এআই ফটো অ্যাপের জোয়ারে এবার ভাটার টান?

জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকাকালীন অ্যাপগুলোর দৈনিক ডাউনলোড সংখ্যা ছিল ৪৩ লাখ। আর এগুলোর পেছনে দৈনিক সর্বমোট ১৮ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করেছেন গ্রাহকরা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2023, 12:58 PM
Updated : 14 Feb 2023, 12:58 PM

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ফটো অ্যাপ ব্যবহারের প্রবণতা কী তবে শেষ হতে চলছে? অ্যাপের বাজার বিশ্লেষক এক কোম্পানির নতুন তথ্য এমনটিই দেখাচ্ছে।

গত কয়েক মাসে ‘লেনসা এআই’র ‘ম্যাজিক অ্যাভাটার’ নামের ফিচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় লেখাকে ছবিতে বদলে ফেলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিভিন্ন এআই চালিত ফটো অ্যাপ ভাইরাল হয়েছে অ্যাপ স্টোরে।

অ্যাপ বিশ্লেষক কোম্পানি ‘অ্যাপটোপিয়া’র নতুন ডেটা থেকে ইঙ্গিত মিলছে, এর উত্থানের মতোই দ্রুতগতিতে গ্রাহকের আকর্ষণ কমেছে বিভিন্ন এআই ফটো অ্যাপের।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এআই ফটো অ্যাপগুলোর পাশাপাশি এদের ডাউনলোড বৃদ্ধির হার ও অ্যাপে গ্রাহকের খরচের মতো বিষয়গুলো অ্যাপটোপিয়া বিশ্লেষণ করেছে বলে প্রতিবেদনে বলেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ।

টেকক্রাঞ্চে শেয়ার করা বিশ্লেষণে লেনসা এআই’র পাশাপাশি ‘ভয়’, ‘রেমিনাই’, ‘ফোটর’, ‘ওয়ান্ডার’, ‘ফেইসপ্লে’, ‘এআইবাই’, ‘ফেইসঅ্যাপ’, ‘গ্র্যাডিয়েন্ট’, ‘ডন এআই’, ‘ফেইসটিউন’, ‘প্রিকেল’, ‘ভইলা এআই আর্টিস্ট’, নিউ প্রোফাইল পিক অ্যাভাটার মেকার’ ও ‘মেইতু’র মতো বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ফটো অ্যাপ পরীক্ষা করেছে অ্যাপটোপিয়া।

কোম্পানিটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই শ্রেণির বিভিন্ন এআই অ্যাপ প্রথম শুরু হয় ‘থ্যাংকসগিভিং’ আয়োজনের সময়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে অ্যাপ কেনা ও ডাউনলোড, দুটো ক্ষেত্রেই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছায় এগুলো।

জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে থাকাকালীন অ্যাপগুলোর দৈনিক ডাউনলোড সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছিল ৪৩ লাখে। আর এগুলোর পেছনে দৈনিক সর্বমোট ১৮ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করেছেন গ্রাহকরা।

এর পর থেকেই এই সংখ্যা ব্যপক হারে কমতে শুরু করে। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর নিজেদের সর্বনিম্ন আয়ের মুখ (তিন লাখ ৭০ হাজার ডলার) দেখে অ্যাপগুলো। এর এক সপ্তাহ পর ১৯ নভেম্বর, এগুলো নিজেদের সর্বনিম্ন ডাউনলোড সংখ্যা (আট লাখ ৪০ হাজার) দেখতে পায়।

১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, এই শ্রেণির অ্যাপ নয় লাখ ৫২ হাজারের মতো সম্মিলিত ডাউনলোডের পাশাপাশি গ্রাহকের কাছ থেকে আয় করেছে কেবল পাঁচ লাখ সাত হাজার ডলারের মতো। আর এই সংখ্যা ক্রমশ নিম্নগামী।

লেনসা এআই’র রাতারাতি সাফল্যের পর সর্বশেষ এই ‘হাইপ চক্রের’ সূচনা ঘটে। অ্যাপটি ২০১৮ সাল থেকে চালু হলেও ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নতুন অ্যাভাটার ফিচারের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে অ্যাপটি ভাইরাল হয়ে যায়। এমনকি ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের মতো বড় অ্যাপগুলোকে পেছনে ফেলে এটি আইওএস অ্যাপ স্টোরের ‘ফটো অ্যান্ড ভিডিও’ তালিকায় শীর্ষ অ্যাপ হিসেবেও অবস্থান করেছে।

অ্যাপের নতুন ‘ম্যাজিক অ্যাভাটার’ ফিচার সে সময় দর্শকদের আকৃষ্ট করে। অ্যাপটির ওপেন সোর্স ‘স্টেবল ডিফিউশন’ মডেল বিভিন্ন সেলফি প্রক্রিয়াজাত করে এমন অ্যাভাটার তৈরি করে, যা দেখে মনে হয়, এগুলো কোনো ডিজিটাল শিল্পীর তৈরি।

