সেই সঙ্গে শেয়ারে রূপান্তরে অনাগ্রহীদের বন্ডের অভিহিত মূল্য একহাজার টাকা পরিশোধের পর বন্ডের সমাপ্তি ঘটবে। উভয় ক্ষেত্রেই বন্ডপ্রতি সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে সাত বছরমেয়াদী ব্র্যাক ব্যাংকের বন্ড ছাড়ার সময় এর মোট আকার ছিল ৩০০ কোটি টাকা। তখনকার ষোষণা অনুযায়ী, তিন ধাপে মোট ২৫ শতাংশ বন্ড শেয়ারের রূপান্তরিত হওয়ার কথা। সে হিসেবে ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ বন্ড এর মধ্যেই শেয়ারে রূপান্তরিত হয়েছে।
বন্ডধারীরা চাইলে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাকি ১০ শতাংশ বা ৩০ কোটি টাকার বন্ড শেয়ারে রূপান্তরের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বৃহস্পতিবার থেকে এই আবেদনের সময় শুরু হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে কেউ আবেদন না করলে তারা শেয়ারে রূপান্তরে অনিচ্ছুক বলে ধরে নেওয়া হবে। শর্তানুযায়ী বন্ড পরিণত হওয়ার দিনের (আগামী ১৮ জানুয়ারি) মধ্যে তাদের পাওনা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে জানিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
ঘোষণা অনুযায়ী, ১০০০ হাজার টাকার অভিহিত মূল্যের বন্ডের ১০ শতাংশ বা ১০০ টাকা মূল্যর শেয়ার রূপান্তরে আগ্রহী বন্ডধারীদের দেওয়া হবে। সে হিসেবে ১০০ টাকাকে ৫৩ টাকা ৯০ পয়সা দিয়ে ভাগ করে প্রতিটি বন্ডের বিপরীতে ১.৮৫৫টি শেয়ার পাবেন বন্ডধারীরা।
বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ১০৮ টাকা ১০ পয়সা; বন্ডের সর্বশেষ দর ছিল একহাজার ৪৮ টাকা।
ধরা যাক, বৃহস্পতিবার কোনো বন্ডধারী শেয়ারে রূপান্তরের জন্য আবেদন করেছেন। তাহলে ১৮ জানুয়ারি বন্ডের মেয়াদ শেষ হলে তিনি পাচ্ছেন একহাজার ২৫ টাকা (৯০০ টাকা+ সুদ ১২৫ টাকা) ও ২০০ টাকা ৫৩ পয়সা (১০৮.১০ টাকা *১.৮৫৫ শেয়ার)।
অর্থাৎ বন্ড শেয়ারে রূপান্তর করে একহাজার ২২৫ টাকা ৫৩ পয়সা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারী। তবে এই হিসাব রূপান্তরের দিনের দরের উপর নির্ভর করবে। আর বন্ডধারী শেয়ারে রূপান্তর না করলে একহাজার ১২৫ টাকা (অভিহিত মূল্য+১২% সুদ) পাচ্ছেন।
সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবারের দর ভিত্তি ধরলে বিনিয়োগকারী বন্ড শেয়ারে রূপান্তর করে ১০০ টাকা ৫৩ পয়সা বেশি পাচ্ছেন।
বন্ডের পুরো ১০ শতাংশই বা ৩০ কোটি টাকা শেয়ারে রূপান্তরিত হবে বলে ধরে নিলে তাহলে নতুন ৫৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬২ শেয়ার যোগ হয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের মোট শেয়ারসংখ্যা দাঁড়াবে ৮৬ কোটি ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৬টিতে।
২০০৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর গত কয়েক বছরে বেশ ভাল মুনাফা দেখাচ্ছে। ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে প্রায় ৬ গুণের বেশি মুনাফা বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের; কোম্পানিটির করপরবর্তী মুনাফা ৬৭ কোটি থেকে বেড়ে ৩৮৯ কোটি টাকা হয়েছে।
২০১৭ সালের প্রথম নয় মাসে মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ৩৭৭ কোটি বা ২০১৬ সালের প্রায় সমান মুনাফা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মুনাফা পরিমাণ বিবেচনায় নিলে ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংক খাতের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের অবস্থান চতুর্থ। ব্র্যাক ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ১ হজার ২০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৮৫৫ কোটি।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ব্র্যাক ব্যাংক; ২০১২ সালের ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে হয়েছে ৩০ শতাংশ ।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্র্যাক ব্যাংকের ৪১ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার আছে বিদেশিদের হাতে ও ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে। বাকি ৫২ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার পরিচালক ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।
(সংশোধনী: প্রতিবেদনে ভুলক্রমে বন্ড শেয়ারে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সুদ যোগ করা হয়নি। সেটি যোগ করে শিরোনামসহ প্রতিবেদন সংশোধন করা হয়েছে।)