হ্যান্ডশেক থেকে হ্যাঁচকা টান ও হাতাহাতির পর রেফারির ওপর ক্ষোভ

প্রিমিয়ার লিগে চেলসি-টটেনহ্যামের ম্যাচজুড়ে উত্তেজনার পর ম্যাচ শেষেও লেগে গেল দুই কোচের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2022, 06:32 AM
Updated : 15 August 2022, 06:32 AM

উত্তেজনাপূর্ণ ও ঘটনাবহুল ম্যাচ তখন শেষ। দুই দলের কোচ করমর্দন করছিলেন। ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ‘অবশেষে সবকিছুর সমাপ্তি।’ কিন্তু নাটকের তখনও বাকি! টমাস টুখেল ও আন্তোনিও কন্তের ‘হ্যান্ডশেক’ রূপ নিল হ্যাঁচকা টানে। কে কাকে আগে টান দিলেন, বোঝা কঠিন। তবে মুহূর্তেই অগ্নিশর্মা হয়ে প্রায় কপালে কপাল ঠেকিয়ে মুখোমুখি দুই কোচ। ধারাভাষ্যকার এবার বললেন, “ওহহহহ… কারেকশন, এখনই শেষ নয়, ডাগ আউটের নাটকের কেবলই শুরু…!”

ডাগ আউট থেকে তাৎক্ষনিক ছুটে এলেন অনেকেই। দুই কোচকে আলাদা করতে গিয়ে তাদের মধ্যেও হয়ে গেল এক চোট। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড উত্তপ্ত পরিস্থিতি। দুই কোচকেই লাল কার্ড দেখান রেফারি। ম্যাচ শেষে রেফারি অ্যান্থনি টেইলরের ওপর ক্ষোভ ঝারলেন টুখেল।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে রোববার চেলসি ও টটেনহ্যাম হটস্পারের এই ম্যাচ জুড়েই ছিল উত্তেজনার নানা উপকরণ। মাঠের ফুটবলে ছিল তুমুল লড়াই, ফুটবলাররা মেজাজও হারান বারবার। সেখানে বাড়তি রসদ জোগান দেন চেলসি কোচ টুখেল ও টটেনহ্যাম কোচ কন্তে। চড়া মেজাজের দুই কোচ এ দিন ছিলেন তুমুল খ্যাপাটে। তাতে পরিস্থিতি হয়ে পড়ে যেন যুদ্ধংদেহী।

নতুন ক্লাবে কালিদু কলিবালির প্রথম গোলে ১৯তম মিনিটে এগিয়ে যায় চেলসি। ৬৮তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে গোল করে টটেনহ্যামকে সমতায় ফেরান পিয়া-এমিল হয়বিয়া।

এই গোলের পর আগ্রাসী ভাবে চেলসির ডাগ আউটের দিকে ছুটে যান কন্তে। তেড়ে আসেন টুখেলও। তাতেই প্রায় হাতাহাতির উপক্রম। অন্যরা এসে সরিয়ে নেন দুজনকে। হলুদ কার্ড দেখেন দুজনই।

৮ মিনিট পর চেলসিকে আবার এগিয়ে নেন রিস জেমস। বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে ওঠেন টুখেল।

ওই গোলেই চেলসি জিতে যাবে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে হেডে গোল করে টটেনহ্যামকে সমতায় আনেন হ্যারি কেইন। তার পর ম্যাচ শেষের ওই ঘটনাবহুল অধ্যায়।

ম্যাচ শেষে টুখেল অবশ্য বললেন, কন্তের ওপর তার ক্ষোভ নেই। ঘটনা আর বাড়াতেও চাইলেন না তিনি।

“আমার জানা মতে, করমর্দনের সময় পরস্পরের চোখের দিকে তাকানোই ভদ্রতা। কিন্তু তার ভাবনা হয়তো ভিন্ন কিছু ছিল… এটা খুব জরুরি ছিল না, তবে অনেক কিছুই জরুরি ছিল না।”

“রাগ ধরে রাখার মতো কিছু হয়নি… আমার মতে, সে ভালো একটা ট্যাকল করেছে, আমিও সেটিই করেছি! আমরা পরস্পরকে অপমান করিনি, একে অপরকে আঘাত করিনি, স্রেফ নিজেদের দলের জন্য লড়ছিলাম।”

