টুইটারের ‘ব্লু’ সেবায় নতুন পরিবর্তনের ঘোষণা মাস্কের

আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে টুইটারে কেবল ভেরিফাইড গ্রাহকরাই অন্যান্য ব্যবহারকারীর বিভিন্ন পোস্টের রেকমেন্ডেশন ও বিভিন্ন জরিপে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2023, 11:36 AM
Updated : 28 March 2023, 11:36 AM

টুইটারের আর্থিক ফি ভিত্তিক ‘ব্লু’ গ্রাহক সেবায় নতুন পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক প্ল্যাটফর্মটির মালিক ইলন মাস্ক।

ঘোষণা অনুসারে, আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে টুইটারে কেবল ভেরিফাইড গ্রাহকরাই অন্যান্য ব্যবহারকারীর বিভিন্ন পোস্টের রেকমেন্ডেশন ও বিভিন্ন জরিপে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

নতুন নীতিমালার অধীনে টুইটারের আর্থিক সেবার বাইরের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্ট আর ‘ফর ইউ’ নামের নিউজফিডে দেখা যাবে না।

গত সপ্তাহে কোম্পানিটি বলেছে, তারা কয়েকটি এমন ‘লিগাসি’ অ্যাকাউন্ট থেকে ‘ভেরিফাইড’ সুবিধা সরিয়ে ফেলবে, যেগুলো মাস্কের কোম্পানি কেনার আগে দেওয়া হয়েছে।

নীল রঙের যাচাইকরণ চিহ্নের জন্য ব্যবহারকারীকে এখন মাসিক সাত ডলার করে দিতে হয়। এর ফলে, বিভিন্ন বাড়তি ফিচারেও প্রবেশাধিকার মেলে।

মাস্ক বলেন, এই পরিবর্তন হলো ‘উন্নতমানের এআই বট অ্যাকাউন্টের বহর মোকাবেলার একমাত্র বাস্তবসম্মত উপায়। অন্যথায়, এটি আশাহীন কোনো যুদ্ধে হেরে যাওয়ার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।’

“জরিপে ভোট দেওয়ার বেলাতেও একই কারণে যাচাইকরণের প্রয়োজন পড়বে।” --যোগ করেন তিনি।

এর আগের এক পোস্টে মাস্ক বলেন, আর্থিক ফি’র বিনিময়ে যাচাইকরণ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য হারে বিভিন্ন বট ব্যবহারের খরচ বাড়িয়ে দেবে। এর ফলে, তাদের শনাক্ত করাও তুলনামূলক সহজ হবে।

তবে, সামাজিক প্ল্যাটফর্মটির কয়েকজন ব্যবহারকারী এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টুইটারের যাচাইকরণ দলের সাবেক এক কর্মী বিবিসি’কে বলেন, “আমার দিকের সর্বপ্রথম লক্ষ্য ছিল ব্যবহারকারীদের বাস্তব জগতের বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদান থেকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে, এই পদক্ষেপ আমার লক্ষ্যমাত্রার পুরোপুরি বিপরীত।”

“ভেরিফাইড ব্যবহারকারীরা প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ক্ষমতা ও উপস্থিতি ব্যবহার করে যে কোনো ধরনের ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে গোটা বিশ্বের ব্যবহারকারীদের জন্য সত্যিকারের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটা নিরব হুমকি হিসেবে কাজ করলেও তা কেউ দেখছে না।” --যোগ করেন তারা।

গত নভেম্বরে ‘ব্লু’ সেবার প্রাথমিক উন্মোচন তুলনামূলক ‘এলোমেলো’ ছিল। কারণ সেবাটি কিনে প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড ও তারকাদের ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট তৈরির সুযোগ পান ব্যবহারকারীরা। এমনকি সে সময় প্ল্যাটফর্মের মালিক মাস্কেরও ছদ্মবেশ ধারণ করেন অনেকে।

এই ‘জগাখিচুড়ি’র কারণে ফিচারটি চালুর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এটি বন্ধ করতে বাধ্য হয় টুইটার। তবে, পরের মাসে পুনরায় এটি চালু করে তারা।

এর পর থেকেই আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষ ও তাদের পরিচিত বিভিন্ন সমর্থক’সহ বিতর্কিত দলগুলো ‘ব্লু’ সেবাটি ব্যবহার করছে।

প্ল্যাটফর্মে ভেরিফাইড ব্যবহারকারীদের টুইট এখন অন্যান্য অ্যাকাউন্টের ওপরে দেখা যায়। এদিকে, আর্থিক ফি দেওয়া গ্রাহকরাও অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি ‘এডিট বাটন’সহ বিভিন্ন বাড়তি ফিচারে প্রবেশাধিকার পেয়েছেন  বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

এর আগে, বিভিন্ন ‘হাই-প্রোফাইল’ অ্যাকাউন্ট আসল কি না সেটি যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে নীল রঙের টিক চিহ্ন ব্যবহৃত হতো। এর জন্য কোনো আর্থিক ফি না দিতে হলেও, কোম্পানি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতো যে কারা এটি পাবেন।

গত সপ্তাহে টুইটার বলেছে, তারা নিজেদের ‘লিগাসি ভেরিফাইড প্রোগ্রাম’ থেকে সরে আসতে শুরু করবে ও পয়লা এপ্রিল থেকে কয়েকটি ‘লিগাসি ভেরিফাইড চেকমার্ক’ সরিয়ে ফেলবে।

কোম্পানি আরও যোগ করে, টুইটারে নীল রঙের টিক চিহ্ন ধরে রাখার জন্য ব্যবহারকারীদের আর্থিক ফি দিতে হবে।

আর প্ল্যাটফর্মটিতে থাকা বিভিন্ন বট অ্যাকাউন্ট কোম্পানির বিজ্ঞাপনী আয় বা আর্থিক গ্রাহক সেবার ক্ষতি করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।

টুইটারে থাকা ‘ভুয়া বা স্প্যাম’ অ্যাকাউন্টের সংখ্যা মাস্ক প্রায়ই নিজের উদ্বেগের বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। এমনকি এই কারণ দেখিয়ে চার হাজার চারশ কোটি ডলারে প্ল্যাটফর্মটি কেনার পরিকল্পনাও আটকে দিয়েছিলেন তিনি। সে সময় তিনি অভিযোগ জানান, কোম্পানির আগের ব্যবস্থাপনা দল তার কাছে বট অ্যাকাউন্টের ভুল সংখ্যা প্রকাশ করেছে।