‘ঘুম ভেঙে’ বস্ত্র খাতের চমক, সূচকের পাশাপাশি কমল লেনদেন

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির পাঁচটিই বস্ত্রের। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া কোম্পানিটিও এই খাতের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2023, 10:53 AM
Updated : 8 May 2023, 10:53 AM

পুঁজিবাজারে মাসের পর মাস ‘ঘুমিয়ে থাকার পর’ হঠাৎ বস্ত্র খাতের কোটি কোটি শেয়ার হাতবদল হল এক সঙ্গে।

দিনে কোনো দিন ১০ কোটি, কোনো দিন ১২ বা ১৪ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছিল যে খাতটিতে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে সেই খাতে লেনদেন হল ১০৬ কোটি টাকার বেশি। সব খাতকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে এল এটি।

কেবল লেনদেন নয়, সোমবার দর বৃদ্ধির দিক গিয়েও এই খাত ছিল এগিয়ে। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির শীর্ষ চারের প্রতিটিই এই খাতের। শীর্ষ দশের মধ্যে আছে আরও একটি কোম্পানি।

সব মিলিয়ে এই খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ১৩ দিন দাম বেড়েছে, ৪০টি কোম্পানি আগের দিনের দরে ফ্লোর প্রাইসে এবং চারটি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে।

যে ১৩টি কোম্পানির দর বেড়েছে এর মধ্যে তার বেশিরভাগই ফ্লোর প্রাইস ভেঙে বের হয়ে এসেছে।

টাকার অঙ্কে লেনদেনের শীর্ষে থাকা প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলও এই খাতের কোম্পানি। এর ৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ৫০ লাখ ১০ হাজার ৮৬৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। তবে এই বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেন হলেও এটি ফ্লোর প্রাইস ভেঙে বের হতে পারেনি।

শীর্ষ ২০ এর পঞ্চদশ স্থানে থাকা ফারইস্ট নিটিংয়ে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকারও বেশি।

অবশ্য এখনও এই খাতের ৩৬টি কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন এখনও তলানিতে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভালো কোম্পানি আছে।

তবে বস্ত্রের আড়মোড়া ভেঙে বের হয়ে আসার দিন পুঁজিবাজারের সার্বিক চিত্রকে ইতিবাচক বলা যাবে না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আগের দিসের তুলনায় সূচক কমেছে ৭.৭১ পয়েন্ট, লেনদেন কমেছে প্রায় এক শ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে বেড়েছে ৭৪টি কোম্পানির শেয়ারদর, দর হারিয়েছে ৬৫টি, আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ২২৫টি কোম্পানি যেগুলোর প্রায় সবগুলোই এখনও ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে।

সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৩৬৪টি কোম্পানির। একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি ২৫টি কোম্পানির। আর তিনটি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আছে।

চলতি বছর তো বটেই, গত বছরের ২৮ জুলাই নতুন করে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর এক দিনে এর আগে এতগুলো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হতে দেখা যায়নি।

ঈদুল ফিতরের আগেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছিল। তবে এর মধ্যেও ব্যাংক, বস্ত্র, সাধারণ বীমা খাতে কোনো আকর্ষণই দেখা যায়নি। এই প্রথম বস্ত্র খাতের ‘গেড়ো’ ছুটল।

তথ্য প্রযুক্তি খাতের লেনদেনও ছিল বস্ত্রের কাছাকাছি। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে লেনদেন হয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৯০ কোটি টাকা। তবে ব্যাংক খাত এখনও ২৪ কোটি টাকা লেনদেন নিয়ে তলানিতেই অবস্থান করছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষেও বস্ত্র

এদিন দর এক দিনে বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করা পাঁচটি কোম্পানির তিনটিই বস্ত্র খাতের। এর মধ্যে জাহিন স্পিনিংয় ও জেনারেশন নেক্সটের দর ১০ শতাংশ করে এবং এপেক্স স্পিনিংয়ের দর বেড়েছে ৯.৯৩ শতাংশ।

এই খাতের আরেক কোম্পানি ইভিন্স টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৭.৩৬ শতাংশ, যা ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশের দশম স্থানে। 

সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়েও ১০ পয়সা নিচে লেনদেন শেষ করেছে হা ওয়েল টেক্সটাইল, যার দর বেড়েছে ৯.৮০ শতাংশ।

এছাড়া ওষুধ ও রসায়ন খাতের ওরিয়ন ইনফিউশন ও এপেক্স ফুড কেবল সার্কিট ব্রেকার পর্যন্ত দর বেড়েছে। শেয়ারদর তিন শ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় এক দিনে বাড়তে পারে ৮.৭৫ শতাংশ, বেড়েছেও ততটাই।

এছাড়া অগ্নি সিস্টেমস এর দর ৯.০২ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের র ৮.৬৪ শতাংশ, বিচ হ্যাচারির দর ৮.৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

শীর্ষ দশ ছাড়া আরও একটি করে কোম্পানির দর ৭ ও ৬ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৫ শতাংশের বেশি, পাঁচটির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৯টির ৩ শতাংশের বেশি, ১২টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।

আরও পড়ল সি পার্লের দর

দরপতনের শীর্ষে আগের দিনের মতই ছিল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। ৮.৪৯ শতাংশ দর হারিয়ে শেয়ারদর নেমেছে ২১০ টাকা ১০ পয়সায়।

এক বছরের ব্যবধানে ৪০ টাকার ঘর থেকে সাড়ে তিনশ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ২৬ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে দর। এই কয় দিনে সাত কর্মদিবসের মধ্যে ছয় দিন দর কমেছে কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ৯৩ টাকা বা ৩০ শতাংশ।

অস্বাভাবিক উত্থান নিয়ে প্রশ্নের মুখে থাকা আলহাজ্ব টেক্সটাইলেরও একই অবস্থা। স্বল্প মূলধনী লোকসানি এই কোম্পানিটির শেয়ারদর কিছুদিন আগে দুই শ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এদিন ৭.০৭ শতাংশ কমে নেমেছে ১৪৫ টাকা ৭০ পয়সায়।

এছাড়া মিডল্যান্ড ব্যাংকের দর ৬.০৪ শতাংশ, প্রান্তিক প্রতিবেদনে মুনাফায় ফেরার তথ্য দেওয়ার আগে পরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া হাইডেলবার্গ সিমেন্টের দর ৫.৪৫ শতাংশ কমেছে।

জুট স্পিনার্স, আরামিট সিমেন্ট, একমি ল্যাবরেটরিজ, ইউনিলিভার, সেন্ট্রাল ফার্মা ও আনলিমা ইয়ার্ন ছিল দর পতনের শীর্ষ দশে।

এসব কোম্পানির দর দর্বনিম্ন ৩.৫০ শতাংশ থেকে ৪.৩১ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

আরও ৫টি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, সাতটির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৯টির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।