চ্যালেঞ্জ নিতে আগ্রহী গ্যাবনের স্ট্রাইকারকে শুভকামনা জানালেন টমাস টুখেল।
Published : 02 Sep 2022, 09:49 PM
কুসংস্কারের কতই না রূপ! শীর্ষ সারির ক্লাব চেলসির কথাই ধরুন; একটা ফুটবল দলের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জার্সিগুলোর একটি ‘৯ নম্বর’, আর সেখানে কিনা এটা কেউ নিতেই চায় না। কারণ ওই কুসংস্কার। এই জার্সি পরলে নাকি এখানে সফল হওয়া যায় না, কেউ হয়নি। তবে পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াংয়ের মনে ওসব যুক্তিহীন সংস্কারের কোনো জায়গা নেই, বললেন দলটির কোচ টমাস টুখেল।
চেলসির নাম্বার নাইন হয়েই তাই আপন আলোয় উদ্ভাসিত হতে চান গ্যাবনের এই স্ট্রাইকার। গড়ে দিতে চান ব্যবধান। সেই সঙ্গে অবশ্যই, ঘুচিয়ে দিতে চান জার্সিটি ঘিরে থাকা ‘অভিশাপের’ কুসংস্কার।
গ্রীষ্মের দলবদলের শেষ দিনে এক কোটি ২০ লাখ ইউরো ট্রান্সফার ফিতে বার্সেলোনা ছেড়ে চেলসিতে নাম লেখান অবামেয়াং। চুক্তির ঘোষণার পরপরই জানিয়ে দেওয়া হয়, চেলসির নতুন নাম্বার নাইন হচ্ছেন ৩৩ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার।
এর আগে আর্সেনালের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন তিনি। সেখানে চার মৌসুমের অধ্যায়ের অধিকাংশ সময় ভালো কাটলেও শেষটা হয়নি আশানুরূপ। নতুন ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ‘অসমাপ্ত কাজ’ শেষ করার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন তিনি।
এবারের লিগে প্রথম পাঁচ ম্যাচের মাত্র দুটিতে জেতা চেলসি পরের রাউন্ডে শনিবার ঘরের মাঠে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের মাঠে খেলবে। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে টুখেল ৯ নম্বর জার্সি পরার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য বাহবা দিলেন অবামেয়াংকে।
“এটা পরার মতো যথেষ্ট সাহসী হলে সে ৯ নম্বর জার্সি নেবে।
“এটা প্রমাণের দায়িত্ব আমাদের। আমার দায়িত্ব তার জন্য সঠিক পজিশন খুঁজে বের করা, সে যেন মাঠে যথেষ্ট সহায়তা পায় সেটা নিশ্চিত করা। আর তার কাজ হলো আমাদের আক্রমণগুলোর সঠিক পরিণতি দেওয়া। সে অতীতের কোনো কিছু এবং একটা জার্সির (কুসংস্কার) নিয়ে ভীত নয়। সে তার নিজের ইতিহাস গড়তে প্রস্তুত।”
চেলসির ৯ নম্বর জার্সি ঘিরে থাকা কুসংস্কারের বিষয়টি প্রথম সামনে আসে এ মৌসুমের শুরুতে। জার্সিটি ফাঁকা থাকার কারণে ওঠা প্রশ্নের উত্তরে টুখেল নিজেই বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
“ছেলেরা আমাকে বলে এটা অভিশপ্ত…এমন নয় যে, ট্যাকটিকাল কোনো কারণে আমরা এই জার্সি ফাঁকা রেখেছি। বিস্ময়করভাবে, কেউ এটা ছুঁয়ে দেখতে চায় না। এখানে যারাই আমার চেয়ে বেশি সময় ধরে আছে, তারা সবাই বলে, ‘আহ, জানেন না, অমুক ৯ নম্বর জার্সিকে খেলেছে এবং গোল করতে পারেনি। তমুক ৯ নম্বর পরে খেলেছে, স্কোর করতে পারেনি।’ সবাই এসব কথা বলে।”
“এই মুহূর্তে তাই কেউই ৯ নম্বর জার্সি নিতে চায় না। আমিও কুসংস্কারে বিশ্বাস করি, তাই ভালোভাবেই বুঝতে পারি, কেন ছেলেরা এটা না নিয়ে অন্য জার্সি নিতে চায়।”
দলটিতে সবশেষ এই জার্সি পরেছিলেন রোমেলু লুকাকু। গত বছর ৯ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড খরচ করে তাকে দলে টেনেছিল চেলসি। কিন্তু প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি তিনি। কোচের সঙ্গে সম্পর্কেও ফাটল ধরে। রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে দলে টেনে গত জুনে তাকে ফেরত পাঠানো হয় ইন্টার মিলানে।
এখানে ৯ নম্বর জার্সি পরে ব্যর্থ হওয়ার সারিতে আছে আরও বড় কিছু নাম। এরনান ক্রেসপো, ফের্নান্দো তরেস, রাদামেল ফালকাও, গনসালো হিগুয়াইনের মতো স্ট্রাইকাররা পারেননি আলো ছড়াতে। লুকাকুর আগে আলভারো মোরাতা অনেক সম্ভাবনা নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে চেলসিতে এসে এই জার্সিতে পারেননি ছাপ রাখতে।
সব মিলিয়ে দিনে দিনে কুসংস্কারটা আরও শক্তিশালী ভিত পেয়েছে। অবামেয়াং সেটা ভেঙে দেওয়ার ব্রত নেওয়ায় তাকে শুভকামনা জানালেন টুখেল।
“অবা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে। তাই সে ৯ নম্বর জার্সি পরলে এবং লন্ডনের মানুষকে যদি দেখাতে চায় যে তাদের ভাবনার চেয়ে সে ভালো, তাহলে তাকে শুভকামনা।”
আর্সেনালের শেষ দিকে এসে কোচ মিকেল আর্তেতার সঙ্গে অবামেয়াংয়ের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। শৃঙ্খলাজনিত ইস্যুয় হারিয়েছিলেন অধিনায়কত্ব। তবে তার সঙ্গে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে টুখেল বললেন, এখানে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।