হলান্ডের গোলের ক্ষুধায় মেসিকে মনে পড়ছে গুয়ার্দিওলার

তবে হলান্ড আসায় দলের সব সমস্যা মিটে যাবে, এমনটা ভাবছেন না ম্যানচেস্টার সিটি কোচ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 10:20 AM
Updated : 8 August 2022, 10:20 AM

বার্সেলোনায় সাফল্যে ভরা চার বছরে লিওনেল মেসিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন পেপ গুয়ার্দিওলা। আর্জেন্টাইন তারকার গোলের ক্ষুধা আর সাফল্য পাওয়ার তীব্র তাড়নাও খুব ভালো ভাবে উপলব্ধি করেছেন তিনি। এবার নতুন এক শিষ্যের মাঝেও গুয়ার্দিওলা দেখছেন সেই তাড়নার ছাপ। ইংলিশ ফুটবলে পথচলার শুরুতেই আর্লিং হলান্ডের দাপুটে পারফরম্যান্স দেখে ম্যানচেস্টার সিটি কোচের মনে উঁকি দিচ্ছে মেসির ছবিই।

গত সপ্তাহে কমিউনিটি শিল্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হারের ম্যাচে সিটির জার্সিতে অভিষেক হয় হলান্ডের। নতুন ঠিকানায় শুরুর ক্ষণটাকে রাঙাতে পারেননি তিনি। তবে সপ্তাহ ঘুরতেই নিজেকে মেলে ধরলেন সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান ফুটবলারদের মধ্যে বিবেচিত এই ফরোয়ার্ড।

প্রিমিয়ার লিগে রোববার সিটির শিরোপা ধরে রাখার অভিযান শুরুর ম্যাচে ওয়েস্ট হ্যামের বিপক্ষে তিনিই দলের জয়ের নায়ক। ২-০ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে দুটি গোলই করেন তিনি।

দুই অর্ধে একটি করে গোল করেন হলান্ড। প্রথমটি পেনাল্টি থেকে, যেটি আদায় করে নেন তিনি নিজেই। দ্বিতীয়টি তিনি করেন ডে ব্রুইনের মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো পাস ধরে বাঁ পায়ের শটে এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে।

ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে দুই গোল করতে পারার ভালোলাগা প্রকাশ করার পাশাপাশি হ্যাটট্রিক পূরণ করতে না পারার অপ্রাপ্তির কথাও বলেন ২২ বছর বয়সী স্ট্রাইকার।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে হলান্ডের ঠিক ‘আরও চাওয়ার’ এই কথাটাই সামনে আনেন গুয়ার্দিওলা। তুলনা টানেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির সঙ্গে।

“এটা দারুণ, আমার ভালো লাগে।”

“কোচ হিসেবে মেসির সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সে যখন দুই গোল করত, তখন তিনটি করতে চাইত, আর যখন তিনটা করত, তখন চাইত চারটা। শীর্ষ মানের গোলদাতারা কখনও সন্তুষ্ট হয় না। তারা সবসময় ক্ষুধার্ত থাকে এবং আরও চায়।”

২০২০ সালের জানুয়ারিতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে অভিষেক ম্যাচে আউক্সবুর্কের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন হলান্ড। সিটির হয়েও তেমন কিছু করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ৭০তম মিনিটে ছয় গজ বক্সের সামনে থেকে তার হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে দিয়ে যায়।

তবে যা পারলেন, সেটাও তো কম নয়। সিটির দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ অভিষেকে জোড়া গোল করলেন তিনি। ২০১১ সালের অগাস্টে প্রথম এটি করে দেখান সের্হিও আগুয়েরো। আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকার পরে নিজেকে নিয়ে যান ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোরারের উচ্চতায়।

কমিউনিটি শিল্ডের ওই এক ম্যাচের শিরোপা লড়াইয়ে হলান্ডের নিষ্প্রভ পারফরম্যান্স নিয়ে একটু সমালোচনাও হয়। জার্মান ফুটবল থেকে ইংলিশ ফুটবলে এসে কেমন করবেন তিনি, সেই সংশয় ছিল অনেকেরই। তবে সব অনিশ্চয়তার মেঘ যেন এক ম্যাচেই দূর করে দিলেন নরওয়ের এই স্ট্রাইকার।

নতুন পরিবেশে এত দ্রুত মানিয়ে নিয়ে, সমালোচনা সামলে হলান্ডের এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো আলাদা করে নজর কেড়েছে গুয়ার্দিওলার।

“আমি জানি, কীভাবে সে এই সপ্তাহের এত সমালোচনা সামাল দিয়েছে। সে খুব শান্ত ছিল, ভালোভাবে অনুশীলন করেছে। যেভাবে সে পেনাল্টি নিতে এগিয়ে গেল, দেখেই আমি বললাম, ‘দারুণ।”

“তার মধ্যে কোনোরকম দ্বিধা ছিল না। আমার তো মনে হয়, কেউ যদি তার হাত থেকে বল নেওয়ার চেষ্টা করত, তাহলে সে তার মুখে মেরে বসত, এমনকি সেটা তার সতীর্থ হলেও! বেশ ভালো একটা দিক এটা। এরকম আত্মশ্বিাসী থাকা আমি পছন্দ করি।”

গত মৌসুমে অধিকাংশ ম্যাচেই সিটির দলে ছিল না কোনো প্রথাগত স্ট্রাইকার। ‘ফলস নাইন’ রেখে দল সাজাতেন কোচ। তারপরও দলটির আক্রমণভাগ ছিল ভয়ঙ্কর, প্রতিপক্ষের রক্ষণের জন্য দুর্ভাবনার কারণ।

সেখানে এবার হলান্ড যোগ হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই তাদের শক্তি বেড়েছে আরও। তবে, হলান্ডকে পেয়ে সব সমস্যা মিটে যাবে, এমন কিছু ধরে নিয়ে বসে নেই স্প্যানিশ এই কোচ।

“আর্লিং দুই গোল করেছে, এটা তার, দলের ও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে আমাদের নতুন এক অস্ত্র।”

“কিন্তু একই সঙ্গে বলতে হবে, সে আমাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সে দলে নতুন কিছু যোগ করবে। আর এটাই আমরা চাচ্ছিলাম।”