প্রায় অর্ধেকের বেশি মা-বাবা মনে করেন, সন্তানদের বয়স ১২ বছরে পৌঁছানোর পর তারা সম্ভবত প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের চেয়ে বেশি জেনে ফেলে।
Published : 08 Feb 2023, 03:59 PM
নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস উপলক্ষে ইন্টারনেটে বিভিন্ন সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সন্তান ও অভিভাবকদের জরুরী ভিত্তিতে কথা বলার অনুরোধ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্টারনেটে নিরাপত্তা, প্রাইভেসি ও সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে ঘরোয়া আলাপচারিতা অনেকটা মা-বাবা বা অভিভাবকের সন্তান দেখাশোনা করার মতোই। তবে নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তরুণ ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি বয়স্ক ব্যক্তিদের এই বিষয়ে শেখাতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চায়।
যুক্তরাজ্যে নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস আয়োজক সংস্থা ‘ইউকে সেফার ইন্টারনেট সেন্টার’-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৫৭ শতাংশ তরুণ ব্যবহারকারী মনে করেন, তাদের মা-বাবা বা অভিভাবকের অনলাইনে নিরাপদ থাকার প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপরও বর্তায়।
টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ভোডাফোনের চালানো আরেক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রায় অর্ধেকের বেশি মা-বাবা মনে করেন, সন্তানদের বয়স ১২ বছরে পৌঁছানোর পর তারা সম্ভবত প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের চেয়ে বেশি জেনে ফেলে।
৬০ শতাংশ মা-বাবা বলেন, তাদের ইচ্ছা ছিল, তারা যদি ডিজিটাল নিরাপত্তার ওপর বিশেষভাবে মনযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ডিজিটাল জগৎ সম্পর্কে আরও সচেতন হতেন।
তবে, এমন সমস্যা সমাধানে কীভাবে সহায়তা পেতে হয়, ওই বিষয়টি অনেক বয়স্ক ব্যক্তির কাছেই পরিষ্কার নয়। সেফার ইন্টারনেট সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ শতাংশ মা-বাবা জানিয়েছেন, তারা জানেনই না এই বিষয়ে জানতে হলে কোথায় মিলবে সাহায্যের হাত।
আবার তরুণ-তরুণীদের বেলায় কিছু সংখ্যক কোনো সমস্যা সম্পর্কেই অভিযোগ জানায় না। তাদের মধ্যে কেবল ২২ শতাংশই নিজেদের সমস্যার কথা জানায়। আরা অভিযোগ জানানোদের মধ্যে ১০ শতাংশ বলেন, নিজের নিজের জীবন নিয়ে অনলাইনে কারও সঙ্গে আলাপ করবেন না।
দাতব্য সংস্থা ‘চাইল্ডনেট’-এর প্রধান নির্বাহী ও ‘ইউকে সেফার ইন্টারনেট সেন্টার’-এর পরিচালক উইল গার্ডনার বলেন, এইসব অনুসন্ধানের ফলে এই বছর নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসে আলাপচারিতার ওপর তুলনামূলক বেশি মনযোগ দিচ্ছে যুক্তরাজ্য, যার ‘সম্মুখসারী ও কেন্দ্রে’ আছে তরুণদের কণ্ঠস্বর।
তিনি এই গবেষণার সূত্র ধরে বলেন, অনলাইনে নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চান তরুণ ব্যবহারকারীরা। আর বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলাতেও তারা উপকারে আসতে পারেন।
“কেবল তরুণরাই এর থেকে শিখতে পারবে, বিষয়টি এমন নয়।” ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন চাইল্ডনেটের অন্যতম শীর্ষ ডিজিটাল কর্মী ও নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসের এই বছরের কাজের স্বীকৃতি পাওয়া লরেন।
“এখান থেকে সবারই শেখার আছে।”
বয়স্ক লোকজন সম্ভবত ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিপজ্জনক জালিয়াতি সম্পর্কে তুলনামূলক কম সচেতন। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, নিজেদের ডিভাইসে কীভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিচার ব্যবহার করতে হয়, সেটি তারা জানেন না।
লরেন ও অন্যান্যরা বলছেন, নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারের কথাবার্তা উন্মুক্ত থাকলে সব বয়সী লোকজনের ইন্টারনেট ব্যবহারে এটি সহায়ক হতে পারে।
“আমি মনে করি, তুলনামূলক কম বয়সী লোকজন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের মা-বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক বা এমন কাউকে সাহায্য করতে পারেন, যারা বর্ণমালা শেখার মতো করে তাদের কথা শুনবে।”
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, অনলাইন প্রাইভেসি ও ইন্টারনেটে কী বলা যায় আর যায় না তা নিয়ে মা-বাবারা অন্য অভিভাবকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন। তবে, তরুণরা মধ্যে সামাজিক মাধ্যম বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের বেলায় মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিয়ে বেশি কথা বলে।
“আমার প্রজন্ম নিয়ে আমি বেশ গর্বিত; আমি মনে করি আমরা সকল বাধাধরা নিয়মই ভেঙেছি।” --বলেন তিনি।
“বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ প্রশ্নে এটি বিশাল এক অগ্রগতি। আর এটি অসাধারণও বটে।”
ইন্টারনেটে কল্যাণ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে গার্ডনার ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে মা-বাবারা যেন ‘শেখার আগ্রহ দেখান এবং এমনভাবে কথা বলেন, যা এই বিষয়ে কথা বলার সুযোগ ও জায়গা দেবে’।