এর অংশ হিসেবে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তর বন্ধ করা, লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বৃহস্পতিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সভাপতিত্বে কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
যেসব কোম্পানি বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন বা বার্ষিক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবসয়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকে, অথবা পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, সেসব কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়।
দুর্বল মৌলভিত্তির এসব কোম্পানির শেয়ারকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনা করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সুশাসন আনতে এ ধরনের কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ধারণ করা শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিএসইসি।
‘জেড’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি, তাদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে সভা করতে হবে। পাশাপাশি সব ধরনের শেয়ার হোল্ডার মিটিংয়ে অনলাইন ভোটিংয়ের সুবিধা রাখতে বলা হয়েছে।
যেসব কোম্পানি দুই বছর বা তার বেশি সময় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে, তাদের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে সাজাতে হবে ৪৫ দিনের মধ্যে।
তা না করলে ওই পরিচালকরা অন্য কোনো কোম্পানির পারচালক পদে থাকতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে কমিশন এসব কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক ও পর্যবেক্ষক বসিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করবে।
আর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে সাজানোর পরও যদি কোনো কোম্পানি চার বছরের মধ্যে ভালো করতে না পারে, তাহলে ওই কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে কমিশন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এসব সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ‘বড় ভূমিকা রাখবে’ বলে আশা প্রকাশ করেছেন এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ।
একই ধরনের মত প্রকাশ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ তখনই আস্থা পায় যখন দেখে যে সমস্যা হলে দেখার কেউ আছে। আগে যে অবস্থা ছিল, কোনো কোম্পানি একবার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে গেলে দেখার কেউ ছিল না। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ওই ঘাটতিটা এখন পূরণ করা হল।”
বিনিয়োগকারীদের টাকা যেন আটকে না থাকে, সেজন্য ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তির সময় ১০ দিন থেকে কমিয়ে ৪ দিন করে দিয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
আগে এই শ্রেণির শেয়ার কিনলে বিক্রি করতে পরের নয় কার্যদিবস অপেক্ষা করতে হত। নতুন নিয়মে রোববার কেউ ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার কিনলে বুধবারই সেটা বিক্রি করতে পারবেন।
বিএসইসির এ সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়বে বলে মনে করছেন মোহাম্মদ এ হাফিজ।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সভায় ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে কিছুক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিলও করা হয়েছে।
নতুন নিয়মে কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হলে সেই কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যেতে হবে। আগে এক বছর লভ্যাংশ না দিলেই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হত।
নতুন নিয়মে কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর বার্ষিক সাধারণ সভা করতে ব্যার্থ হলে ‘জেড’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হবে। এতদিন এক বছর বার্ষিক সাধারণ করতে না পারলেই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে চলে যেত একটি কোম্পানি।
এছাড়া ৬ মাস কোনো কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকলে অথবা পরপর দুই বছর লোকসান দেখালে বা নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক থাকলে ওই কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হবে।
অথবা কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান পরিশোধিত মূলধন থেকে বেশি হলেও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যেতে হবে।
এর বাইরে কোনো আইন ভঙ্গের জন্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমতি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ অন্য ক্যাটাগরির কোম্পানিকেও ‘জেড’ শ্রেণিতে পাঠাতে পারে।