এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে বড় হীরাটি ছিল তিন হাজার একশ ক্যারেটের। কিন্তু নেপচুন ও ইউরেনাসে হীরার পুরু একটি স্তর থাকাও অসম্ভব নয়।
Published : 06 Sep 2022, 06:43 PM
নেপচুন আর ইউরেনাসের মতো আইস জায়ান্টে কয়েক মিলিয়ন ক্যারেটের হীরার সম্ভবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা; পৃথিবীর গবেষণাগারেই গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলের অনুকরণে বিশেষ উপায়ে কৃত্রিম আবহাওয়া তৈরি করে সেখান থেকেই ছোট ছোট হীরা তৈরিও সম্ভাব।
বিজ্ঞানীরা আইস জায়ান্টখ্যাত গ্রহগুলোতে ‘ন্যানোডায়মন্ড’ বৃষ্টির তত্ত্ব দিয়েছিলেন আগেই। শনি বা স্যাটার্নসহ পৃথিবীর তুলনায় দানবীয় গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলের বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টিতে হীরার উপস্থিতির ইঙ্গিত মিলেছিল মহাকাশ বিজ্ঞানীদের আগের গবেষণায়।
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক এক জোটের সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত করছে, পুরো ছায়াপথকে বিবেচনায় নিলে ‘হীরক বৃষ্টি’র বিষয়টি সম্ভবত বিরল কিছু নয়।
‘ডায়মন্ড ফরমেশন কাইনেটিক্স ইন শক-কমপ্রেসড কার্বন-হাইড্রোজেন-অক্সিজেন স্যাম্পলস রেকর্ডেড বাই স্মল-অ্যাংগেল এক্স-রে স্ক্যাটারিং অ্যান্ড এক্স-রে ডিফ্র্যাকশন’ শিরোনামের ওই গবেষণা থেকে আরও ইঙ্গিত মিলছে যে, বরফ দানব গ্রহগুলোতে সম্ভবত আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি অক্সিজেন আছে এবং বেশি অক্সিজেনের উপস্থিতির মানে হচ্ছে গ্রহগুলোতে হীরা থাকার সম্ভাবনাও বেশি।
সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে ওই গবেষণা।
নেপচুন ও আর ইউরেনাসে হীরক বৃষ্টির ফলে কয়েক মিলিয়ন ক্যারেটের হীরার উপস্থিতি থাকতে পারে বলেও ধারণা করছেন গবেষকরা। পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে বড় হীরাটি ছিল তিন হাজার একশ ক্যারেটের। কিন্তু নেপচুন ও ইউরেনাসের বায়মণ্ডলকে বিবেচনায় নিলে গ্রহগুলোতে হীরার পুরু একটি স্তর থাকাও অসম্ভব কিছু নয়।
গবেষকদের সাম্প্রতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে, একই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ন্যানোডায়মন্ড উৎপাদন করা সম্ভব হতে পারে পৃথিবীর বুকে।
অতীতে যে পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে আইস জায়ান্টখ্যাত গ্রহগুলোতে ‘হীরক বৃষ্টি’র তত্ত্বে পৌঁছেছিলেন গবেষকরা, ওই একই পরীক্ষা-নিরীক্ষা নতুন কিছু পরিবর্তন এনেছিল জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের জোটটি। পরীক্ষার জন্য গ্রহগুলোর রসায়নের কাছাকাছি উপাদান হিসেবে বর্তমান পৃথিবীর খুবই সহজলভ্য একটি উপাদান বেছে নিয়েছিলেন তারা। আর সে বিশেষ উপাদান হচ্ছে পিইটি বা পলিএথেলিন টেরেফথালাইট (polyethylene terephthalate) প্লাস্টিক।
পানীয়ের বোতল উৎপাদনে বহুল ব্যবহৃত এই পিইটি প্লাস্টিক। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট জানিয়েছে, এ প্লাস্টিকের রাসায়নিক মিশ্রণের কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অক্সিজেনের উপস্থিতি বেড়েছে যা আগের পরীক্ষাগুলোতে ছিল না।
বিজ্ঞানীরা পিইটি প্লাস্টিকের রসায়নকেই বরফ দানবগুলোর বায়ুমণ্ডলের রসায়নের মডেল হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছেন। তারপর, গ্রহগুলোর বায়মণ্ডলীয় চাপ নকল করতে লেজার রশ্মী ছুড়ে দিয়েছেন প্লাস্টিকের দিকে। এর ফলে রাসায়নিক পর্যায়ে কী হচ্ছে, সেটাই ছিল গবেষকদের পর্যবেক্ষণের মূল বিষয়।
পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা দিয়ে জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ রোস্টকের পদার্থবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ডমিনিক ক্রাউস বলেন, “অক্সিজেনের উপস্থিতি কার্বন আর হাইড্রোজেনের বিভাজনের গতি বাড়িয়েছে এবং এর ফলে ন্যানোডায়মন্ড গঠনের প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করেছে। এর মানে হলো কার্বন পরমাণুগুলো আরও সহজে সমন্বিত হয়ে হীরার স্ফটিক তৈরি করতে পারবে।”
সিনেট জানিয়েছে, ফ্রান্সের ইকোল পলিটেকনিকের গবেষকরা সিলিকন ভ্যালির ‘এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাক্সেলেটের ল্যাব’-এর সঙ্গে জোট বেঁধে নিজেদের গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছেন শুক্রবার।
এক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে ওই গ্রহগুলো থেকে হীরা খনন সম্ভাবনা না দেখলেও, গ্রহগুলোর বায়মণ্ডলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল, ওই একই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর বুকে ন্যানোডায়মন্ড উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রযুক্তি খাতে ‘ন্যানোডায়মন্ড’ বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরার টুকরার চল আছে। এ ছাড়াও সেন্সর নির্মাণে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন প্রযুক্তি খাতেও ব্যবহৃত হতে পারে ওই হীরার টুকরাগুলো।
এ প্রসঙ্গে এসএলএসি’র বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ওফোরি-ওকাই বলেছেন, “এখন ন্যানোডায়মন্ড উৎপাদন করতে হীরার টুকরা অথবা অনেকখানি কার্বন নিয়ে তা বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। লেজার নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা আরও পরিষ্কার এবং সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য প্রক্রিয়ায় ন্যানোডায়মন্ড উৎপাদন করতে পারবে।
সিনেট জানিয়েছে, রাসায়নিক পর্যায়ে আরও পরিবর্তন এনে আরও পরিক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছেন গবেষকরা। বায়ুমণ্ডলেই হীরার গঠন এবং বৃষ্টি হিসেবে নেমে আসার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান তারা।