আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক অর্পিতা বিশ্বাস সতীর্থদের বলেছিলেন, কিছুতেই যেন এই ট্রফি ভারত নিয়ে যেতে না পারে।
Published : 10 Mar 2024, 06:18 PM
শিরোপা লড়াইয়ের আগের দিনের ঘটনা, ফটোসেশনে ট্রফিটি একপলক দেখেই যেন প্রেমে পড়ে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক অর্পিতা বিশ্বাস। ছুঁয়ে দেখলেন এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, এই ট্রফি তার জিততেই হবে। দলকেও দিলেন সেই বার্তা। টাইব্রেকারে ইয়ারজান বেগমের অসাধারণ নৈপুণ্যে স্বপ্ন পূরণ করার পর সেই গল্পই শোনালেন অর্পিতা।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে রোববার ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারায় বাংলাদেশ। নেপালের কাঠমান্ডুতে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়।
শিরোপা জয়ের প্রতিক্রিয়ায় ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে অধিনায়ক অর্পিতা শোনালেন ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনের সময়ের কথা এবং যেভাবে তিনি তাতিয়ে দিয়েছিলেন দলকে।
“আমি খুব শিহরিত ছিলাম, যখন আমাদের সামনে ট্রফিটা আনা হয় (ফটোসেশনের জন্য)। যখন ওটার মোড়ক খোলা হয়, তখন আমি প্রথম দেখেছিলাম। তখন থেকে ভেতরে এই অনুভূতি কাজ করছিল…যখন ট্রফি ধরতে ভারতের অধিনায়ককে বলা হলো, সে কিন্তু ধরেনি, আমি ধরেছিলাম।”
“তখন থেকেই আমার মনে হয়েছে আমি যেহেতু ট্রফিটা প্রথম স্পর্শ করেছি, আমরা দেশে নিয়ে যাব। সতীর্থদেরও আমি এটা বলেছি, ‘ট্রফিটা আমি ছুঁয়েছি, এটা যেন ভারতের কেউ নিতে না পারে।’ আমি স্বার্থক হয়েছি।”
টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ দৃঢ়তায় পোস্ট আগলেছেন ইয়ারজান। রাউন্ড রবিন লিগে দুই ম্যাচে তিনি জাল অক্ষত রেখেছিলেন; পরাস্ত হয়েছিলেন মাত্র একবার, ভারতের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয়ের ম্যাচে। ফাইনালেও তিনিই দলের নায়ক। টাইব্রেকারে তিনটি শট ঠেকানোর পর অনুমিতভাবেই প্রতিযোগিতার সেরা গোলরক্ষকের মুকুট উঠেছে তার মাথায়।
প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে এসে সেরার স্বীকৃতি পেয়ে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত তিনি। আবেগভরা কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা জানালেন বাবা ও কোচ সাইফুল বারী টিটুকে।
“আজকে অনেক ভালো লাগছে। প্রথম টুর্নামেন্ট খেলছি এবার, সেরা গোলরক্ষক হওয়ার অনুভূতিটা অনেক…কোচকে ধন্যবাদ, আমাকে এই পর্যায়ে আনার জন্য। এই প্রথম ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছি, সেরা গোলরক্ষক হয়েছি, আমি এটা আমার বাবা ও কোচকে দিতে চাই (উৎসর্গ করতে চাই)।”
রানার্সআপ ভারতের অনুশকা কুমারি হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ (৬টি) গোলদাতা। ৫ গোল করা বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড সুরভী আকন্দ প্রীতি পেয়েছেন প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। দলীয় অর্জনেই বেশি খুশি প্রীতি প্রশংসায় ভাসালেন ইয়ারজানকে।
“সর্বোচ্চ স্কোরার হতে না পারার জন্য আফসোস করছি না। কেননা, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দরকার ছিল, সেটা হয়েছি। আমাদের ইয়ারজান যে সেভ দিয়েছে….ওর প্রতি আমাদের আলাদা আত্মবিশ্বাসই ছিল যে, ও ভালো কিছু করবে, আমরা পেনাল্টিতে (টাইব্রেকারে) জিতব। ইনশাল্লাহ আমরা জিতেছি।”
সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য অনূর্ধ্ব-১৬ দল নিয়ে কাজ করার তেমন সময় পাননি কোচ টিটু। তাছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ আসরে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে সেই বিতর্কিত কয়েন টসের পর অনেক নাটকীয়তা শেষে শিরোপা ভাগাভাগি করতে হয়েছিল। এবার এককভাবে সেরার মুকুট জিততে পারায় অন্যরকম আনন্দ অনুভব করছেন বাংলাদেশ কোচ।
“এটার আনন্দ অন্যরকম। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে। অনূর্ধ্ব-১৬ দলটা তৈরি করার জন্য হাতে সময় ছিল কম, সে দিক থেকে ওরা যেটা করেছে, অসাধারণ। যেভাবে মেয়েরা পারফরম করেছে, আমি মনে করি, সব কৃতিত্ব তাদের দেওয়া উচিত।”