এমন দ্রুত দর বাড়াকে ‘অস্বাভাবিক’ মনে করে এর পেছনে অন্য কিছু সন্দেহে ডিএসই যখন কোম্পানিটিকে নোটিস দিয়েছে, তখন বেরিয়ে এসেছে বড় অঙ্কের নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনার খবর।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মতিন পাটোয়ারী বলেন, “মালেক স্পিনিং তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে না জানিয়ে নিয়ম ভেঙ্গেছে।
“নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে তাদের নিয়ম ভাঙার তথ্য পাঠিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“
এর আগে একই বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার আধ ঘন্টার মধ্যে আমাদের জানাতে হবে। সেখানে যদি কোনো আইন ভঙ্গ হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“
মালেক স্পিনিং এর কোম্পানি সচিব সৈয়দ সাইফুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোম্পানির শেয়ারের দাম কেন এভাবে বাড়ছে সেটা আমরা জানি না।
“গতকালকে (মঙ্গলবার) আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা সেটা জানিয়ে দিয়েছি। এখন শেয়ারের দাম কেন এভাবে বাড়ছে, সেটা বলতে পারব না।”
চোখ ধাঁধানো দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই মালেক স্পিনিং কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়।
বুধবার ডিএসইর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনার আগাম ঘোষণা না দেওয়ার বিষয়ে মালেক স্পিনিং জানিয়েছে, পর্ষদ সভার আগে এই বিষয়ে ‘যথাযথ’ কোনো তথ্য ছিল না।
নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারদর সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য (পিএসআই) শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য আগাম ঘোষণা দিতে হয়।
এদিন মালেক স্পিনিংয়ের বড় অঙ্কের নতুন এই বিনিয়োগে যাওয়ার খবর শেয়ারটির দর বাড়ার গতিকে যেন আরও বাড়িয়ে দেয়।
দিনের শুরুতেই এক লাফে দাম ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ৩১ টাকা ৬০ পয়সায় পৌঁছায়। প্রায় পুরোটা সময় এই দরে লেনদেন হলেও আরও বাড়বে এমন আশায় অধিকাংশই শেয়ারটি হাতছাড়া করেননি।
সকালেই দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে ৩১ টাকা ৬০ পয়সায় প্রায় ৫ কোটি ক্রয় আদেশ ছিল। দিন শেষেও শেয়ারটি কিনতে এই দরেই ক্রয় আদেশ ছিল ২ কোটি ৬০ লাখের বেশি শেয়ারের।
দিনভর বিক্রেতার সংখ্যা খুবই কম থাকায় শেয়ারটি এদিন মাত্র ২৯০ বার হাত বদলে কেনাবেচা হয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৩টি।
এই কোম্পানির মোট ১৯ কোটি ৩৬ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ উদোক্তা ও পরিচালকদের হাতে।
চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল মালেক স্পিনিং এর শেয়ারের দাম ছিল ১৩ টাকা ৬০ পয়সা। ১৮ টাকা বেড়ে বুধবার শেয়ারটি কেনাবেচা হয়েছে ৩১ টাকা ৬০ পয়সায়।
এই হিসাবে গত ১ মাস ২৫ দিনে দাম বেড়েছে ১৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
শেয়ারটির লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায় এটির আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স) ৭০ পেরিয়ে গেছে, যা এই শেয়ার কেনাবেচায় সতর্কতার ইঙ্গিত দেয়।
বুধবার ডিএসইর চিঠির জবাবে কোম্পানিটি বিনিয়োগ ও বিআরএমইর বিষয়ে জানিয়েছে, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় উৎপাদন বাড়াতে ২১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
একই সঙ্গে বর্তমান কারখানার রক্ষণাবেক্ষণে ভারসাম্য, আধুনিকীকরণ, পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ-বিএমআরই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে পর্ষদ সভায় বলে ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় স্থাপিত কারখানা চত্বরেই মালেক স্পিনিং নতুন কারখানা করবে। জমি প্রস্তুতের পর কারখানার অবকাঠামো তৈরি এবং মেশিনপত্র বসানো হবে।
স্পিনিং মিলটির বর্তমান সুতা উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ১ কোটি ২৬ লাখ কেজি। তাদের এখন ৬৩ হাজার ৬২৪টি স্পিন্ডলস আছে।
মেরামত এবং নতুন কারখানা স্থাপনের পর স্পিন্ডলসের সংখ্যা হবে ৭৯ হাজার ৪৬৪টি।
সবমিলিয়ে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে ৬০ শতাংশ এবং আয়ও বাড়বে সমপরিমাণ হারে।
এতে মুনাফাও অনেক বাড়বে বলে জানিয়েছে মালেক স্পিনিং। কারণ হিসেবে বলছে, বিএমআরই এবং নতুন কারখানায় উৎপাদনে পণ্যের মান অনেক বাড়বে।
এতে কোম্পানিটি বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে। এতে সব মিলিয়ে মুনাফাও বাড়বে।
নতুন বিনিয়োগের ২১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার মধ্যে কোম্পানির নিজস্ব তহবিল ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাংক এবং অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে।
সর্বশেষ জুন, ২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটি ৩২ কোটি ৬১ লাখ টাকা লোকসান করে।
অন্যদিকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে শেয়ার প্রতি আয়-ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯৮ পয়সা।
মালেক স্পিনিং এর বর্তমান বাজার মূলধন ৫৫৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।