এর পরপরই এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছু সংখ্যক অভিযোগ আসে। ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারেন, এগুলোর মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন ‘অনিরাপদ’ ছবি বানানো যায়। 

এতে সেইসব শিল্পীও হতাশ হয়ে পড়েন, যাদের ছবি বিনা অনুমতিতে এইসব প্রশিক্ষণ ডেটায় প্রবেশ করানো হয়। ফলে, অনেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি প্রোফাইল পিকচারের সঙ্গে ওই শিল্পীদের নিজস্ব কাজের মিলও খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ এগুলো থেকে তাদের আর্থিক লাভও হচ্ছে না।

গ্রাহকরা সম্ভবত এই বিষয়ে উত্থাপিত নৈতিক উদ্বেগে সাড়া দিয়েছে। সে সময় টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, কেউ কেউ বিভিন্ন এআই’র তৈরি ছবি ও প্রোফাইল পিকচারের নীচে মন্তব্য করছেন, তারা যেন এমন কোনো অ্যাপ ব্যবহার না করেন, যেগুলো শিল্পীদের কাছ থেকে ছবি চুরি করে।

এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পর সম্ভবত এআই আর্টের চাহিদা কিছুটা কমেছে। কারণ ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে থাকা এআই’র তৈরি ছবি নিয়ে কেউ অভিযোগ জানালে, সেটি ব্যবহারের মজাটা আর থাকে না।

এ ছাড়া, টিকটকে ফিচারটি সম্পর্কে বিভিন্ন ভিডিও দেখে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি কেবল নিজের প্রোফাইল ফটো’র ফলাফল দেখতে চেয়েছেন। একবার ছবি তৈরির প্রক্রিয়া শেষ করে ছবির সংগ্রহ বুঝে পাওয়ার পর অনেকের মধ্যে ফিচারটি পুনরায় ব্যবহারের আগ্রহও জাগেনি।

টেকক্রাঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু সংখ্যক ব্যবহারকারী এর গ্রাহক সেবা ব্যবস্থা নিয়েও অভিযোগ জানান। কারণ, তারা ভেবেছেন এই প্রক্রিয়া একবারের চেষ্টাতেই করে ফেলা যাবে।

এদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ফটো অ্যাপের অপ্রতিরোধ্য স্রোত শুরু হয়েছে অ্যাপ স্টোরগুলোতে। ফলে, বিভিন্ন অ্যাপ স্টোরের শীর্ষ তালিকায় চলে যাচ্ছে বিভিন্ন এআই অ্যাপ, যেগুলোর কয়েকটি অন্যদের তুলনায় ভালভাবে কাজ করে।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কোনো এক সময়, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ স্টোর তালিকার শীর্ষ তিন জায়গা দখল রেখেছিল বিভিন্ন এআই ফটো অ্যাপ। সে সময় অন্যান্য অনেক অ্যাপই নতুন করে শীর্ষ একশ’র তালিকায় প্রবেশ করেছে।

বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি সেন্সর টাওয়ারের অনুমান থেকে সে সময় ইঙ্গিত মিলেছিল, শীর্ষ একশটি অ্যাপের মধ্যে আটটিই এআই আর্ট ভিত্তিক অ্যাপ। লেনসা এআই’কে জনপ্রিয় করে তোলা বিভিন্ন অ্যাভাটারের চেয়ে অ্যাপগুলো তেমন আলাদা না হলেও এগুলোর এআই অ্যাভাটারে বৈচিত্র্য দেখা গেছে। টেক্সট প্রমপ্ট থেকে ছবি তৈরি করে অন্যান্য এআই ইমেজ জেনারেটর একই ধরনের সুবিধা এনেছিল।

এই বাজার তাৎক্ষণিকভাবেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। একই সময়, আরেক ধরনের এআই প্রযুক্তি চ্যাটজিপিটি নিয়ে ব্যবহারকারীদের আগ্রহ তৈরি হয়। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর চ্যাটবটটি আত্মপ্রকাশের পর থেকেই গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এটি।

জানুয়ারি নাগাদ অ্যাপ স্টোরে পুনরায় বিভিন্ন এআই অ্যাপের বন্যা বয়ে যায়। তবে এইবার তা ঘটেছে বিভিন্ন ‘সন্দেহজনক’ চ্যাটজিপিটি অ্যাপের কারণে। আর অ্যাপল তুলনামূলক পরিচিত নকল চ্যাটজিপিটি অ্যাপগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেললেও, বাকিগুলো থেকে গেছে।

সম্প্রতি, ওপেনএআই’র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিনে চ্যাটজিপিটি’র মতো অভিজ্ঞতা চালুর পর থেকে এর পেছনে গ্রাহকদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অ্যাপ স্টোরে এটি শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থানে আছে। পাশাপাশি, এতে চ্যাটজিপিটি’র চেয়েও উন্নতমানের সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মার্কিন এই প্রযুক্তি জায়ান্ট।