বিয়ন্সে ও পোপ ফ্রান্সিসের মধ্যে কী মিল আছে? জবাব হলো, এরা কেউই এখন আর টুইটারে ‘ভেরিফাইড’ অ্যাকাউন্টধারী নন।
গেল বৃহস্পতিবার নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট থেকে নীল রঙের যাচাইকরণ চিহ্ন মুছে ফেলতে শুরু করেছে টুইটার।
কোম্পানিটিকে লাভজনক অবস্থায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইলন মাস্কের প্ল্যাটফর্ম ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টা হিসেবে এই পদক্ষেপ এলো বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
যেসব ব্যবহারকারী নিজেদের নামের পাশে এই টিক চিহ্ন বহাল রাখতে চান, তাদেরকে অবশ্যই টুইটার ব্লু গ্রাহক সেবায় ৮৪ ডলার বার্ষিক ফি দিতে হবে।
এই পরিবর্তনের পরপরই আগের অনেক ভেরিভাইড অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী এই বিষয়ে টুইটারে হাস্যরসে মেতে ওঠেন অথবা নিজেদের টিক চিহ্ন হারানো নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
মার্কিন অলিম্পিয়ান লোলো জোন্স বলেন, তার অ্যাকাউন্ট এখনও ভেরিভাইড আছে, যেখানে এর প্রয়োজনীয়তা আছে। সেটি হলো, তার ডেটিং প্রোফাইল।
আরেক বিদ্রুপের লক্ষ্য মার্কিন অভিনেতা জেসন সুডেকিস। তার নিজের যাচাইকরণ চিহ্ন চলে গেলেও তার অভিনীত কাল্পনিক চরিত্র ‘টেড ল্যাসো’র বেলায় এমনটি ঘটেনি।
এদিকে, এই টিক চিহ্ন নিয়ে এতো হৈচৈ’কে অপ্রয়োজনীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন র্যাপার আইস টি।
“আমরা যে নীল রঙের টিক চিহ্ন নিয়ে আলোচনা করছি, সেটা সমাজের জন্য এক দুঃখজনক মূহুর্ত।” --পোস্ট করেন তিনি।
ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট নিয়ে এক সাবেক বেইজবল খেলোয়াড় টুইটারের বিরুদ্ধে মামলা করার পর ২০০৯ সালে ফিচারটির আত্মপ্রকাশ ঘটায় কোম্পানিটি।
পরবর্তীতে, এই চিহ্ন প্ল্যাটফর্মে একটি ‘মর্যাদার প্রতীক ও প্রভাবশালী চিহ্ন’ হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। তবে, নতুন ‘টুইটার-ভার্সে’ মাস্ক চান ব্যবহাকারী যেন এই সুবিধার জন্য অর্থ খরচ করেন।
যাচাইকরণ চিহ্ন মনিটাইজ করার সিদ্ধান্ত প্ল্যাটফর্মে ‘বিশাল এক সাংস্কৃতিক ও ক্ষমতা বদলের সূচনা’ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
যাচাইকরণ ব্যবস্থার আগের দিনগুলোয়, টুইটারে থাকা ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট নিয়ে সর্বপ্রথম কথা বলা তারকাদের মধ্যে ছিলেন মার্কিন র্যাপার কানিয়ে ওয়েস্ট, বাস্কেটবল খেলোয়াড় শাকিল ও’নিল বা শ্যাক এবং অভিনেতা ইওয়ান ম্যাকগ্রেগর।
নীল রঙের টিক চিহ্ন হারিয়ে যাওয়ার পর এখন ফলোয়ার সংখ্যাই ছদ্মবেশী ও জনপ্রিয় কোনো সেলিব্রিটির অ্যাকাউন্টের পার্থক্য যাচাইয়ের একমাত্র উপায় হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
যাচাইকরণ চিহ্ন হারানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাবেক মার্কিন সিনেটর হিলারি ক্লিনটনের মতো একই প্রোফাইল পিকচার থাকা একটি অ্যাকাউন্ট ‘ঘোষণা’ দেয়, তিনি আবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
টুইটারের নতুন ভেরিফিকেশন পরিকল্পনার অধীনে বিভিন্ন সোনালী, ধূসর ও নীল রঙের ব্যাজ তৈরি হয়েছে অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের ধরন নিয়ে তুলনামূলক বেশি প্রাসঙ্গিকতা ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে।
তবে, যাচাইয়ের ঘাটতি এরইমধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। নিজেকে মার্কিন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা ‘মূল টুইটার অ্যাকাউন্ট’ বলে দাবি করেছে ‘সিটি অফ নিউ ইয়র্ক’ নামের নতুন এক অ্যাকাউন্ট।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, এই ধরনের টুইট ভুল তথ্য ছড়াতে পারে।
যাচাইকরণ বন্ধের এই সিদ্ধান্তকে সাইটের ‘কনটেন্ট গণতান্ত্রিক করার’ উপায় হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন মাস্ক। তবে সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন, এই পদক্ষেপে টুইটার ব্লু গ্রাহকরা অগ্রাধিকার পাওয়ায় এটি বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে। মাস্ক আরও বলেন, সাইটের জনপ্রিয় ‘ফর ইউ’ স্ট্রিমে কেবল বিভিন্ন ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট দেখা যাবে।
সোশাল মিডিয়া মনিটর ও বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আর্থিক ফি’র যাচাইকরণ ব্যবস্থার কারণে সাইটে ভুল তথ্যের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এমন ঘটলে তা আরও অনেক বিজ্ঞাপনদাতার এই প্ল্যাটফর্ম ত্যাগের কারণ হতে পারে। আর সে ক্ষতি হয়তো টুইটারের ‘ভেরিফিকেশন সাবস্ক্রিপশন মডেল’ থেকে পাওয়া আর্থিক ফি’র চেয়ে বেশিই হবে।
তবে মাস্ক বলেন, ব্যাথা ছাড়া পরিবর্তন হয় না।
“আমার মনে হচ্ছে, আমরা ভালো দিকে এগোচ্ছি।” --বিবিসিকে বলেন তিনি।
“সামগিকভাবে আমি মনে করি, এই প্রবণতা অনেক ভালো।”