কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে যুগান্তকারী অগ্রগতির দাবি ব্রিটিশ গবেষকদের

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোর একটি বানিয়েছে যুক্তরাজ্যের স্টার্টআপ ‘অর্কা কম্পিউটিং’। স্টার্টআপটির প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর আয়ান ওয়াল্মস্লি দাবি করছেন, তাদের যুগান্তকারী নির্মাণ পদ্ধতি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বাণিজ্যিকায়নের পথ আরও সহজ করবে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 11:08 AM
Updated : 30 Sept 2021, 11:08 AM

বিবিসি বলছে, চলতি বছরেই কম্পিউটার শিল্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিজেদের ডিভাইসটি দেখানোর পরিকল্পনা করেছেন অর্কা’র প্রধান নির্বাহী রিচার্ড মারি।

অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত ডিভাইসটির কম্পিউটিং ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে।

বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজ করছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি সেবা ও পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে গুগল ও আইবিএমের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ‘বিল্ডিং ব্লক’ হিসেবে পরিচিত কিউবিটের তাপমাত্রা নামিয়ে আনতে হয় শূন্যের ঘরে। এতে বাড়ে কারিগরি জটিলতা ও খরচ।

নির্মাণ প্রক্রিয়ার বিবেচনায় বাজারের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উল্টো পথে হাঁটছে অর্কা কম্পিউটিং। আর দশটি সার্ভার কেবিনেটের মতোই দেখতে অর্কার তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটার।

অন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সঙ্গে এর পার্থক্য নিয়ে প্রধান নির্বাহী মারি বলেন, “প্রথমত, এটা ক্রায়োজেনিকালি ঠাণ্ডা করতে হয় না, ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতে চলে এটি। দেখতেও সাধারণ র‌্যাক মাউন্টেড কম্পিউটারের মতো। আমাদের পদ্ধতিটি একটি করে ফোটন ব্যবহার করে, অর্থাৎ আলোর একটি ইউনিট। আর একটি করে ফোটন ব্যবহারের সুবিধা হলো বাইরের পরিবেশে হস্তক্ষেপ করে না এটি।”

কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা, একদিন প্রচলিত কম্পিউটার সিস্টেমের সব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার; জলবায়ু পরিবর্তন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ে গবেষণা আর নতুন নতুন ওষুধের আবিষ্কারে ভূমিকা রাখবে এটি।

কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কোয়অন্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে খুঁজতে গেলে প্রয়োজন পড়বে কয়েক লাখ কিউবিটের। কিন্তু অর্কা কম্পিউটিংয়ের তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে আছে মাত্র চারটি কিউবিট। আগামী দুই বছরের মধ্যে কিউবিটের সংখ্যা বাড়িয়ে কম্পিউটারের আকার ও ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

আর অর্কার এক ফোটন নির্ভর নির্মাণ প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য বলেই বিবেচনা করছেন এই খাতের অন্যান্য গবেষকরা। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের কোয়োন্টাম কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ প্রফেসর জন মর্টন বলছেন, “বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এটা নিয়ে।” তার মতে, ফোটোনিক্স “কোনো ভাবেই উদ্ভট কোনো পন্থা নয়”।   

তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার হিসেবে অর্কার কম্পিউটারটিকে নেহাত দুর্বল বলতেই হবে। কম্পিউটিং শক্তির হিসেবে এর ক্ষমতা থার্মোস্ট্যাট বা হালের অ্যাপল ওয়াচের সমান।

“গুগল, রিগেটি এবং আইবিএম সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিট নিয়ে যা করছে, তার সঙ্গে তুলনা করলে কিউবিটের সংখ্যার হিসাবে এটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে”--যোগ করেন প্রফেসর মর্টন।

ভবিষ্যতে এর আকার ও কম্পিউটং ক্ষমতা বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে ব্রিটিশ সরকারে কাছ থেকে আর্থিক সমর্থন পাচ্ছে অর্কা। অর্কার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান রিগেটিকেও যুক্তরাজ্যের মাটিতে একটি কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানানোর জন্য অর্থ সহযোগিতা দিচ্ছে ব্রিটিশ সরকার।  

বিবিসি জানিয়েছে, প্রচলিত কম্পিউটারের সঙ্গে রিগেটির তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মিল পাওয়া বেশ কঠিন কাজ। কম্পিউটারটি দেখতে অনেকটা ঝাড়বাতির মতো, যেটি থেকে অনেকগুলো কেবল বের হয়ে এসেছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ম্যান্ডি বার্চের দাবি, “যুক্তরাজ্যের প্রথম সম্পূর্ণ কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার” বানিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান।

বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা ৩২টি কিউবিট আলাদা করে নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করে রিগেটি। এরপর কিউবিটগুলোর ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা চালু করে দিয়ে সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে এর কাজ শুরু হয়।

প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের প্রথম “কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার” কথাটি বলছে  বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে। বাণিজ্যিক সেবাগ্রাহকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কম্পিউটারটি কাজে লাগানোর পরিকল্পনা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২২ সাল থেকে বাজারের অস্থিতিশীলতা মাপতে রিগেটির কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ওই কম্পিউটার ব্যবহার করে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ শক্তির ঘাটতি সমাধানের চেষ্টা করবে ফেজক্র্যাফট।

রিগেটির ম্যান্ডি বার্চও বলছেন—প্রাথমিক পর্যায়ে আছে তাদের প্রযুক্তি। “বর্তমান কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় দ্রুত গতিতে, কম খরচে বা আরও ভালো ভাবে জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারছে, বিষয়টা এমন নয়।”

“কিন্তু আমরা এখানে যেটা করার চেষ্টা করেছি তা হলো, একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করা যার উপর এমন সব সমস্যার কার্যকর সমাধান বের করা যাবে যেগুলো প্রচলিত কম্পিউটিং দিয়ে সম্ভব নয়।”

বিবিসি বলছে, প্রথম বাণিজ্যিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে অর্কাও। অর্কার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের তেল-গ্যাস খাতের ‘সুপারমেজর’ প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি)-এর ডেটা সেন্টারের সংযোগ স্থাপন করে জ্বালানী বান্ধব উপকরণ উৎপাদনের সম্ভাবনা যাচাই করে দেখার কথা জানিয়েছে বিবিসি।