বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এ উপাদানের সহায়তায় ব্যাটারিতে লিথিয়ামের ব্যবহার কমে আসতে পারে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত।
Published : 10 Jan 2024, 04:31 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সুপারকম্পিউটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন এক নতুন উপাদানের সন্ধান মিলেছে, যা ব্যাটারিতে লিথিয়ামের ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারে।
অনুসন্ধানটি চালিয়েছে মাইক্রোসফট ও ‘প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (পিএনএনএল)’, যা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি’র অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এ উপাদানের সহায়তায় ব্যাটারিতে লিথিয়ামের ব্যবহার কমে আসতে পারে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত।
নতুন উপাদানে তৈরি ব্যাটারির মাধ্যমে লাইটবাল্ব জ্বালানো সম্ভব হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
নতুন উপাদানটির খোঁজে এআই প্রযুক্তি ও সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করেছেন মাইক্রোসফটের গবেষকরা, যেখানে এক সপ্তাহেরও কম সময়ে তিন কোটি ২০ লাখ সম্ভাব্য অজৈব উপাদান থেকে সম্ভাবনাময় ১৮টি বাছাই করা হয়। ল্যাব গবেষণার প্রচলিত উপায়ে এ স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া চালালে সময় লেগে যেত দুই দশকের বেশি।
আর এর কার্যকর ব্যাটারি প্রোটোটাইপের ধারণামূলক পর্যায় থেকে বিকাশ পর্যন্ত সময় লেগেছে নয় মাসের কম সময়।
প্রতিষ্ঠান দুটি এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে উন্নতমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের কম্পিউটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেখানে বেশ কিছু সংখ্যক কম্পিউটার সমন্বিত করে বিভিন্ন জটিল বিজ্ঞানভিত্তিক ও গাণিতিক কাজের সমাধান করা হয়েছে।
মাইক্রোসফটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসন জ্যান্ডার বিবিসিকে বলেছেন, কোম্পানির মিশন ছিল ‘আড়াইশ বছরের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে কাজে লাগানো’।
“আমরা মনে করি, এ ধরনের প্রযুক্তি আমাদের অনেক সাহায্য করবে। আর এমন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নিয়ে ভবিষ্যতেও কাজ করা যাবে।” --বলেন তিনি।
লিথিয়ামের সমস্যা
লিথিয়ামের বাজারমূল্য ও রূপালী রঙের জন্য একে অনেক সময় ‘হোয়াইট গোল্ড’ নামেও ডাকা হয়। আর ‘রিচার্জএবল ব্যাটারি (লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি)’ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, যা বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি বা ইভি থেকে শুরু করে স্মার্টফোন সকল ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার দেখা গেছে।
ইভি’র চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই ধাতুর প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ সংস্থা ‘আইইএ’র তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যেই গোটা বিশ্বে ধাতুর সংকট দেখা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি’র তথ্য অনুসারে, ২০৩০ সাল নাগাদ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির চাহিদা বাড়তে পারে ১০ গুণ পর্যন্ত, যা পূরণের লক্ষ্যে ব্যাটারি কারখানা স্থাপন করে যাচ্ছে উৎপাদক কোম্পানিগুলো।
এ ছাড়া, লিথিয়াম আহরণের বিষয়টিও কিছুটা বিতর্কিত কারণ এর পেছনে বেশ কয়েক বছর সময় লাগার পাশাপাশি এটি পরিবেশের ওপরও বড় প্রভাব ফেলে। এ ধরনের ধাতু পরিশোধনের ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিমাণ পানি ও শক্তি খরচ হয়। আর ভূপৃষ্ঠের ওপর বড় ক্ষত সৃষ্টি করার পাশাপাশি বিষাক্ত বর্জ্যও উৎপন্ন হয় এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের রসায়ন বিভাগে ব্যাটারি গবেষণা দলের মূল গবেষক ড. নুরিয়া টাপিয়া-রুইজ বলেছেন, লিথিয়াম ধাতুর পরিমাণ কমিয়ে এর সঙ্গে যে কোনো উপাদান ব্যবহার করলে তা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি শিল্পের ‘হলি গ্রেইল’ বা সোনার চাবি হিসেবে বিবেচিত হবে।
“আসন্ন বছরগুলোয় ব্যাটারি গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এআই ও সুপারকম্পিউটিং প্রযুক্তি, যেখানে বিভিন্ন কার্যকর উপাদান নিয়ে অনুমান চালানোর সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।” --বলেন তিনি।
তবে, ইউনিভার্সিটি অফ স্টার্থক্লাইড-এর রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক ড. এডওয়ার্ড ব্রাইটম্যান বলছেন, এ প্রযুক্তি নিয়ে ‘কিছুটা সতর্কতার সঙ্গে’ কাজ করতে হবে।
“এতে জাল বা প্রথম দিকে ভালো দেখায় এমন ফলাফল দেখানোর ঝুঁকি আছে। আর এতে এমন পরিচিত উপাদান ব্যবহারের শঙ্কাও রয়েছে, যা ল্যাবে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়।” --বলেন তিনি।
এআই কীভাবে ভিন্ন?
এ প্রযুক্তি কাজ করে মাইক্রোসফটের তৈরি নতুন এক ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে। একে এমন আণবিক ডেটার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা উপাদানের মূল রসায়নটি খুঁজে বের করতে সক্ষম।
“এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক উপকরণ ও ডেটাবেজের ভিত্তিতে।” --বলেন জ্যান্ডার।
“বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানোর ক্ষেত্রে এ ডেটা খুবই নির্ভরযোগ্য।”
সফটওয়্যারটি ১৮টি উপাদান বাছাই করার পর ‘পিএনএনএল’-এর ব্যাটারি বিশেষজ্ঞরা ল্যাবে এর পরীক্ষা চালিয়ে চূড়ান্ত উপাদানটি বাছাই করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
পিএনএনএল-এর গবেষক কার্ল মুয়েলার বলেছেন, মাইক্রোসফটের এআই ব্যবস্থার সহায়তা নিয়ে তারা প্রচলিত ব্যবস্থার চেয়ে ‘খুব দ্রুতই ফলাফল’ অর্জন করতে পেরেছে।
“আমরা নতুন উপাদানের রাসায়নিক অবস্থা নিয়ে পরীক্ষা চালানোর পাশাপাশি একে ব্যাটারিতে ব্যবহার করা যায় কি না, সে বিষয়টিও খুব দ্রুত মূল্যায়ন করতে পেরেছি। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, উন্নতমানের এআই প্রযুক্তি কীভাবে উদ্ভাবনী চক্রের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে।”