বাজেট ঘোষণার দিন পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব

সূচকের অবস্থান এখন ৬ হাজার ৩৫৫ পয়েন্ট, যা গত ৮ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 09:46 AM
Updated : 1 June 2023, 09:46 AM

লেনদেন খানিকটা কমলেও সংশোধন কাটিয়ে বীমা খাতের নিজেকে ফিরে পাওয়া, সেই সঙ্গে সিমেন্ট খাতের উত্থানে আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দিন পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব দেখা গেল।

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার দরপতন হওয়া কোম্পানির চেয়ে দর বেড়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা বেশি। আর এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্সে যোগ হয়েছে ১৫ পয়েন্ট। সূচকের অবস্থান এখন ৬ হাজার ৩৫৫ পয়েন্ট, যা গত ৮ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্ট।

প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে নেতিবাচক কিছু নেই, এই বিষয়টি গণমাধ্যমের সুবাদে আগেই প্রকাশ পেয়েছে। ফলে প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার দিন পুঁজিবাজারে এক ধরনের ‘উৎকণ্ঠা’ দেখা দিলেও এবার তা ছিল না।

সকাল থেকেই সূচক বেড়ে লেনদেন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত চালু থাকে তা। শেষ পর্যন্ত ১০৫টি কোম্পানির দর বেড়ে, ৭১টির কমে এবং ১৮৮টি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে।

লেনদেন অবশ্য খানিকটা কমেছে। সারাদিনে হাতবদল হয়েছে ৯৯৭ কোটি ৮৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন ছিল এক হাজার দুইশ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই।

লেনদেনে যথারীতি প্রাধান্য বীমা খাতের। তবে এই খাতের দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে দর সংশোধন কাটিয়ে ফিরে আসার চেষ্টায় থাকা সাধারণ বীমার তুলনায় আড়াই গুণ বেশি লেনদেন হয়েছে জীবন বীমা খাতে।

খাদ্য খাত ছিল লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে। তৃতীয় স্থানে ছিল তথ্য প্রযুক্তি। একেক দিন একেক খাতের আড়মোড়া ভাঙার প্রবণতায় এদিন সিমেন্ট খাতে বেড়েছে লেনদেন। সপ্তম স্থানে উঠে আসা এই খাতে লেনেদেন ছাড়িয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। 

বীমার ফিরে আসা

গত দুই সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারে তুমুল আলোচনায় থাকা এই খাতটির সাধারণ বীমার শেয়ারে চলতি সপ্তাহে দর সংশোধন হয়েছে।

আগের দিন দল বেঁধে দর হারানো কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগ অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর জীবন বীমা খাত দিয়েছে লাফ।

জীবন বীমার ১৪টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১৬৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। দর বেড়েছে ১৩টির, একটি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে। দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশের পাঁচটিই এই খাতের কোম্পানি।

এর মধ্যে দুটি কোম্পানির দর ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই, দুটির দর ৮ শতাংশের বেশি দুটির ৭ শতাংশের বেশি, একটির ৬ শতাংশের বেশি, দুটি করে কোম্পানির দর যথাক্রমে ৫ ও ৪ শতাংশের বেশি, একটি কোম্পানির বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

সাধারণ বীমার ৪৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির, আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে তিনটির আর ১০টি কোম্পানির দর কমেছে। ৭৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এসব কোম্পানির।

এর মধ্যে দুটি কোম্পানির দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি; একটির চার শতাংশের বেশি, তিনটির ৩ শতাংশের বেশি, পাঁচটির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।

সিমেন্ট খাতের লাফ

এই খাতের ৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৬টির। আর সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা ১০টি কোম্পানির মধ্যে তিনটিই এই খাতের। এগুলোর মধ্যে দুটি হলো বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ ও লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট। তৃতীয়টি হলো প্রিমিয়ার সিমেন্ট।

এর মধ্যে মেঘনা সিমেন্টের দর ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই, হাইডেলবার্গের দর ৮.৬৪ শতাংশ, লোকসানি আরামিট সিমেন্টের দর ৫ শতাংশের বেশি, প্রিমিয়ার সিমেন্টের দর ৪ শতাংশের বেশি, লাফার্জের দর ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

সিমেন্টের উত্থানের দিন ব্যাংক, আর্থিক, প্রকৌশল, বস্ত্র খাতের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা কাটার কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি। চলতি সপ্তাহে হঠাৎ লাফ দিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত আবার ক্রেতাশূন্য অবস্থার দিকে যাচ্ছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা

সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানি গলো মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা সিমেন্ট, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোড, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, বিচ হ্যাচারি, প্রগতি লাইফ, আরএসআরএম স্টিল এবং প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

পতনের শীর্ষ ১০

এই তালিকার শীর্ষে ছিল লোকসানি জুট স্পিনার্স, যেটি টানা দুই দিন সর্বোচ্চ সীমায় দর হারিয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল আরেক লোকসানি ইমাম বাটন।

অন্য কোম্পানিগুলো হলো ন্যাশনাল টি কোম্পানি, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, জিলবাংলা সুগার মিলস, সিনোবাংলা, মাইডাস ফাইন্যান্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড, মেঘনা মিল্ক ও জেনেক্স ইনফোসিস।