স্প্যানিশ-বাংলা ফুটবল অভিধান এবং বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা

লা লিগা ও বাংলাদেশে স্পেনের দূতাবাসের উদ্যোগে উন্মোচন করা হলো স্প্যানিশ–বাংলা ফুটবল অভিধান।

আবু হোসেন পরাগবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 07:48 PM
Updated : 23 May 2023, 07:48 PM

‘স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি কিন্তু সবচেয়ে বেশি- আর্জেন্টিনার তিনটি, উরুগুয়ের দুটি, স্পেনের একটি’- হাসতে হাসতে বলছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিস্কো দি আসিস বেনিতেজ সালাস। মূলত ফুটবলে স্প্যানিশ ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরতে অমন উদাহরণ টানেন তিনি।

যে অনুষ্ঠানে কথাগুলি বলছিলেন বেনিতেজ, সেখানেও মূল বিষয় যে স্প্যানিশ ভাষা। বাংলাদেশে স্পেনের ক্লাবগুলি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়াতে, সঠিক তথ্য প্রদান করতে লা লিগা ও বাংলাদেশে স্পেনের দূতাবাসের উদ্যোগে উন্মোচন করা হয়েছে ‘স্প্যানিশ-বাংলা ফুটবল অভিধান।’

বাংলাদেশে স্পেনের শীর্ষ লিগ লা লিগার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বিশেষ করে দেশটির দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার অগণিত সমর্থক আছে এই দেশে। সেসব সমর্থকদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে অভিধানটি। এই অভিধানে লা লিগার সবগুলি ক্লাব, তাদের উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং ফুটবলের নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে স্প্যানিশ থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।

গুলশানে বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এই অভিধানের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায়। এ দিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলের কাছাকাছি যেতেই শুরু হয়ে যায় তুমুল ঝড়ো বৃষ্টি। থামাথামির নামই নেই। ঘন্টা দেড়েক অপেক্ষার পরও খানিকটা বৃষ্টি মাথায় নিয়েই যেতে হলো রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে।

পৌঁছানোর মিনিট দশেক পর শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান। ঘড়ির কাটায় তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। শুরুতে রাষ্ট্রদূত বেনিতেজ তুলে ধরেন এই অভিধান নিয়ে তাদের ভাবনা। 

“বাংলাদেশে ফুটবলের বিপুল জনপ্রিয়তা এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের সম্পর্কের দৃঢ়তা গড়ে তুলতে হবে। ফুটবলকে সাধারণ যোগসূত্র হিসেবে নিয়ে, এই উদ্যোগগুলো শুধু বিদ্যমান সম্পর্ককেই মজবুত করবে না, সেই সঙ্গে আমাদের দুই দেশের মধ্যকার বিকাশ, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও মর্ম উপলব্ধিতে ভূমিকা রাখবে, খুলে দেবে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ।”

এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন অন্যান্য অতিথিরা। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন লা লিগা ভারতীয় উপমহাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসে আন্তোনিও। ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও।

এই অভিধান তৈরিতে সহযোগিতা করেছে স্প্যানিশ ভাষা ও সংস্কৃতির অধ্যয়ন এবং শিক্ষার প্রচারে কাজ করা স্পেনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ইন্সতিতুতো সেরবান্তেসের’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইন্সটিটিউটের স্প্যানিশ বিভাগের শিক্ষক আমপারো পোর্তো। গত ১২ বছর ধরে তিনি এখানে স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষা দিচ্ছেন। একবিংশ শতাব্দীর স্পেনের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ফুটবলের গুরুত্ব তুলে ধরেন পোর্তো।

“স্পেনে এই খেলা কতটা গভীরভাবে প্রোথিত, তা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু বাংলাদেশে স্পেনের ফুটবল ও লা লিগার জনপ্রিয়তা সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা গত ১২ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা দিচ্ছি এবং আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আমাদের পাঠে অংশ নিয়েছে, কারণ তারা লা লিগার ভক্ত। এর মানে হচ্ছে তারা প্রথমে সের্হিও রামোস সম্পর্কে জেনেছে, কিন্তু এখন তারা মিগেল দে সার্ভান্তেসকেও (স্প্যানিশ লেখক) চেনে।”

অভিধানটিতে সঠিক স্প্যানিশ উচ্চারণে লা লিগার ক্লাবগুলির নাম দেওয়া হয়েছে। অভিধানটি অনুসরণ করলে ‘Real Madrid’ লিখতে হবে ‘রেয়াল মাদ্রিদ।’ ‘Getafe’কে লিখতে হবে ‘খেতাফে’, ‘Valencia’কে বালেন্সিয়া।

লা লিগা এই অঞ্চলে এ বছর তৃতীয় অনুবাদ কার্যক্রম হিসেবে স্প্যানিশ-বাংলা অভিধানটি নিয়ে এসেছে। এর আগে সম্প্রতি ভারতে উন্মোচন হয়েছে স্প্যানিশ-বাংলা ও স্প্যানিশ-হিন্দি ফুটবল অভিধান। তারও আগে প্রকাশ হয়েছে চীনা, আরবি, হাঙ্গেরিয়ান ও জাপানিজসহ অন্য কয়েকটি ভাষায়।