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে শুরুতে নিজের পেশী দেখিয়ে মজাও করলেন টুখেল। তার মূল ক্ষোভ রেফারিং নিয়ে। চেলসি কোচের দাবি, টটেনহ্যামের দুই গোলের একটিও আসলে হওয়া উচিত নয়।

তার মতে, প্রথম গোলের বিল্ড-আপের সময় চেলসির কাই হাভার্টজকে ফাউল করা হয় এবং টটেনহ্যামের রিশার্লিসন ছিলেন অফ সাইডে। ম্যাচের সময়ই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আপত্তি জানান রেফারির সিদ্ধান্তে। কেইনের গোলের আগেও টটেনহ্যামের ক্রিস্তিয়ান রোমেরো চেলসির মার্ক কুকুরেইয়াকে চুল ধরে মাঠে ফেলে দেন বলেও অভিযোগ তার।

“৯০ মিনিট ধরে আমরা দাপট দেখিয়েছি। ওদের দুই গোলের একটিও হওয়া উচিত নয়। আমরা অসাধারণ খেলেছি এবং জয় আমাদের প্রাপ্য ছিল। এটাই আমার ভাবনা।”

“একজনকে চুল টেনে মাটিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে… এসব তো ব্যাখ্যাতীত ব্যাপার এবং আমি তা কোনোভাবেই মানতে রাজি নই। আমরা ছিলাম তীক্ষ্ণ, আমরা ছিলাম ক্ষুধার্ত, দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। আমি হতাশ যে আমার ছেলেরা প্রাপ্য ফল পায়নি।”

রেফারি অ্যান্থনি টেইলরকে সামনে চেলসির ম্যাচে দায়িত্ব না দিতে ক্লাবের সমর্থকরা অনলাইন পিটিশন শুরু করেছেন। টুখেলও সেই দাবির সঙ্গে একমত হয়ে বললেন, টেইলরকে তাদের ম্যাচে আর দায়িত্ব না দেওয়াই ভালো হবে।

“ভালোই… আমি পরের ম্যাচে কোচ হিসেবে থাকতে পারব না (লাল কার্ড দেখায়), কিন্তু এই রেফারি ঠিকই থাকবেন।”

তবে শুধু মাঠের রেফারি নয়, চেলসি কোচের ক্ষোভ ভিএআর নিয়েও।

“সত্যি বলতে, মাঠে যা-ই হোক, ভিএআর তো আছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। রেফারি অনেক সময় দেখতে না পেলে দায় দেখি না। আমিও অনেক কিছু দেখি না। কিন্তু ভিএআর দেখার জন্য তো লোক আছে। এটা ফ্রি কিক হয় না কিভাবে? লাল কার্ড কেন হবে না!।”

ম্যাচ হাতছাড়া হতে দিতে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু এভাবে হাতছাড়া হতে দেওয়া যায় না। জানি না, এসব বলার কারণে আবার শাস্তি পেতে হয় কিনা।”

ম্যাচ শেষে কন্তের কাছে যখন দুই কোচের হাতাহাতি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, শুরুতে সেই আলোচনায় যেতেই চাইলেন না তিনি। ম্যাচ কতটা উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, লড়াই কতটা হয়েছে, এসব নিয়েই বললেন তিনি।

তাকে এরপর জিজ্ঞেস করা হলো, ‘টুখেল বলেছেন, করমর্দনের সময় আপনি তার চোখের দিকে তাকানোর ভদ্রতা দেখাননি…।” কন্তে এবার বললেন, “আবারও বলছি, এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে সেটা তার ও আমার মধ্যে। অন্যদের ভাবার দরকার নেই।”

প্রশ্নকর্তাও নাছোড়বান্দা, “আপনাদের মধ্যে বড় সমস্যা ছিল বলেই মনে হয়েছে। দুই বার লেগে গিয়েছিল আপনাদের, লাল কার্ড দেখানো হলো…।” কিন্তু কন্তেও নিজের জায়গায় অটল, “আরও একবার বলছি, আমি এখানে এসেছি ফুটবল নিয়ে কথা বলতে, দুই কোচের সমস্যা নিয়ে নয়।”