নিজ প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভার্জিন গ্যালাকটিকের রকেট প্লেনটিতে সওয়ার হয়ে রোববার তিনি যে উচ্চতায় পৌঁছাবেন যেখানে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ প্রায় শূন্য।
আগামী বছর অর্থের বিনিময়ে আগ্রহীদের এই অভিজ্ঞতায় পাঠানোর আগে নিজেই এটি পরখ করে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন এই অভিযাত্রী ও ভার্জিন সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
স্থানীয় মার্কিন সময় সকাল ০৮:৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৮:৩০ মিনিট) নিউ মেক্সিকোর উপরে দেড় ঘণ্টার মিশনে তিনি যাত্রা করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এক দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্যার রিচার্ড এই মহেন্দ্রক্ষণে পৌঁছেছেন। ২০০৪ সালে প্রথম তিনি একটি ‘মহাকাশ প্লেন’ তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সে সময় তার ধারণা ছিল, ২০০৭ সালের মধ্যেই তিনি বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণ প্রকল্প চালু করতে পারবেন।
তবে, কয়েকবারই এর পরিকল্পনা পিছিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে এক দুর্ঘটনায় এক সহকারী পাইলটের প্রাণ যাওয়ার ঘটনা মহাকাশ প্রকল্পটিকে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ করে তুলেছে।
“আর তারা মহাকাশে যাবেন না কেন? মহাকাশ অসাধারণ; মহাবিশ্ব দুর্দান্ত। আমি চাই, মানুষ আমাদের সুন্দর পৃথিবীর দিকে ফিরে তাকাবেন, তারা ফিরে আসবেন এবং এই বিশ্বের দেখাশোনা করার জন্য অসম্ভব জাদুকরী সব কাজ করবেন।”
যেভাবে সম্পন্ন হবে এই যাত্রা
বিশেষভাবে ডিজাইন করা দুই ফিউসিলাজ আর চার ইঞ্জিনযুক্ত বিশাল জেট প্লেনের ডানার নিচে বহন করে ইউনিটি নামের এই যানটিকে ওপরে নিয়ে যাওয়া হবে। বিশাল ওই জেট প্লেন বা মাদারশিপের নাম হোয়াইটনাইট টু। এই মাদারশিপ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০ হাজার ফিট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর মাদারশিপ তার ডানার নিচ থেকে রকেটশিপকে ছেড়ে দেবে এবং সঙ্গেসঙ্গেই এর রকেটইঞ্জিন চালু হয়ে সোজা উপরে উঠে যাবে।
গতি বাড়তে বাড়তে একসময় ঘণ্টায় তিন হাজার সাতশ' কিলোমিটার বা শব্দের তিনগুণ গতিতে পৌঁছাবে এটি। এই গতিতে একসময় মধ্যাকর্ষণের প্রায় প্রান্তে পৌঁছে যাবে স্পেসশিপ টু। প্রায় ৯০ কিলোমিটার বা দুই লাখ ৫৫ হাজার ফিট উচ্চতার ওই মাইক্রোগ্র্যাভিটি অঞ্চলে পৌঁছে এটি সোজা হবে। আরোহণের শীর্ষে ওই উচ্চতায় স্যার রিচার্ড এবং তার সহযাত্রীরা কয়েক মিনিটের ওজনহীনতা উপভোগ করবেন। সে সময় তারা কেবিনের ভেতরে ভাসতে এবং জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখতে পারবেন।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইউনিটি গ্লাইডিং করে নামতে থাকবে রানওয়েতে ল্যান্ডিংয়ের জন্য। এই গ্লাইডিংয়ের সময় তাদেরকে অবশ্য নিজ নিজ আসনে ফিরে যেতে হবে।
টেইকঅফ থেকে ফের ভূমিতে নেমে আসা পর্যন্ত সময় প্রায় এক ঘণ্টা লাগার কথা আগে বলরেও স্যার রিচার্ড দেড় ঘণ্টার কথা বললেন বিবিসির সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপে।
কেমন হবে সেই অভিজ্ঞতা
এই যাত্রায় স্যার রিচার্ডসহ সবাইকে পুরো ফ্লাইটজুড়ে নির্দেশনা দেবেন বেথ মোজেস। তিনি ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রধান নভোচারী প্রশিক্ষক। তিনিই এই যাত্রার একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই অভিজ্ঞতা আগেও পেয়েছেন।
তিনি বলেন, জানালার বাইরে দৃশ্যটি “একেবারে অভূতপূর্ব”।
“ছবি দেখে আপনি এটা বুঝবেন না। এটা খুবই উজ্জ্বল আর সুন্দর। আমি সমুদ্র দেখেছি। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক এবং অপরদিকে মেক্সিকোর অর্ধেকটা দেখেছি।” তিনি বিবিসি নিউজকে বলেন, “আমি সবুজ ভূমি আর সাদা বরফে ঢাকা পর্বতমালা একইসঙ্গে দেখেছি।”
“এই অভিজ্ঞতা আমার আত্মায় স্থায়ী হয়ে আছে।”
এদিকে, মহাকাশযাত্রায় অপর উদ্যোক্তা জেফ বেজোস, তার ভাই মার্ক, নিলাম বিজয়ী এক ব্যক্তি এবং ওয়ালি ফাঙ্ক নামে ৮২ বছর বয়সী এক নারী পাইলটের যাওয়ার কথা রয়েছে ব্লু অরিজিনের ২০ জুলাই পরিকল্পিত ফ্লাইটে। ষাটের দশকে ‘মার্কারি ১৩’ অভিযানে ওয়ালি’র মহাকাশে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন কিন্তু তিনি কখনোই অভিযানে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
এদিকে, প্রায় ছয়শ’ আগ্রহী ব্যক্তি লাইন ধরেছেন স্যার রিচার্ডের দরোজায়। এক একটি সিটের জন্য তারা দুই থেকে আড়াই লাখ ডলার দিতেও রাজী। একবার যাত্রা শুরু করার পর ক্রেতার চাপ আরও বাড়বে বলেই অনুমান করছেন স্যার রিচার্ড।