দাম বৃদ্ধির সুফল পেল না রেকিট বেনকিজার, লভ্যাংশে ‘ধস’

গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় করার পর বিনিয়োগকারীদের জন্য চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ কোম্পানি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2023, 03:41 PM
Updated : 16 Feb 2023, 03:41 PM

ইউক্রেন যুদ্ধের বছরে দেশে টয়লেট্রিজ পণ্যের দামে লাফ দিলেও এসব পণ্য বাজারজাতকারী বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজারের আয় কমে গেছে।

গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় করার পর বিনিয়োগকারীদের জন্য চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি।

বৃহস্পতিবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ৯৮০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা পাবেন শেয়ার প্রতি ৯৮ টাকা করে।

আগের বছর এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার ৬৫০ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ১৬৫ টাকা করে লভ্যাংশ পেয়েছিলেন।

এবার লভ্যাংশ কমানোর সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে আয়ে পতন। সদ্য সমাপ্ত বছরে এ কোম্পানি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১৩৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগের বছর শেয়ার প্রতি এই আয় ছিল ১৭১ টাকা ৩ পয়সা। শেয়ারে আয় কমেছে ৩১ টাকা ৫৩ পয়সা বা ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এবারের আয় ২০২০ সালের চেয়েও কম। সে বছর শেয়ার প্রতি ১৫৬ টাকা ৩৮ পয়সা আয় করে ১৪০ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছিল রেকিট বেনকিজার।

২০১৯ সালে আয় ছিল এবারের চেয়ে কিছুটা কম। তবে বিনিয়োগকারীরা সে বছর প্রস্তাবিত লভ্যাংশের চেয় বেশি পেয়েছেন।সে বছর শেয়ার প্রতি ১৩১ টাকা ৬ পয়সা আয় করে রেকিট বেনকিজার ১২৫ টাকা লভ্যাশ দিয়েছিল।

এ কোম্পানি ডেটল, মরটিন, হারপিক, ভ্যানিশ, লাইজল ও ভিটসহ নানা গৃহস্থালী পণ্য বাজারজাত করে, যেগুলোর দাম গত এক বছরে অনেকটাই বেড়েছে। তবে দাম বৃদ্ধির সুফল যে কোম্পানির ঘরে যাচ্ছে না, তার প্রমাণ উঠে এল আর্থিক প্রতিবেদনে।

৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ৪৭ লাখ ২৫ হাজার। এবার কোম্পানির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৬৫ কোটি ৯১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।

আগের বছর এই মুনাফা ছিল ৮০ কোটি ৮১ লাখ ১৬ হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ এবার আয় কমেছে ১৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭৯ হাজার ২৫০ টাকা বা ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

আয় কমার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব নাজমুল আরেফিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না।”

কেবল আয় নয়, টাকার হিসেবে সম্পদমূল্যও হারিয়েছে রেকিট। গত ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭৬ টাকা ৮০ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ২০০ টাকা ৫৬ পয়সা।

যাদের বিও হিসাবে আগামী ১৩ মার্চ শেয়ার থাকবে, তারা এই লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। অর্থাৎ লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট থাকবে সেদিন।

এই লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে বার্ষিক সাধারণ সভা বা ইজিএম ডাকা হয়েছে আগামী ৩০ মার্চ।

শক্তিশালী মৌলভিত্তির এই কোম্পানির বর্তমান শেয়ারদর ৪ হাজার ৭৬০ টাকা ৭০ পয়সা। এটাই দেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে দামি শেয়ার।

এই দর কোম্পানিটির বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে। লভ্যাংশ ঘোষণার দিন কেবল ৪১৪টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। গত ৩ মাসের মধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৫৪৭টি শেয়ার লেনদেনই সর্বোচ্চ।

গত এক বছরে সর্বোচ্চ দর ছিল ৬ হাজার ৪০ টাকা। আর সর্বনিম্ন দর ৪ হাজার ৫৬৫ টাকা ৭০ পয়সা।