দরপতনের ধারায় পুঁজিবাজার

নির্বাচনের মওসুমে দেশের পুঁজিবাজারে যে চাঙ্গাভাব দেখা গিয়েছিল, তা উবে গিয়ে বইতে শুরু করেছে মন্দার হওয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2019, 11:22 AM
Updated : 24 March 2019, 11:22 AM

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৮ পয়েন্ট কমেছে । গত সপ্তাহের শেষ দিন এই সূচক পড়েছিল ৩০ পয়েন্টের বেশি।

চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২০ পয়েন্টের বেশি। বৃহস্পতিবার কমেছিল ৫৮ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহে চারদিন লেনদেন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। তারমধ্যে তিন দিনই কমেছিল। পুরো সপ্তাহে সব মিলিয়ে ডিএসইএক্স ৮৬ পয়েন্ট কমেছিল।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসইতে লেনদেন কমে ৩৫৪ কোটি ৩৫  লাখ টাকায় নেমে এসেছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই বাজারে  ৩৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

রোববার সিএসইতে ১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অংক ছিল ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

জাতীয় নির্বাচনের আগে ১৭ ডিসেম্বর থেকে বাজারে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যায়। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় এক ধরনের আশার সঞ্চার হয়েছিল বাজারে। বেশ চাঙ্গাভাবে ফিরে আসে বাজার। লেনদেন বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।

কিন্তু ৩০ জানুয়ারি জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর থেকেই বাজারে মন্দা চলছে। লেনদেন কমতে কমতে এখন ৩৫০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে।

২৪ জানুয়ারি ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্ট। রোববার তা ৫ হাজার ৫১২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। অর্থাৎ দুই মাসে ডিএসইক্স ৪৫০ পয়েন্ট হারিয়েছে।

দরপতনে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। নতুন সরকারকে ঘিরে বাজারে আস্থা ফিরে আসার যে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল তা আর এখন নেই।

আড়াই বছর পর ছোট বিনিয়োগকারী রাস্তায় নেমেছেন। গত সপ্তাহের দুই দিন তারা মতিঝিলে ডিএসইর ভভনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

মারুফ আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে বলেন, “গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে দরপতন হচ্ছে। আমাদের অনেক টাকা চলে গেছে। আমরা বিপদে পরে গেছি।”

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “দরপতনের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না আমরা।”

বাজার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হজার ৩০০ পয়েন্ট। এক মাসে সেই সূচক ৬৫০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯৫০ হয়েছিল।

“সেখান থেকে সূচক কমছেই। বেশি বেশি বোনাস শেয়ার আসছে বাজারে; প্লেসমেন্ট শেয়ারও আসছে। মোট কথা, শেয়ারের অনেক যোগান; কিন্ত চাহিদা নেই। তাই সূচক কমছে।”

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে রোববার লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৪৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৪ টির, কমেছে ২০৬ টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩ টির দর।

ডিএসইএক্স বা প্রধান সূচক ৫৮ দশমিক ০৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫১২ দশমিক ০৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ২৮১ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ২০ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে।

সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২০ দশমিক ০১ পয়েন্ট; সূচক হয়েছে ১৬ হাজার ৮৮৮ পয়েন্ট।

লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৪৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬১ টির, কমেছে ১৫০টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির দর।