নজরদারীতে ব্যবহারের শঙ্কায় পিমআইস ফেইশল রিকগনিশন

বিনামূল্যে অনলাইনে ফেইশল রিকগনিশন সুবিধা দিয়ে থাকে ‘পিমআইস’ ওয়েবসাইট। কিন্তু সম্প্রতি গোপনতা প্রশ্নে গোপনতা সমর্থকদের সমালোচনার তোপের মুখে পড়েছে সাইটটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2020, 03:55 PM
Updated : 13 June 2020, 05:10 PM

নিজেদের ব্যাপারে অবশ্য ভিন্ন দাবি পিমআইসের। অনলাইনে ছবি অপব্যবহার ঠেকানোর গোপনতা টুল হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় সাইটটি। কিন্তু ব্রিটিশ নাগরিক স্বাধীনতা ও গোপনতা সমর্থক অলাভজনক সংস্থা ‘বিগ ব্রাদার ওয়াচ’ বলছে, এটি “রাষ্ট্রীয় নজরদারি, বাণিজ্যিক নজরদারি এবং বড় মাপে নজরদারীর কাজে ব্যবহৃত হতে পারে যা আগে অকল্পনীয় ছিল।”

অ্যামাজন এক বছরের জন্য নিজেদের ফেইশল রিকগনিশন সেবা পুলিশকে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই পিমআইসের বিষয়টি সামনে এসেছে।

শৌখিন প্রকল্প হিসেবে ২০১৭ সালে অনলাইনে পা রাথে পিমআইস, গত বছর বাণিজ্যিকীকরণ হয় এটি। বর্তমানে ছয় হাজার ব্যবহারকারী রয়েছে সাইটটির। অনলাইন প্রকাশনা মিডিয়ামে এক নিবন্ধ প্রকাশের পরপরই সাইটটির দিকে নজর পড়ে সবার।

ওয়েবসাইটটিতে বিনামূ্ল্যে যেকোনো ছবি আপলোড করা যায় এবং তারপর সেটির সঙ্গে মিল রয়েছে এমন ছবি ওয়েবে টাম্বলার, সংবাদ মাধ্যম এবং ব্লগের মতো সাইট থেকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়।

বিগ ব্রাদার ওয়াচের পরিচালক সিলকি কারলো বলছেন, “এই ধরনের শক্তিশালী নজরদারি প্রযুক্তি ব্যক্তিক ব্যবহারের জন্য বাজারজাত করার বিষয়টি শঙ্কা সৃষ্টি করছে। এটি নজরদারীর সুবিধা সৃষ্টি করবে এবং নারী ও শিশুদের নজিরবিহীন ঝুঁকিতে ফেলছে”।

জবাবে পিমআইস বলেছে, “আমাদের নীতিমালা এ ধরনের ব্যবহার বিরুদ্ধ”। তাদের আরও যুক্তি হচ্ছে, প্রতিটি টুলই চাইলে ভুল পথে ব্যবহার করা যায়”।  

সামাজিক মাধ্যম থেকে ছবি সংগ্রহ করে না বলেও জানিয়েছে সাইটটি। তবে, বিবিসি নিজ প্রতিবেদকদের ফেইসবুক ও টুইটারে আপলোড হওয়া ছবি পিমআইসের সার্চ ফলাফলে খুঁজে পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে পিমআইস বলেছে, “শুধু ফেইসবুকে পোস্ট হওয়া ছবি খুঁজে পেলে আপনাকে ধরে নিতে হবে অন্য কেউ ছবিটি অন্য কোথাও আপলোড করেছে। আমরা শুধু সেসব ওয়েবসাইটেই ছবি খুঁজি, যেগুলো তাদের নীতিতে আমাদের খুঁজতে দেয়”।

সামাজিক মাধ্যমের ছবি ব্যবহার করে এর আগে বিপাকে পড়েছিল ফেইশল রিকগনিশন প্রতিষ্ঠান ক্লিয়ারভিউ। ফেইসবুক, টুইটার এবং ইউটিউব থেকে তিনশ’ কোটিরও বেশি ছবি সংগ্রহ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ক্লিয়ারভিউয়ের সংগৃহীত ছবিগুলো সন্দেহভাজন শনাক্তে ব্যবহার করেছে এফবিআই, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং ছয়শ’রও বেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ফেইসবুক, টুইটার ও ইউটিউব। তিন সামাজিক মাধ্যম নেটওয়ার্কই কাজটি করতে মানা করেছিল ক্লিয়ারভিউকে। 

পিমআইসের প্রিমিয়াম সেবাও রয়েছে। প্রিমিয়াম সেবায় একবারে ২৫টি ভিন্ন ভিন্ন বেশি ছবি আপলোড করে মানুষকে খোঁজা এবং নতুন ছবি আপলোড হলে অ্যালার্ট পাওয়া সম্ভব হয়। বর্তমানে পিমআইসের প্রিমিয়াম সেবা নিচ্ছে সাড়ে তিনশ’ সক্রিয় ব্যবহারকারী।

নকল প্রোফাইল, ফাঁস হয়ে যাওয়া ছবি এবং অননুমোদিত ছবি খুঁজে দিয়ে মানুষকে “অনলাইন গোপনতার জন্য লড়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে” বলে দাবি করেছে পিমআইস।

পুলিশের সঙ্গেও কাজ করেছে বলে জানিয়েছে পিমআইস। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যবহৃত পালিস্কোপ নামের এক সফটওয়্যার টুলে নিজেদের প্রযুক্তি দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

পুলিশের হয়ে ডার্ক ওয়েবে খোঁজ করার ব্যাপারে নিজেদের ওয়েবসাইটে লিখে রেখেছিল পিমআইস। পরে তা সরিয়ে নিয়েছেন তারা।

পিমআইস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, তাদের সাইটে আপলোড হওয়া ছবি “কখনও সংরক্ষণ বা সূচীবদ্ধ” করা হয় না। কাজটি যাতে না করতে হয়, সেজন্য চেহারার একটি ছাপ ব্যবহার করে থাকে পিমআইস যা এনকোডেড অবস্থায় তাদের সার্ভারে সাময়িকভাবে সংরক্ষিত থাকে।