এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গত কয়েক দিনের লাগাতার পতনের ধাক্কা সামলে নিল পুঁজিবাজার।
Published : 01 Aug 2024, 06:29 PM
এক সপ্তাহ পর পূর্ণ দিবসে লেনদেন ফেরার দ্বিতীয় দিনেও উত্থানের ধারা বজায় রেখে লেনদেন শেষে হয়েছে দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই); এদিন সূচক বেড়েছে ৫৩ পয়েন্ট।
এতে করে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গত কয়েক দিনের লাগাতার পতনের ধাক্কা সামলে নিল পুঁজিবাজার।
দিন শেষে সূচকের সঙ্গে লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আগের দিনের চেয়ে সূচক ৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৩৩ পয়েন্টে উঠেছে। আগের দিন সূচক বেড়েছিল প্রায় ১১ পয়েন্ট।
এদিন বেলা শেষে শেয়ার কেনাবেচা হয় ৫৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। এর আগে সবশেষ গত ১৬ জুলাই ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৫৬৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার। এর পর কোনো দিন লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়ায়নি। মাঝখানে গত ২৫ জুলাই সর্বোচ্চ ৪৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে সহিংসতায় প্রাণহাণির মধ্যে কারফিউ শুরুর পর পূর্ণদিবস অফিস চালুর দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনে আসা ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ২৭৮টির, কমেছে ৬০টির ও আগের দরে লেনদেন হয় ৬০টি।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ জুলাই সংঘাতে প্রাণহানির পর ২১ থেকে ২৩ জুলাই কারফিউয়ের মধ্যে লেনদেন বন্ধ ছিল পুঁজিবাজারে।
শেষ দেড় ঘণ্টায় বদলে যায় বাজার
সকাল থেকে শুরু হওয়া হালকা বৃষ্টিতে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম, যার প্রমাণ মেলে শেয়ার হাতবদলের চিত্র দেখে। এর প্রভাবে গত কয়েকদিনের চেয়ে প্রথম ঘণ্টায় শেয়ার লেনদেন কমে ডিএসইতে।
এদিন সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হলে প্রথম ঘণ্টায় শেষে শেয়ার হাতবদল হয় ১৩৭ কোটি টাকার। আগের দিন এসময়ে লেনেদন হয় ১৪৮ কোটি টাকার। সূচকের ওঠানামার মধ্য দিয়ে প্রথম ঘণ্টা শেষে সূচক খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। প্রথম ১০ মিনিটে সূচকে যোগ হয়েছিল ৪১ পয়েন্ট। পরে বিক্রির চাপ বাড়তে শুরু করলে চলতে থাকে সূচক সমন্বয়। বেলা ১১টায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চলে যায় ৫ হাজার ২৮৫ পয়েন্টে। এতে এক ঘণ্টায় সূচকে যোগ হয় ৫ পয়েন্ট, আগের দিনে লেনদেন শেষ করেছিল ৫ হাজার ২৮০ পয়েন্টে।
এখান থেকে প্রথম চেষ্টায় ক্রয় চাপ দেখা দিলে বেলা ১২টায় সূচকে আরও ৯ পয়েন্ট যোগ হলে তা ৫ হাজার ২৯৪ পয়েন্টে ওঠে।
এরইমধ্যে বিক্রির চাপ বাড়লে পরের এক ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা ১টায় সূচক কমে যায় ৭ পয়েন্ট। পুনরায় শেয়ার কেনার পরিমাণ বাড়লে দ্রুত বাড়তে থাকে সূচক ও লেনদেন। এতে পরের দেড় ঘণ্টায় সূচকে আরও ৪৬ পয়েন্ট যোগ হয়ে লেনদেন শেষ হয়।
প্রধান সূচকের বড় উত্থানে ডিএসইর অন্য দুই সূচকও এগিয়ে যায় আগের দিনের চেয়ে বেশি। আগের দিনের চেয়ে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬৫ পয়েন্ট এবং ডিএস৩০ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট এগিয়ে ১ হাজার ৯০০ পয়েন্টে লেনদেন শেষ করে।
ডিএসইর পরিচালক শরিফ আনোয়ার হোসেন মনে করছেন, বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। লেনদেন বাড়াটাও ভালো দিক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, পতনের যে টান শুরু হয়েছিল অনেকেই ভয় পেয়েছিলেন। পরিস্থিতি ভালো হলে বাজারও ভালো হবে।
এগিয়ে এসেছে ওষুধ ও রসায়ন খাত
এক মাস ধরে ডিএসইর মোট লেনদেন বাড়াতে একক খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে চলছে ওষুধ ও রসায়ন খাত।
এদিন শেষ বেলার লেনদেন ও সূচকের দর বাড়াতে ভূমিকা রাখায় মোট লেনদেনের ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ হয় এ খাতের। আগের দিনও ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ অবদান রেখেছিল।
গত এক মাসের বেশি সময় লেনদেনে শীর্ষ অবস্থান করে আসছে খাতটি। মাঝে একদিন শুধু দ্বিতীয় অবস্থানে নেমেছিল ব্যাংক খাত এগিয়ে আসায়।
খাতটির মোট ৩৪টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়ে শেয়ার বড়েছে ২৭টির ও কমেছে মাত্র ৬টির। লেনদেনে এরপরই প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অব্স্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত।
এরপরই ছিল ব্যাংক খাতের শেয়ার। আগের দিনের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আসায় এ খাতের ৩৬টির মধ্যে দর বাড়ে ১০টির ও কমে যায় ১৫টির। শেয়ারদর বৃদ্ধিতে বস্ত্রখাতের ৭২ শতাংশ কোম্পানির দরও এগিয়ে যায় আগের দিনের চেয়ে।
দরবাড়ার সর্বোচ্চ সীমা বা সার্কিট ব্রেকারে ১০ শতাংশ ছুয়ে শেয়ার দর বৃদ্ধি পায় ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। আগের দিনের চেয়ে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার দর বেড়ে সবশেষ লেনদেন হয় ৫১ টাকায়।
এরপর ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দর বেড়েছে এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের। ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ দর বেড়েছে গত কয়েক দিন ধরে দর বাড়ার শীর্ষে থাকা নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি টেকনো ড্রাগসের।
অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ দর হারানোর ‘সার্কিট’ ব্রেকারের তালিকায় শীর্ষে ছিল প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট ফাইন্যন্স ও দুলামিয়া কটন।