ইনস্টাগ্রামের ছবি ‘এমবেড’ করা কপিরাইটের লঙ্ঘন নয়: বিচারক

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জন্য দীর্ঘদিন কাজ করা আলোকচিত্রী স্টেফানি সিনক্লেয়ার যখন নিজের জন্য ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন, তিনি সম্ভবত সেবার শর্তাবলী খুব মনোযোগ গিয়ে পড়েননি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2020, 03:00 PM
Updated : 15 April 2020, 03:00 PM

আর তাই, ম্যাশএবল ওয়েবসাইটে যখন তারই একটি ছবি দেখতে পান, তিনি ছবিটি নামিয়ে ফেলতে বাধ্য করার জন্য সোজা হাজির হয়েছিলেন আদালতে।

আলোকচিত্রীর অবশ্য রাগ করার কারণও ছিলো। ম্যাশএবল প্রথমে তার কাছে গিয়েছিল ছবিটি ব্যবহারের জন্য অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স করিয়ে নিতে। সে সময় তিনি ফিরিয়ে দেন ম্যাশএবলকে। এর কিছুদিন পর 'যে ১০ জন নারী আলোকচিত্রী ছবির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করছেন' শীর্ষক নিবন্ধে ওই ছবিটিই ব্যবহার করে ম্যাশএবল। তারা অবশ্য ছবিটি সরাসরি ব্যবহার না করে কৌশলে ইনস্টাগ্রামে ওই ছবিটির পোস্ট এমবেড করে দেয় তাদের ওয়বসাইটে।

এখন আদালত বলছে, কেবল ম্যাশএবল নয়, যে কোনো ওয়েবসাইট এভাবে ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া পোস্ট এমবেড করে প্রকাশ করতেই পারে।

ইনস্টাগ্রামের ‘সেবা শর্তাবলী’র ভিত্তিতে সম্প্রতি ওই রায় দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের ডিস্টিক্ট আদালতের বিচারক কিম্বা উড। মামলাটির বাদী স্টেফানি সিনক্লেয়ার আর বিবাদী পক্ষে ছিল ম্যাশএবলের মালিক প্রতিষ্ঠান জিফ ডেভিস। -- খবর প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট দ্য ভার্জের।

রায়ে আদালত বলছে, 'পাবলিক' হিসেবে এই প্ল্যাটফর্মে ছবি পোস্ট করে ছবিকে বৈধ উপায়েই সাবলাইসেন্স করার অনুমতি ইনস্টাগ্রামকে দিয়ে দিয়েছেন আলোকচিত্রী। ফলে ছবিটি এমবেড করে সাইটে ব্যবহার করে কোনো অপরাধ করেনি ম্যাশএবল।

এ বিষয়ে বিচারক কিম্বা উড বলছেন, নিজ সেবায় পাবলিক হিসাবে পোস্ট করা ছবির উপর “পুরোপুরি প্রদত্ত, রয়ালটি ফ্রি, হস্তান্তরযোগ্য, সাবলাইসেন্স” অধিকার রাখে ইনস্টাগ্রাম। আর পাবলিক হিসেবে পোস্ট করা ছবিতে আপনাআপনিই এমবেড অপশন দেখায় ফেইসবুক মালিকানাধীন সাইটটি। ফলে এমবেড অপশনটিও ওই প্রক্রিয়ায় ছবি ব্যবহারের সাবলাইসেন্সের অংশ হিসেবেই যোগ হয়ে যাচ্ছে।

“কনটেন্ট আপলোডকারী শুরুতেই ইনস্টাগ্রামকে ‘পাবলিক’ কনটেন্টের সাবলাইসেন্স দেওয়ার অধিকার দিয়ে দিয়েছেন”। ফলে কপিরাইটের প্রশ্নই উঠছে না। “নিজের পাবলিক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ছবি পোস্ট করে নিজ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন বাদী।” - রায়ে লিখেছেন বিচারক।

তবে, সিনক্লেয়ার এখনও একমত নন। তিনি বলছেন, এরকম অর্থের হিসেবে বিচার করলে, ইনস্টাগ্রামের ব্যবহার শর্তাবলী যথেষ্ট “ঘোড়েল, দুর্বোধ্য এবং দ্বান্দ্বিক”। এ ছাড়াও আলোকচিত্রীর দাবি, “ইনস্টাগ্রাম এভাবে অন্যায় বিভাজন তৈরি করছে : হয় অন্যান্য সাইটে মানুষকে আইনত ছবি পোস্ট করতে দিন, না হয় বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফটো শেয়ারিং সেবা থেকে দূরে থাকুন।”

এমবেড ও কপিরাইট প্রশ্নে অবশ্য এটিই প্রথম মামলা নয়। ২০১৮ সালেও এরকম এক মামলা হয়েছিল টুইটারের পোস্টকে ঘিরে। ওই সময় অবশ্য আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, এমবেড পোস্টে কপিরাইট লঙ্ঘন হলেও হতে পারে।  সে হিসেবে সাম্প্রতিক মামলাটির রায় আগের ওই মামলার রায় থেকে সরে এসেছে বলেই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে ভার্জ।

রায়ের পরপরই অবশ্য স্টেফানি সিনক্লেয়ার তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টকে পাবলিক থেকে প্রাইভেটে রূপান্তরিত করেছেন। ফলে ম্যাশএবলের সাইটে আর দেখা যাচ্ছে না এমবেড করা ওই পোস্ট।