এবার সাবমেরিন নিয়ে মাস্কের টুইট যুদ্ধ

“যেখানে ব্যথা লাগবে সেখানে তার সাবমেরিন লাগিয়ে রাখতে পারেন”- সম্প্রতি থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে যাওয়া কিশোর ফুটবল দল উদ্ধারে মার্কিন প্রকৌশলী ইলন মাস্ক-এর বানানো সাবমেরিনের মতো দেখতে যানটি নিয়ে সিএনএন-এর কাছে এমন মন্তব্য করেন ব্রিটিশ গুহা গবেষক ভারনন আনসওয়ার্থ। তার এমন সমালোচনার জবাব দিয়েছেন মাস্ক, আর এতেই শুরু হয় নতুন টুইট যুদ্ধ।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2018, 09:53 AM
Updated : 16 July 2018, 09:53 AM

কয়েক বছর ধরে থাইল্যান্ডেই আছেন ব্রিটিশ ওই গবেষক। ফুটবল দলটি আটকে পড়া থাম লুয়াং গুহা নিয়ে করছেন গবেষণা। ১২ কিশোরের এই দল আর তাদের কোচকে গুহা থেকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধারে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

এই কিশোরদের উদ্ধারে মাস্ক একটি “ক্ষুদ্র আকৃতির সাবমেরিন’ বানিয়ে তা নিয়ে থাইল্যান্ড যান। কিন্তু নানা উদ্ভাবনী ধারণা দেওয়ার পরিচিতি থাকা মাস্ক-এর এই ডিভাইস ব্যবহার ছাড়াই উদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষ।  

বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান টেসলা প্রধানের এই ডিভাইস নির্মাণকে “জনসংযোগের কৌশল” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আনসওয়ার্থ। তার দাবি, এই সাবমেরিন গুহাটির ৫০ মিটার পর্যন্ত যেতেও ব্যর্থ হতো। তিনি বলেন, “এর কাজ করার একদমই কোনো সুযোগ ছিল না। গুহার পথটি কেমন ছিল তা নিয়ে তার কোনো ধারণাই নেই।” মাস্ক-কে গুহা থেকে “চলে যেতে বলা হয়” আর তার সহায়তা উদ্ধার অভিযানের শীর্ষ কর্মকর্তারা পছন্দ করেননি বলেও দাবি করেন আনসওয়ার্থ।

টুইট যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে মাস্ক জানান, আনসওয়ার্থের সঙ্গে তার দেখা হয়নি আর তিনি “থাইল্যান্ডে থাকা এই ব্রিটিশ প্রবাসীকে কখনও” দেখেননি। তিনি আরও বলেন, “থাই নেভি সিল আমাদের সঙ্গ দিয়ে নিয়ে গিয়েছে- তারা চেয়েছিল আমরা চলে যাই এমন ধারণার পুরো বিপরীত এটি।” 

নিজের বানানো ডিভাইসটি ওই কিশোরদেরকে গুহা থেকে বের করে আনতে সক্ষম হতো দাবি করে মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক বলেন, “চূড়ান্ত উদ্ধার অভিযানের ভিডিও দেখাতে আমি এই লোককে চ্যালেঞ্জ করছি।”

ছয় মিনিট পর নিজের পরবর্তী টুইটে মাস্ক বলেন, “ভিডিও দেখানো নিয়ে মাথা ঘামানো লাগবে না”। সেইসঙ্গে কিশোররা যেখানে আটকে পড়েছিল সেখানে ডিভাইসটি পাঠিয়ে দেখাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন, আনসওয়ার্থ-কে ‘পেডো’ হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

শিশু যৌন নিপীড়নকারীর ইংরেজি ‘পেডোফাইল’ বোঝাতে সংক্ষেপে ‘পেডো’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  

আরেক টুইটে মাস্ক বলেন, “আমাকে বারবার *সহায়তা করতে* বলা হয়েছিল। কয়েকবার রাজি হয়নি, কারণ আমি ভেবেছিলাম এটি তাদের হাতে চলে এসেছে আর যখন থাই সিল সদস্য যখন মারা গেলেন (গভীর গুহায় ওই সময় পাম্প কাজ করছিল না) তখন রাজি হই। আমরা স্ট্যানটন-এর দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী মিনি-সাবটি বানিয়েছি *এবং* দরকারে ব্যবহারের জন্য একটি সহজে ব্যবহারযোগ্য উদ্ধার পাত্র এনেছিলাম।”

যুক্তরাজ্যের সাউথ অ্যান্ড মিড ওয়েলস কেইভ রেসকিউ টিম-এর সদস্য রিক স্ট্যানটন এবং জন ভলানদেন এই উদ্ধার কাজে অংশ নেন। তারাই সবার আগে আটকে পড়া দলটির কাছে গিয়েছিলেন।

মাস্ক-এর ডিভাইস ব্যবহার ছাড়াই উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে বিদ্রুপের শিকার হয়েছেন মাস্ক। চলতি সপ্তাহে এসব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন তিনি। তার দাবি, উদ্ধারকারী দলই তাকে এই সাবমেরিন বানাতে নির্দেশনা দিয়েছিল।

যিনি শিশুদের খুঁজে বের করলেন তাকেই ‘পেডো’ ডাকছন মাস্ক- টুইটারে এমন সমালোচনার জবাবে মাস্ক বলেন, “স্বাক্ষর করে এক ডলার বাজি ধরুন, এটি সত্যি।”

রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে মাস্ক তার টুইট থ্রেড মুছে ফেলেন। কিন্তু তার আগেই এর স্ক্রিন শটগুলো রাখা হয়ে যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক মার্কিন প্রকাশনা বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে।  

এই টুইটগুলো করার মাত্র দুইদিন আগে ব্লুমবার্গ-এর সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানিয়েছিলেন, তিনি টুইটারে মানুষকে আক্রমণ করা বন্ধ করে দেবেন।