পুঁজিবাজার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, এটা কেউ বোঝেনি: আমীর খসরু

বিএসইসি প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, “বিগত দিনে যা হয়েছে, বিএসইসি কমিশন হিসেবে নয় বরং রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করেছে।”

ডিবিএ আয়োজিত ‘দ্য কারেন্ট স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলেও কেউই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ে এক সেমিনারে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী পুঁজিবাজার লুটপাটকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করেছেন।

রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ‘দ্য কারেন্ট স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনার আয়োজন করে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিবিএ। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

আলোচনায় অংম নিয়ে আমীর খসরু বলেন, “মানি মার্কেটের সমস্যার কারণে ক্যাপিটাল মার্কেটে প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকের তারল্য সংকটে এ সমস্যা হয়েছে।

“যারা পুঁজিবাজার লুটপাট করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে তারাই ঘুরেফিরে আবার পুঁজিবাজারে এসব কর্মকাণ্ড চালাবে। কারণ দিন শেষে টাকা কথা বলে।”

“তাদের লুটপাটের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেছে, অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনতে ডিবিএকেও ভূমিকা রাখতে হবে,” বলেন এই বিএনপি নেতা।

পুঁজিবাজারকে অর্থনীতি থেকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গত ৪-৫ বছরে আমরা দেখেছি ম্যাসিভ টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা রিপেমেন্ট নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।”

“স্টক মার্কেট যে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, এটা কেউ বোঝেনি। অর্থনীতি চালাতে স্টক মার্কেট যে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে সেটা আমরা ধারণ করতে পারিনি। আমরা দেখেছি, গত ১৫ বছর কীভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে স্টক মার্কেটকে ব্যবহার করা হয়েছে।

আমীর খসরু বলেন, “প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে চলবে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো তা দেখবে যথাযথ হচ্ছে কি না। ওয়াচের কাজটি হয়নি। তারা দেখেনি, এজন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে পারিবারিক ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। দেশে সিস্টেম করে রেগুলেটররা দুর্নীতি করার সুযোগ দিয়েছে।

“বিএসইসিতে কোনো সরকারের নাক গলানোর সুযোগ নেই। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা। বিগত দিনে যা হয়েছে, বিএসইসি কমিশন হিসেবে নয় বরং রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করেছে।”

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন নিয়ে বিএনপির ভেতরে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আগামীতে যদি নির্বাচিত সরকার আসে, বিএনপি আসে, আর আমরা সেই সুযোগ পাই, তাহলে আমরা স্টক মার্কেটকে স্ট্রংলি ধারন করব। আমরা বাজারকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে সিরিয়াসভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। নিয়ন্ত্রণমুক্ত ছাড়া পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। ডে টু ডে কাজ।”

গোল টেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, গত ১৫ বছরে পুজিবাজার অনেক সমস‍্যায় জর্জরিত হয়েছে।

এর মধ‍্যে ২০১০ সালে ধসের পর অলিখিতভাবে ফোর্সড সেল বন্ধ করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “করোনা মহামারীকে কেন্দ্র করে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করা হয়েছে। ফোর্সড সেল বন্ধ করে নেগেটিভ ইক‍্যুইটি তৈরি করা হয়েছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে।”

মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বর্তমানে নেগেটিভ ইক্যুইটির আকার ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার থেকে যে লভ্যাংশ পাচ্ছে, মূল্যস্ফীতির হিসাবে তারা ২ দশমিক ৯ শতাংশ লোকসানে আছেন।

গত ১৫ বছরে ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়ে ৯ হাজার কোটি টাকার পুঁজি সংগ্রহ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৪২টি জেড শ্রেণিতে চলে গেছে।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন গত ১২ বছরে উদ্দেশ্য পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে বলে মূল প্রবন্ধে তুলে ধরেন তিনি।

ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারবাজারকে দেড় বছর স্থবির করে রাখা হয়েছিল মন্তব্য করে ফারুক আহমেদ বলেন, “এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। যার মাধ‍্যমে বিনিয়োগকারীদেরকে শেয়ারবাজার থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মাধ‍্যমে আস্থা নষ্ট করা হয়েছে।

“গত দুই কমিশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শোনা যায়। এখন তো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে কখনো হয়নি। এর মাধ্যমে বাজারে আস্থা নষ্ট হয়েছে।”

আগের কমিশনের উদ্যোগে বিদেশে রোড শো করার সমালোচনাও করেন ফারুক আহমেদ।