নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বিশেষ উদ্যোগে নতুন পরিচালনা পর্ষদের অধীনে প্রাণ ফেরা এরারেল্ড অয়েল তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন একসঙ্গে প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রকাশ করতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
তবে তিন বছরের স্থগিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রান্তিক প্রতিবেদন আলাদা প্রকাশ করা হবে না।
বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর পর গত বছর উৎপাদনে ফেরার পর জাপানে রপ্তানির উদ্যোগ এবং এখন বন্ধ থাকার চার বছরে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের এই উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তিদায়ক খবর।
২০০৯ সালে জামালপুরের সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব শেরপুর শহরের শেরীপাড়ায় গড়ে তোলেন এমারেল্ড অয়েল কারখানা। ২০১১ সালে স্পন্দন-ব্র্যান্ডেড রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন শুরু করে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা তোলে।
২০১৬ সালে এমারেল্ড অয়েল ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা লাভ করে এবং ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ওই বছরই কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। জুনে অর্থবছর শেষ করা কোম্পানিটি ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৯ পয়সা মুনাফার তথ্য প্রকাশ করে।
এরপর বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুদকের মামলায় জেলে যেতে হয় গনিকে। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশের বাইরে চলে যান তিনি। বন্ধ হয়ে যায় স্পন্দনের কারখানা। কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে অনিশ্চয়তায় পড়েন বিনিয়োগকারীরা।
২০২০ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তনের পর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো নতুন করে চালু করতে পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়।
এর মধ্যে এমারেল্ডের দায়িত্ব দেয়া হয় মিনোরি বাংলাদেশ নামে জাপান প্রবাসী এক বাংলাদেশির কোম্পানির কাছে।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্রুড অয়েল উৎপাদন শুরু হলেও গ্যাস কম থাকায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এই ক্রুড অয়েল খুলনা ফিড মেইলে নিয়ে মাছের ও মুরগির খাদ্য তৈরি করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে কারখানার সব যন্ত্রপাতি মেরামত করে তেল উৎপাদন শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়।
২০২২ সালের ২৮ জুন রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্পন্দন রাইস ব্র্যান অয়েলের নতুন করে মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সেদিন এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, তাদের কারখানায় দুটি ইউনিটের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ৩৩০ টন। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে শুধু ১৮০ টনের ইউনিটটি সচল আছে। এই ইউনিটে ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করে ৩৫ টনের মতো অপরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। এখান থেকে দৈনিক পরিশোধিত তেল পাওয়া যায় প্রায় ২৬ টন।
গত ৪ অক্টোবর কোম্পানিটি জানায়, তারা জাপানে রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে। এই লক্ষ্যে দেশটির রাজধানী টোকিওতে একটি শাখা খোলা হয়েছে। গত ২০ অগাস্ট এই শাখা খোলা হয়।
কোম্পানিটি বিনিয়োগ বাড়াতে মিনোরি বাংলাদেশের পক্ষে নতুন শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্তও নিয়েছে। বিএসইসির অনুমোদন পেলে এই শেয়ার ইস্যু করে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ৩০ টাকা ১০ পয়সা। কোম্পানিটিকে উৎপাদনে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়ার আগে শেয়ার মূল্য ছিল ১০ টাকার নিচে। গত বছর এক পর্যায়ে তা ৪৬ টাকা ৬০ পয়সায় উঠে গিয়েছিল।