“এটা মা-বাবাদের জন্য। তারাও আমার মতো শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত,” বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
Published : 07 Nov 2024, 02:54 PM
১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ‘বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো’ নতুন আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিস বলেছেন, প্রস্তাবিত আইনটি সামনের সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে উত্থাপিত হবে, যা অস্ট্রেলীয় শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংশ্লিষ্ট ‘ক্ষতি’ দমন করার লক্ষ্যে তৈরি বলে উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
“এটা মা-বাবাদের জন্য। তারাও আমার মতো শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি অস্ট্রেলীয় পরিবারগুলোকে জানাতে চাই, সরকার আপনাদের সঙ্গেই আছে,” বলেন তিনি।
এদিকে, এই আইন নিয়ে এখনও বিশদ বিতর্ক বাকি থাকলেও সরকার বলেছে, যেসব কম বয়সী কিশোর-কিশোরী এরইমধ্যে সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করছে, তাদের বেলায় এ নিষেধাজ্ঞা বর্তাবে না। একই শিথিলতা থাকবে মা-বাবার কাছ থেকে সোশাল মিডিয়া ব্যবহার অনুমতি পাওয়া শিশুদের বেলাতেও।
সরকার বলছে, এ প্রবেশাধিকার বন্ধ করার যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকেই।
অ্যালবানিস বলেছেন, এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর জন্য কোনও আর্থিক জরিমানা থাকবে না। আর আইনটি প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকবে অস্ট্রেলিয়ার অনলাইন নিয়ন্ত্রক ‘ইসেইফটি কমিশনার’-এর হাতে।
আইনটি পাশ হওয়ার এক বছরের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে। কিন্তু এই বিষয়ে আরও পর্যালোচনা হওয়া বাকি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, বিষয়টি নিয়ে সিংহভাগ বিশেষজ্ঞ একমত পোষণ করলেও একে একেবারে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন।
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ যুক্তি দেখিয়েছেন, এ নিষেধাজ্ঞা শুধু টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ফেইসবুকের মতো অ্যাপ কম বয়সীদের কাছে পৌঁছানো দেরিই করাবে না, বরং কীভাবে অনলাইনের জটিল জগতে চলাফেরা করতে হয়, সে বিষয়টিও শেখাবে।
এর আগে প্রবেশাধিকার বন্ধের বিভিন্ন প্রচেষ্টা, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেগুলো সিংহভাগ ক্ষেত্রে ব্যর্থ বা বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। এ ছাড়া, বয়স যাচাইকরণের বিভিন্ন শর্ত ফাঁকি দিতে পারে, এমন টুলগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
শিশু অধিকার সংশ্লিষ্ট অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহৎ আইনি সংগঠন এ প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞাকে ‘তেমন কার্যকর হওয়ার মতো নয়’ বলে সমালোচনা করেছে।
অক্টোবরে সরকারকে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে একশ জনের বেশি শিক্ষাবিদ ও ২০টি নাগরিক সমাজ সংগঠন স্বাক্ষর করেছে। এমন আইনের বদলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সুরক্ষা মানদণ্ড’ প্রয়োগ করার আহ্বান রয়েছে ওই চিঠিতে।
তবে, অনেক সংগঠনই এ আইনের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের কাছে তদ্বির করেছে। তারা বলছে, শিশুদের ক্ষতিকর কনটেন্ট, ভুল তথ্য, বুলিইয়িং ও অন্যান্য সামাজিক চাপ থেকে রক্ষার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।