কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা: ৭২ কোটি ডলারে মেটার সমঝোতা

ওই কেলেঙ্কারীর ঘটনায় মেটার ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে তদন্ত নেমেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলো; সশরীরে কংগ্রেসে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছিলেন মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গ।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2022, 01:11 PM
Updated : 23 Dec 2022, 01:11 PM

সেবাগ্রাহকদের অনুমতি ছাড়াই তাদের ডেটায় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাসহ তৃতীয় পক্ষীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রবেশাধিকার দেওয়া নিয়ে ক্লাস-অ্যাকশন মামলায় ৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে আপস করতে রাজি হয়েছে ফেইসবুকের মূল কোম্পানি মেটা।

রয়টার্স জানিয়েছে, মেটার সমঝোতা প্রস্তাব প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবারের আদালতে জমা দেওয়া নথিপত্র থেকে।

ফেইসবুক যুক্তরাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে অনুমতি ছাড়াই আট কোটি ৭০ লাখ সেবাগ্রাহকের গোপন তথ্য সরবরাহ করছিল– ২০১৮ সালে এ খবর ফাঁস হওয়ার পর ক্লাস অ্যাকশন মামলার মুখে পড়ে বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক মাধ্যমটি।

বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণের ওই অংক যুক্তরাষ্ট্রের ডেটা গোপনতা আইনে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। একই সঙ্গে এটা হবে মেটার এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ।

“এই ঐতিহাসিক আপস এই জটিল ও অভূতপূর্ব মামলার বাদীদের স্বস্তি দেবে,” আদালতে বলেন বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ডেরেক লোজার।

তবে আপসের অংশ হিসেবে নিজেদের কোনো ভুল স্বীকার করেনি ফেইসবুকের মূল কোম্পানি মেটা। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোম্পানির ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা ভেবেই’ এ আপস প্রস্তাব। স্যান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আদালত অনুমোদন দিলে তবেই তা কার্যকর হবে।

“গত তিন বছরে আমরা গোপনতা প্রশ্নে আমাদের কার্যপ্রণালী ঢেলে সাজিয়েছি এবং সামগ্রিক গোপনতা প্রকল্প চালু করেছি,” বিবৃতিতে বলেছেন মেটা।

বর্তমানে বিলুপ্ত কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ২০১৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিল। ভোটারদের টার্গেট করে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালানোর লক্ষ্যে কয়েক কোটি ফেইসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছিল তারা।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা এ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছিল ফেইসবুকের অনুমোদনপ্রাপ্ত এক গবেষকের মাধ্যমে। ফেইসবুক প্ল্যাটফর্মে নিজস্ব একটি অ্যাপ চালু করার অনুমোদন ছিল ওই গবেষকের যা কয়েক কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করেছিল।

ওই কেলেঙ্কারির ঘটনায় মেটার ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে তদন্তে নেমেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলো; সশরীরে কংগ্রেসে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছিলেন মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গ।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) সঙ্গে আপস করতে ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছিল মেটা। ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এর বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে আরও ১০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল মেটা।

রয়টার্স জানিয়েছে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি নিয়ে এখনও তদন্ত করছেন কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা। ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়ের করা একটি মামলা এখনও চালু আছে।

তবে বৃহস্পতিবারের আপস প্রস্তাবের মাধ্যমে সেবাগ্রাহকদের পক্ষ থেকে জাতীয় আইন ভঙ্গের অভিযোগে যে মামলা করা হয়েছিল, তা থেকে নিস্তার পাওয়ার পথে একধাপ এগোলো মেটা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ছিল, মেটা তাদের গোপন তথ্যের নিরাপত্তা দিতে পারে এমন ধারণা দিয়ে বিভ্রান্ত করেছিল; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কয়েক হাজার তৃতীয় পক্ষীয় প্রতিষ্ঠানকে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ডেটায় প্রবেশাধিকার দিয়েছিল কোম্পানিটি।