ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে খায়রুলের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা: বিএসইসি

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও লুটপাটের যে অভিযোগ গণমাধ্যমের খবরে এসেছে, তা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিএসইসি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2019, 02:32 PM
Updated : 22 August 2019, 02:52 PM

খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তে নামার খবরের ‘প্রতিবাদ‘ জানিয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংস্থার ভাবমূর্তি ‘ক্ষুন্ণ করার উদ্দেশ্যে’ খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে এই ‘অপতৎপরতা’ চলছে।

খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশন একজন অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে, যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়ে গত ৭ অগাস্ট চিঠি দেন কমিশনের পরিচালক (মানি লন্ডারিং) ও বিকল্প পরিচালক (গোয়েন্দা ইউনিট) গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী।

বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশের আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বিএসইসি চেয়ারম্যান খায়রুলকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

সকালে বিএসইসির মুখপাত্র সাইফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার ‘কিছু জানা নেই’। 

সন্ধ্যায় ২১ অগাস্ট ও ২২ অগাস্ট সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত সংবাদের ‘প্রতিবাদ’ আসে সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে বলা হয়, “এম খায়রুল হোসেন একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কমিশন তীব্র প্রতিবাদ জানায়।”

গণমাধ্যম এই সংবাদ প্রকাশ করে ‘দায়িত্বশীলতার ব্যত্যয় ঘটিয়েছে’ বলে দাবি করেন বিএসইসি মুখপাত্র; যদিও দুদকের চিঠির ভিত্তিতেই ওই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে এবং তা নিয়ে বিএসইসির প্রতিক্রিয়াও নেওয়া হয়েছে।

এম খায়রুল হোসেন, ফাইল ছবি

খায়রুলকে নিষ্কলুষ দাবি করলেও দুদকে অভিযোগ পড়ার কথা দৃশ্যত স্বীকার করে নিয়ে তার পেছনে প্রভাবশালী কেউ থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সাইফুর বলেন, “বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহকে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়। এ ধরনের এক বা একাধিক সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কোনো ভিত্তিহীন অভিযোগ করলেই তা প্রমাণিত বলে ধরে নেওয়া যায় না।”

খায়রুলের বিরুদ্ধে আইপিওর অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগের কথা গণমাধ্যমে এসেছে, তা ঘটার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন বিএসইসি মুখপাত্র।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “চেয়ারম্যান একাকী কোনো আপিও অনুমোদন দেন না। কমিশন সভায় সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেওয়া হয়।

“কোম্পানিসমূহের আইপিওর মাধ্যমে যে অর্থ উত্তোলন করে থাকে, তার প্রতিটি টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে, তা প্রসপেক্টাসে প্রকাশ প্রকাশ করা হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে ওই অরথ ব্যবহারের প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে হয়। কাজেই আইপিওর অর্থ লুটপাটের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।”

সাইফুর বলেন, “কোনো আইপিওতে যদি বিনিয়োগকারীদের আবেদন ৬৫ শতাংশের কম হয়, তবে আইপিওটি বাতিল হয়ে যায়। আর ৬৫ শতাংশের উপরে কিন্তু ১০০ শতাংশের নিচে হলে অবলেখক প্রতিষ্ঠানসমূহ অবশিষ্ট অংশ ক্রয় করে।  

“তবে গত ১০ বছরের আইপিও আবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তা ৭৮ গুণ (৭৮০০ শতাংশ) পর্যন্ত অধিক হারে জমা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো আইপিও লেনদেন শুরুর সময় ইস্যু মূল্যের নিম্নে ছিল না, যেখানে অন্যান্য দেশে  অনেক কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরুর দিনই ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যায়।”

সেকেন্ডারি মার্কেটে কোন শেয়ারের কী দর হবে, তা বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে ঠিক হয় উল্লেখ করে সাইফুর বলেন, সেখানে কমিশনের কিছুই করার নেই।

নিয়ম অনুযায়ী, বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের কারও বিও একাউন্ট নেই এবং কোনো কোম্পানিতে তাদের কারও কোনো বিনিয়োগও নেই বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে কমিশন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কমিশনের চেয়ারম্যান, কমিশনার বা কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থ বা কোন সুবিধার ভিত্তিতে কোনো কাজ করেছে, এ ধরনের কোনো অভিযোগ কখনোই উত্থাপিত হয় নাই। কারও এরূপ কোনো অভিযোগ কমিশনে দাখিল করলে কমিশন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে অঙ্গীকারবদ্ধ।”