ব্যবসার তথ্য জানাচ্ছে না, দর বৃদ্ধির শীর্ষে

সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২০-২১ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের পর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না। তার আগের বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করেও বিতরণ করেনি। অথচ ১০ দিনে দর বেড়েছে ২৩ শতাংশ। একদিনই বাড়ল প্রায় ১০ শতাংশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 10:24 AM
Updated : 10 May 2023, 10:24 AM

ঈদের পর পুঁজিবাজারে লেনদেন বৃদ্ধি ও ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়া কোম্পানিগুলোর লেনদেন শুরুর পর লোকসানি বা দুর্বল কোম্পানিগুলোর দরই বাড়ছে বেশি।

সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করা চারটি কোম্পানির তিনটিই লোকসানি। এর মধ্যে একটি কোম্পানি দীর্ঘদিন তার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না। অন্য একটি কোম্পানি বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে গত বছর থেকে সামান্য কিছু আয় দেখাতে পেরেছে।

মৌলভিত্তিক বেশিরভাগ কোম্পানি যেখানে ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে, সেখানে এমন দুর্বল কোম্পানির উত্থানের পেছনে সেগুলোর শেয়ার সংখ্যা কম থাকাকেই কারণ হিসেবে দেখা হয়। কয়েকজন বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনতে থাকলেই সরবরাহ কমে যায়। ফলে বাড়তে থাকে দাম।

এদিন সূচকের দিক দিয়ে পুঁজিবাজার ছিল ইতিবাচক, কিন্তু লেনদেনের দিক দিয়ে ছিল নেতিবাচক।

ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জে সূচক বেড়েছে ৫ পয়েন্ট, কিন্ত লেনদেন কমেছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। সব মিলয়ে হাতবদল হয়েছে ৭২১ কোটি ৭৮ লাখ ১১ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮৩১ কোটি ২৭ লাখস ৯২ হাজার টাকা।

৯৪টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫৬টি। আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ১৯৬টি। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৩৪৬টি কোম্পানির শেয়ার, যা কিছু দিন আগে তিন শর নিচে নেমে এসেছিল।

এই লেনদেনে ব্যাংক, বীমা, টেলিযোগাযোগের মত খাতগুলোর অবদান খুবই কম। অখচ এসব খাতের বেশিরভাগ কোম্পানিই তার শেয়ারদরের তুলনায় এবার আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়েছে।

লেনদেনের শীর্ষে আবার উঠে এসেছে তথ্য প্রযুক্তি খাত। দ্বিতীয় অবস্থানে সম্প্রতি লাফাতে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। তবে এই খাতে সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর শেয়ার কোনো আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের।

‘ঘুম ভেঙে’ চলতি সপ্তাহেই আড়মোড়া ভাঙা বস্ত্র খাত আগের দুই দিনের ধারাবাহিকতায় আগ্রহ ধরে রেখেছে। তবে দুটি কোম্পানির দারুণ প্রান্তিক প্রতিবেদনের পর মঙ্গলবার সিমেন্ট খাতে যে আগ্রহ দেখা গিয়েছিল, তা আবার মিইয়ে গেছে।

ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে যেসব কোম্পানি দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকত, বুধবারও শীর্ষ দশে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেসব কোম্পানির প্রাধান্যই বেশি দেখা গেছে।

তবে নতুন যোগ হয়েছে সিভিও পেট্রো ক্যামিকেলস, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, ইস্টার্ন কেবলস, সিমটেক্স, ফারইস্ট নিটিং।

গত তিন অর্থবছরে লোকসান দিয়ে এবারও তিন প্রান্তিক মিলিয়ে মুনাফার মুখ না দেখা সিভিও ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষে। গত ২৩ অক্টোবর থেকে ফ্লোর প্রাইস ১৬৩ টাকা ৭০ পয়সায় ক্রেতা না পাওয়া কোম্পানিটির দর এক দিনেই বেড়েছে ৯.৬৫ শতাংশ। দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ১৭৯ টাকা ৫০ পয়সা। এক দিনে এর চেয়ে বেশি দর বাড়া সম্ভব ছিল না।

