগ করায় এটি “মেটাভার্সে প্রবেশের দুয়ার” হিসেবে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটির আশা সাধারণ ব্যবহারকারীরাও এটি আগ্রহের সঙ্গে ব্যবহার করে দেখবেন।

‘ইগনাইট’ অনুষ্ঠানে মাইক্রোসফট প্রধান সাত্যিয়া নাদেলা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এখানে আমরা আমাদের মনুষ্যত্বকে সঙ্গে আনতে পারছি এবং এই দুনিয়াটি কীভাবে অনুভব করতে চাই সেটি আমরাই নির্ধারণ করতে পারছি।

“মেটাভার্স শুধু পৃথিবীকে আমরা কীভাবে দেখি সেটা পাল্টাচ্ছে না, আমরা সবাই এতে কীভাবে অংশ নেই, সেটাও পাল্টে দিচ্ছে ।”-- যোগ করেন তিনি।