এখন কেউ ‘খেলতে’ এলেই ধরা পড়বে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজারে কারসাজি করে এখন আর কেউ পার পাবে না বলে দাবি করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2021, 11:33 AM
Updated : 16 Jan 2021, 01:37 PM

তিনি বলেছেন, “পুঁজিবাজারে কোনো লোক যদি দুষ্টামি করতে আসে, তার কাছে কত টাকা থাকতে পারে? শত কোটি, হাজার কোটি? আমরা তার ১০ গুণ ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছি আইসিবিকে।

“যাতে কেউ খেলেতে এসে কোনো সুবিধা না করতে পারে। কেউ খেলতে চাইলে আমরা তাকে ধরে ফেলব তখনই।”

শনিবার সকালে পুঁজিবাজার নিয়ে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

‘ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস- আইডিইএ’ আয়োজিত এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উৎস হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

সাবেক একদল সচিবদের গড়া প্লাটফর্ম আইডিইএ’র প্রথম এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম।

সবার আলোচনা শুনে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, “১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে যে ধস হয়েছে, সে সময় আজকের মতো পুঁজিবাজার নিয়ে সবার জ্ঞান ছিল না। ১৯৯৬ সালে মানুষ হাতে কাগজ নিয়ে মতিঝিলে শেয়ার লেনদেন করত। কিন্তু এখন কিন্তু এরকম নেই। এখন এগুলো সব চলে এসেছে সিসিবিএল, সিডিবিএল এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি প্লাটফর্মের মধ্যে। আমাদের সার্ভিলেন্সের সফটওয়্যার এখন অনেক শক্তিশালী।”

তিনি বলেন, “আমরা কারসাজি থামানোর কাজ করে যাচ্ছি। প্রথম প্রথম আমরা বিষয়গুলো গণমাধ্যমে জানাতাম। তাতে দেখলাম একটু আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

“আমরা এখন যেটা করছি, যারা সিরিয়াল ট্রেডিং করে বা চাতুরি করতে চায় আমরা এখন তাদের ফোন করে কমিশনে ডেকে নিয়ে আসি। তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে এই কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করছি।”

তিনি বলেন, “সার্ভিলেন্স নিয়ে আপনাদেরকে এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা সুইডেনের এখন সবচেয়ে লেটেস্ট যে সার্ভিলেন্সের সফটওয়্যার, সেটা ব্যবহার করছি।

“যে কেউ কোনো কিছু করলেই আমরা সহজেই সেটা ধরে ফেলতে পারি।”

কোথা থেকে আসছে আইসিবির টাকা

ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) শক্তিশালী করার উদ্যোগের কথা জানান শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “আইসিবি শক্তিশালী করার জন্য আমরা ৫ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বা ব্যাংকিং খাতের যদি বাড়তি টাকা থাকে, তাহলে এর সঠিক ব্যবহার করা যাবে।

“এছাড়া আমরা হিসাব করে দেখেছি, মানুষকে দেওয়া হয়নি এরকম লভ্যাংশ এবং শেয়ার পড়ে আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার। সেসব এতদিন বিভিন্ন যায়গায় পড়ে ছিল। আমরা সবগুলোকে এখন মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে আইসিবির কাছে নিয়ে আসছি।”

“এই ফান্ডটি পার্পেচুয়াল হবে। যে কেউ যখন তার সঠিক কাগজপত্র নিয়ে আসতে পারবেন, তিনি তার টাকা নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু যতদিন এই ফান্ড আইসিবির কাছে থাকবে, এটা আমাদের মার্কেটকে স্ট্যাবল করার জন্য কাজ করবে,” বলেন তিনি।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আইসিবি যেন এই তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য ‘ফাইনানসিয়াল টুলস’ও তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “এছাড়া মার্জিন ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কম সুদে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি।”

এই ‘মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

নানা সুপারিশ

অনুষ্ঠানের আলোচকরা পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে নানা সুপারিশ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “আমাদের পুঁজিবাজারকে আরও অনেক দূরে যেতে হবে। সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে খুব ইতিবাচক। বিএসইসি ভাল কাজ করছে।

“পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে নতুন ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। আর পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করতে হলে বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে।” 

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে পুঁজিবাজারে টেনে আনতে হবে। পুঁজিবাজারের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে।  

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান।

তিনি বলেন,পুঁজিবাজারে কারসাজিকারীদের ধরার জন্য তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। তাদের বড় ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একটি মার্জারে এবং একুইজেশন পলিসি করতে হবে।

সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বাঁচানোর নীতি নিয়ে চলার পরামর্শ দেন আরিফ খান। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঠিক তথ্য পাওয়া নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। বড় এবং ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে হবে। একটি গতিশীল বন্ড মার্কেট করতে হবে।