গত বছরের ২৪ অক্টোবরের পর এই প্রথম উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা পাওয়া গেল এ কোম্পানির। সারা দিনে হাতবদল হল ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ১৬৭টি শেয়ার। গত দুই বছরেও কোনো এক দিনে এত বেশি শেয়ার লেনদেন হয়নি এ কোম্পানির।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৯.৬১ শতাংশ। আগের দির দর ছিল ১৫ টাকা ৬০ পয়সা। দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১০ পয়সা। এ কোম্পানির দরও এর চেয়ে বেশি বাড়া সম্ভব ছিল না।

অথচ এই কোম্পানি ২০২০-২১ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের পর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না। তার আগের বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করেও বিতরণ করেনি। উল্টো বিতরণের অসত্য ঘোষণা দিয়ে মামলার আসামি হয়েছেন কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা।

সারা দিনে সুহৃদের ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৮টি শেয়ার হতবদল হয়েছে। গত বছরের ৩১ অগাস্টের পর এটিই কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ লেনদেন।

গত ২৫ এপ্রিল থেকে ১০ কর্মদিবসে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ২৩ শতাংশের বেশি।

মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ২০ দিনে ৪০ টাকার ঘর থেকে ১০০ টাকা ছুঁয়ে দর হারাতে থাকা লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দর বেড়েছে ৯.১৮ শতাংশ। লোকসানি এ কোম্পানির দাম স্থির হয়েছে ৭৬ টাকা ১০ পয়সায়।

তিন মাস ধরে ফ্লোর প্রাইসের আশপাশে লেনদেন হতে থাকা ইস্টার্ন কেবলস টানা দুই দিন সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করল। আগের দিন ১০ শতাংশ বেড়ে শেয়ারদর দুইশ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এদিন সার্কিট ব্রেকার ছিল ৮.৭৫ শতাংশ। বেড়েছেও ততটাই।

এক মাসেরও কম সময়ে ২৬২ টাকা থেকে লাফাতে লাফাতে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে পাঁচশ টাকায় পৌঁছে গেল এপেক্স ফুডসের দর।

দুই বছর আগে ওটিসি মার্কেট থেকে মূল বাজারে ফেরা পেপার প্রসেসিং ও মনোস্পুল পেপারের দরও সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি (৮.৭০ শতাংশ) বেড়েছে।

বস্ত্র খাতের ফারেইস্ট নিটিংয়ের দর ৮ শতাংশের বেশি, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও কোহিনূর কেমিকেলসের দর বেড়েছে দর ৭ শতাংশের বেশি।

শীর্ষ দশের বাইরে আরও দুটি কোম্পানির দর ৬ শতাংশের বেশি চারটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, সাতটির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৯টির দর তিন শতাংশের বেশি, ১৫টি করে কোম্পানির শেয়ার দর যথাক্রমে এক ও দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে।

দরপতনের শীর্ষে এমারেল্ড

এপ্রিলের শুরুতে ৩০ টাকায় লেনদেন হওয়া এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির শেয়ারদর ৭৭ টাকা ছুঁয়ে ফেলার পর প্রথমবার সংশোধন হল।

এক পর্যায়ে শেয়ারদর ১০ শতাংশের কাছাকাছি কমে গেলেও পরে ক্রয়চাপে সেখান থেকে কিছুটা দর উদ্ধার হয়। দিনশেষে ৫.১০ শতাংশ বা ৩ টাকা ৮০ পয়সা কমেছে শেয়ারদর। দিন শেষে দাম স্থির হয় ৭০ টাকা ৬০ পয়সায়। দিনের সর্বনিম্ন দর ছিল ৬৭ টাকা ১০ পয়সা। 

আগের দুই প্রান্তিকের পর তৃতীয় প্রান্তিকেও লোকসানের তথ্য জানানো বিডিথাই অ্যালুমিনিয়াম দর হারিয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.৬৬ শতাংশ। তবে এ কোম্পানিও এক পর্যায়ে সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা ছুঁয়ে ফেলেছিল।

প্রাইম লাইফ, ইনটেক অনলাই, অ্যামবি ফার্মা, এডিএন টেলিক, ইস্টার্ন হাউজিং, ইউনিক হোটেল, বিডিথাই ফুড ও খুলনা পেপার মিলস ছিল দরপতনের শীর্ষ দশে। এসব কোম্পানির দর ২.১২ শতাংশ থেকে ৩.৯৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

আরও তিনটি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ১৬টির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।