সূচক কমেছে ১.৬১ পয়েন্ট। তবে বেলা ১টা পর্যন্তও আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি ছিল। শেষ সোয়া এক ঘণ্টায় দেখা দেয় বিক্রির চাপ।
Published : 03 May 2023, 03:47 PM
এক ঝাঁক কোম্পানির প্রান্তিক প্রতিবেদনে আয় কমার তথ্য আসার পরও আগের দিন পুঁজিবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী; বুধবার লেনদেন বেড়েছে আরও, তবে কিছুটা কমেছে সূচক।
এদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিল লোকসানি। অন্যদিকে দরপতনের শীর্ষে ছিল মুনাফায় থাকা স্বল্প মূলধনী কোম্পানি।
বৃহস্পতিবার বৌদ্ধ পূর্ণিমায় সরকারি ছুটি থাকবে বলে বুধবারই ছিল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দর বৃদ্ধি ও দর হারানো কোম্পানির সংখ্যা প্রায় সমান সমান।
৬৪টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৬৭টি। ২১৭টি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে আগেরদিনের দরে। এর সিংহভাগই ফ্লোর প্রাইসে আছে।
দিন শেষে সূচক কমেছে ১.৬১ পয়েন্ট। তবে বেলা ১টা পর্যন্তও আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি ছিল। শেষ সোয়া এক ঘণ্টায় দেখা দেয় বিক্রির চাপ।
সূচক কমলেও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে এদিন। সারা দিনে হাতবদল হয়েছে ৮৬৩ কোটি ৫০ লাখ ৭ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮৫১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে টানা নয় কর্মদিবস সূচক বাড়ার পর চলতি সপ্তাহের তিন দিনে সূচক কমল দুই দিন, বাড়ল এক দিন।
রোববার সংশোধনের দিন লেনদেন কমে সাতশ কোটি টাকার নিচে নেমে এলেও বুধবার তা বাড়ল।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে লোকসানী কোম্পানি
বেশিরভাগ লোকসানি ও স্বল্প মূলধনী কোম্পানি এবং কয়েকটি মৌলভিত্তির কোম্পানির ওপর ভর করে লেনদেন হতে থাকা পুঁজিবাজারের চিত্র পাল্টাচ্ছে না।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে দর সংশোধনে যাওয়া পুঁজিবাজারে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর যে ধস দেখা দেয়, সেখান থেকে বের হতে চলছে ‘যুদ্ধ’।
ঈদের আগে আগে লেনদেন ও সূচক ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও তার প্রভাব বড় মূলধনী ও মৌলভিত্তির কোম্পানিতে পড়ছে না। বরং শেয়ার সংখ্যা কম– এমন কোম্পানির দর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
সাম্প্রতিক প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন বন্ধ বা কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি চালু হয়েছে বা হতে যাচ্ছে, এমন কোম্পানিতেই আগ্রহ বেশি।
এদিন দর বেড়ে সর্বোচ্চ সীমা ছোঁয়া চারটি কোম্পানির একটি টানা তিন বছর লোকসান দেওয়ার পর চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তি পর্যন্তও দিয়েছে লোকসানের তথ্য। একটি উৎপাদনে নেই বহু বছর।
একটি কোম্পানি ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর আর আর্থিক প্রতিবেদনই প্রকাশ করেনি, একটি কোম্পানি চলতি বছর দুটি প্রান্তিক লোকসান দেওয়ার পর তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব প্রকাশ করেনি এখনও। একটি কোম্পানি দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফায় ফিরলেও তৃতীয় প্রান্তিকে আবার লোকসান দিয়েছে।
বাকিগুলোর মধ্যে একটি ব্যাংক খাতের নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি যা লেনদেন শুরুর দিন অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গিয়েছিল। একটি কোম্পানি জীবন বিমা খাতের, যার শেয়ারদর মাঝেমধ্যেই বাড়ে আর কম।
বাকি কোম্পানিগলোর মধ্যে একটি বহুজাতিক, যেটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে লোকসান দিলেও প্রথম প্রান্তিকে মুনাফায় ফিরেছে। একটি কোম্পানি টানা ছয় বছর ৫ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
এর মধ্যে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে লোকসানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, মিডল্যান্ড ব্যাংক, উৎপাদন বন্ধ থাকা বিডি ওয়েল্ডিং, প্রগতি লাইফ, প্রথম প্রান্তিকে মুনাফায় ফেরা হাইডেলবার্গ সিমেন্ট।
দেশবন্ধু পলিমার, লোকসানি বিডিথাই অ্যালুমিনিয়াম, স্বল্প মূলধনী জেমিনি সি ফুড, ন্যাশনাল ফিডমিলস ও চার প্রান্তিক ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ না করা সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজও ছিল সব বৃদ্ধির শীর্ষ দশে।
একটি কোম্পানির ১০ শতাংশ, তিনটির ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই, একটির ৮ শতাংশের বেশি, একটি ৬ শতাংশের বেশি, তিনটির ৫ শতাংশের বেশি দর বেড়েছে।
আরও তিনটি করে কোম্পানির দর বেড়েছে যথাক্রমে ৪ ও ৩ শতাংশ। ৯টি কোম্পানির ২ শতাংশের বেশি এবং একটি কোম্পানির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি কিন্তু ২ শতাংশের কম।
স্বল্প মূলধনীর পতন
দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে থাকা ১০টি কোম্পানির মধ্যে দুটির মূলধন কেবল ৫০ কোটি টাকার বেশি। ৫ থেকে ২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন, এমন কোম্পানির সংখ্যা ৫টি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫.২৪ শতাংশ দর হারিয়েছে রহিমা ফুড। তৃতীয় প্রান্তিক মিলিয়ে ১ টাকা ১৪ পয়সা আয়ের তথ্য দেওয়ার আগে ও পরে শেয়ারদর লাফ দিয়েছিল ২০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটির।
এছাড়া ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিডি অটোকারের দর ৪.৮৪ শতাংশ, ২০ কোটি টাকার কিছু বেশি মূলধনের ওরিয়ন ইনফিউশনের দর ৪.৭৩ শতাংশ, ৩০ কোটি ৬৩ লাখ টাকার কোহিনূর কেমিক্যালসের দর কমেছে ৪.০৭ শতাংশ।
পতনের শীর্ষ দশে আরও ছিল কনফিডেন্স সিমেন্ট, মনোস্পুল পেপার, রূপালী লাইফ, শ্যামপুর সুগার, এডএন টেলিকম ও সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ।
এগুলোর দর ৩.৬৫ শতাংশ থেকে ২.৬৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও সাতটি কোম্পানি ২ শতাংশের বেশি, এবং ১৮টি কোম্পানি এক শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।