তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে গণমাধ্যমকে আগেভাগে কিছু জানাননি কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ।
Published : 30 Jul 2023, 08:05 PM
সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের কেলেংকারির অধিকতর তদন্তে গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে। প্রতিবেদনের ভেতরের বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলেননি তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ। তবে রিপোর্ট পাওয়ার পর গণমাধ্যমের সামনে এসে সালাউদ্দিন জানালেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ব্যক্তিগতভাবে তার কোনো আপত্তি নেই।
ফান্ডের অপব্যবহারের অভিযোগে গত এপ্রিলে সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ফিফা। ওই সময় নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদনের পুরোটাই প্রকাশ করেছিল বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটি।
ওই অভিযোগের অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে বাফুফে। প্রায় তিন মাস পর রোববার তা জমা দেয় তারা। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিটির চেয়ারম্যান নাবিল বিষয়টি ছেড়ে দেন বাফুফের নির্বাহী কমিটির ওপর। তবে সালাউদ্দিন জানান আপত্তি না থাকার কথা।
“আমি ইমিডিয়েটলি নির্বাহী কমিটির সভা ডাকব। সভায় সকলের কাছে প্রতিবেদন দেব, নির্বাহী কমিটি চূড়ান্ত করবে তারা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আমি পাঁচ মিনিট আগে প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। এটা পড়েও দেখিনি। আপনারা এখানে আছেন বলে আমি কথা বলতে এলাম। প্রতিবেদন না পড়ে আমি তো এ নিয়ে কথা বলতে পারব না।”
“(প্রতিবেদন প্রকাশে) আমার এখানে কোনো সমস্যা নাই। বোর্ড মিটিং ডেকে তাদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেব, তারা সিদ্ধান্ত নেবে- করণীয় কি? আমি প্রতিবেদন পড়ব, কিন্তু এখানে হাত দেব না। প্রতিবেদন বোর্ড মেম্বারদের হাতে ছেড়ে দেব। পাবলিকলি প্রকাশ করার বিষয়ে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু সিদ্ধান্তটা বোর্ড নেবে।”
সোহাগের ওই কেলেংকারি খতিয়ে দেখতে গত ১৭ এপ্রিল নাবিলকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে বাফুফে। কমিটি গঠনের কদিন পরই দুই জন আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহি পদত্যাগ করেন, বাকিদের নিয়ে কাজ চালিয়েছে কমিটি।
গত ৭ মে তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছ থেকে জুলাই পর্যন্ত সময় চেয়ে নেওয়ার কথা।
ফিফার ফান্ডের অপব্যবহারের কারণে সোহাগকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় বলে ফিফার বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বাফুফেকে দেওয়া ফিফার ফান্ডের খরচের হিসাব দিতে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে। ওই সময় সোহাগের মতো হিসাবরক্ষক আবু হোসেন ও ম্যানেজার অপারেশন্স মিজানুর রহমানের যোগসাজশের গুঞ্জন উঠেছিল। দুজনেই পদত্যাগপত্র জমা দিলে গুঞ্জনে যোগ করে নতুন মাত্রা। গত ২৩ জুলাই দুজনের পদত্যাগপত্র ‘শর্তসাপেক্ষে’ গ্রহণ করে বাফুফে।
তদন্তে বাফুফের অফিসিয়াল বা নির্বাহী কমিটির কোনো সদস্যের নাম উঠে এসেছে কিনা, এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি নাবিল। তবে জানালেন, তাদের কিছু সুপারিশ আছে, যেগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামীতে বাফুফের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছ্বতা বাড়াবে।
“তিন মাস তদন্ত করে আমরা রিপোর্টটি নির্বাহী কমিটির সামনে উপস্থাপনের জন্য সভাপতির কাছে হস্তান্তর করেছি। পরের যা কিছু, যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্বাহী কমিটি করবে। আশা করি, যে রিপোর্টটি দিয়েছি, তা বাস্তবায়ন হলে আগামীতে বাফুফের কার্যক্রম আরও সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আমরা যে তদন্ত করেছি, সেখানে আমাদের যে ফাইন্ডিংস, সেটা কিন্তু আমরা প্রতিবেদনেই উল্লেখ করেছি। সেটা যেহেতু রিপোর্টের অংশ, সেহেতু এটা নিয়ে এখানে কিছু বলতে পারছি না।”
“ফিফার অভিযোগগুলো আমরা আরও গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখেছি। এর সাথে আরও কিছু বিষয় যুক্ত ছিল, সেগুলো হয়ত পরবর্তীতে বাফুফেতে সংরক্ষিত থাকবে। (বাফুফের অফিসিয়াল বা কমিটির কারো সংশ্লিষ্টতা) এটা আমাদের প্রতিবেদনেই থাকবে। কিছু সুপারিশও আছে। আমাদের এই কমিটি করা হয়েছে, বাফুফের কার্যক্রমকে আরও তরান্বিত করার জন্য। ভবিষ্যতে যেন এই প্রশ্নগুলো না ওঠে, সেজন্য। ভবিষ্যতে যারা কাজ করবে, তারা যেন আমাদের এই ফাইন্ডিংস থেকে কাজ করতে পারে, যাতে করে ফিফা বা এএফসি থেকে এ ধরনের অভিযোগ না আসে। কমিটির সবাই সম্মিলিতভাবেই এই কাজটি করেছি। নিজেদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট আমরা।”