প্রস্তুতির পরতে পরতে ‘সুখস্মৃতি’ ফেরানোর তাড়া বাংলাদেশের

সিশেলসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ প্রীতি ম্যাচে জয় ছাড়াও আরও অনেক চাওয়া বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরসিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2023, 03:01 PM
Updated : 27 March 2023, 03:01 PM

তক্ষণে সন্ধ্যা লেগেছে। বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া প্রস্তুতি শেষ। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের কোণে রাখা বরফ-পানি ড্রামে একে একে সবাই শরীর গলিয়ে দিতে ব্যস্ত। এরই মধ্যে শুরু হলো হাকডাক-সোহেল, সোহেল ভাই। সোহেল রানা ডাকে সাড়া দিতে চাইছিলেন না। একরকম তাকে জোর করে ধরে আনা হলো এক কোণায়। শুরুতে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাল সবাই, এরপর শুরু হলো এই মিডফিল্ডারের মাথায় ডিম ভাঙার উৎসব! ২৭ মার্চ সোহেলের জন্মদিন। 

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সোমবারের প্রস্তুতিতে এতটুকুই ছিল উৎসবের আমেজ। এর আগের প্রায় দেড় ঘণ্টা কঠোর অনুশীলন করালেন হাভিয়ের কাবরেরা। রানিং, স্ট্রেচিংয়ে গা গরম করে নিয়ে শুরু হলো মূল অনুশীলন। শুটিং এবং সেট-পিসের প্রস্তুতি হলো আটঘাঁট বেঁধে।

বেশ কিছুদিন ধরে ফরোয়ার্ডদের পায়ে গোলের দেখা মেলা ভার। সবশেষ দুই ম্যাচে দলের ত্রাতা দুই ডিফেন্ডার। মালাবির বিপক্ষে ‘আন-অফিসিয়াল’ ম্যাচে বিশ্বনাথ ঘোষ, সিশেলসের বিপক্ষে প্রথম প্রীতি ম্যাচে কাজী তারিক রায়হান এনে দিয়েছিলেন গোল। মঙ্গলবার সিশেলসের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে ফরোয়ার্ডদের কাছে গোল চান কাবরেরা।

শুটিং ও সেট পিসের অনুশীলনে তাই এলিটা কিংসলে, আমিনুর রহমান সজীব, সুমন রেজা ঘাম ঝরালেন বেশ। জামাল ভূইয়া, তারিক, তপু এবং সাদউদ্দিন লম্বা ক্রস বাড়াতে থাকলেন একের পর এক, কিংসলে-সুমনরা কখনও শট নিলেন, কখন লাফিয়ে হেডে খুঁজে নিতে চাইলেন জাল। যদিও খুব কম সময়ই জালের দেখা পেলেন তারা। 

দুই দলে ভাগ হয়ে খেলা ম্যাচের অধিকাংশ সময় বাম দিক দিয়ে লম্বা ক্রস শাণাতে দেখা গেল ডিফেন্ডার তপু বর্মনকে। লম্বা কোনাকুনি উঁচু পাসে তিনি বল বাড়ালেন সাদউদ্দিন, জামালদের উদ্দেশে। একই ভূমিকায় দেখা গেল তারিককেও। এই পর্বে কখনও আনিসুর রহমান জিকো, কখনও মিতুল মার্মা, শহীদুল আলম সোহেল ও মেহেদী হাসান শ্রাবণ বেশ দৃঢ়তায় সামলালেন পোস্ট।

গোলকিপারদের মধ্যে জিকো ও মিতুল কাটালেন সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময়। প্রথম ম্যাচের দলে ছিলেন এই দুই গোলরক্ষক। প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক জিকো প্রথম ম্যাচে আগলে রেখেছিলেন পোস্ট। ক্লিনশিট নিয়ে ফিরেছিল দল। দ্বিতীয় ম্যাচেও খুব সম্ভবত বসুন্ধরা কিংসের এই গোলরক্ষকের কাঁধেই উঠবে দায়িত্ব।

প্রস্তুতি নিয়ে খুশি কাবরেরা। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি এখনও। জানিয়েছিলেন, সিশেলসকে হারিয়ে ২০১৯ সালের পর টানা দুই ম্যাচ জয়ের আনন্দে ভাসাতে চান ফুটবলপ্রেমীদের। সেবার ভূটানকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

প্রস্তুতি শেষে কাবরেরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, প্রায় চার বছর আগের সেই সুখস্মৃতি ফেরানোর তাড়ার সঙ্গে আরও চাওয়া আছে তার। দলের কাছে জয় ছাড়াও উপভোগ্য ফুটবল দেখতে চান এই স্প্যানিশ কোচ। 

“সৌদি আরবের প্রস্তুতির ফাঁকে মালাবির বিপক্ষে দারুণ খেলেছিল ছেলেরা। যদিও ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। সিলেটে প্রথম ম্যাচে আমি মনে করি দল ভালো খেলেছে। তবে মালাবি ম্যাচের মতো সুন্দর খেলতে না পারার কারণ এই মাঠ। তবে এটা কোনো অজুহাত নয়।”

“আমার কাছে দুটো বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত জয় পাওয়া এবং দ্বিতীয়ত উপভোগ্য ফুটবল খেলা। আশা করি, দ্বিতীয় ম্যাচে ছেলেরা দুটোই করতে পারবে। আগের ম্যাচের চেয়ে এ ম্যাচে আরও ভালো ফুটবল উপহার দিবে।” 

প্রথম ম্যাচে সজীব-রাকিব হোসেনরা আক্রমণভাগে জ্বলে উঠতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে এলিটা কিংসলে সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডও হেলায় হারান সুযোগ। তবে গোল খরায় ভোগা ফরোয়ার্ডদেরকে যেন চাপ মুক্ত রাখতে চাইলেন কাবরেরা। 

“আমি মনে করি, আমাদের আক্রমণভাগে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়ার মতো ভালো মানের ফরোয়ার্ড আছে। অবশ্যই আরও বেশি গোল পেলে আমার ভালো লাগবে, কিন্তু যতক্ষণ আমরা জিততে থাকব, ততক্ষণ কে গোল পেল, সেটা নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই।” 

“স্ট্রাইকার, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কিংবা ডিফেন্ডার –যেই গোল করুক সেটা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই আমার। ফরোয়ার্ডদের উপর আমার পুরো আস্থা আছে এবং আমি মনে করি, আমাদের আক্রমণভাগে ভালো মানের খেলোয়াড় আছে।”