নাচ, গান আর উদযাপনে সময় কাটছে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের

ব্রাভোর চ্যাম্পিয়ন গানের সঙ্গে নাচ, কেক কাটা, হাসি, মজায় রাত কেটেছে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েদের।

কাঠমান্ডু থেকে মোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2022, 06:15 AM
Updated : 20 Sept 2022, 06:15 AM

কাঠমান্ডুর সোয়াল্টি হোটেলের লবিতে কেউ গল্পে মেতে আছেন। কেউ ডুবে আছেন মোবাইল নিয়ে। কোচ-কর্মকর্তারাও আয়েশী ভঙ্গিতে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সব মিলিয়ে সুখি একটা দলের প্রতিচ্ছবি যেন। আনন্দের আবহ ছড়িয়ে চারপাশে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়ার উৎসবের রেশ মঙ্গলবার সকাল গড়িয়েও চলছে বিরামহীন। 

কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সোমবার নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। এরপর শুরু হওয়া উৎসব চলছে রাতভর। 

মাঠেই নেচে-গেয়ে প্রথম শিরোপা জয়ের উদযাপনে মেতেছিলেন মাসুরা-কৃষ্ণা-সানজিদারা। টিম বাসের ভেতরেও চলেছে আনন্দ-নৃত্য। চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য টিম হোটেলের পক্ষ থেকে ছিল কেক কাটার আয়োজন। পরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ডোয়াইন ব্রাভোর ‘চ্যাম্পিয়ন’ গানের তালে সুর মিলিয়ে নেচেছেন সবাই। 

মিডফিল্ডার সানজিদা খাতুন জানালেন তাদের রাতভর উদযাপনের গল্প। 

“মাঠে নেচেছি, বাসেও নেচেছি, হোটেলে ফিরেও নাচানাচি করেছি, গান গেয়েছি, কেকে কেটেছি-এগুলো করেই রাত পার করেছি।” 

বিরাটনগরে আত্মঘাতী গোল করার কষ্ট ভুলে মাঠেই নেচেছেন মাসুরা পারভীন। কৌতুকপূর্ণ হাসি দিয়ে তিনি জানালেন, স্বস্তির ঘুম দিয়ে উদযাপন সেরেছেন তিনি!

“ওরা সবাই নাচ-গান করেছে। হোটেলে ফিরতেও অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল, তাই আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম, তাই খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।” 

ঠিক উল্টো অবস্থা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের। এতদিনের পরিশ্রমের ফল পেয়ে নির্ঘুম রাত কেঁটেছে তার! 

“মেয়েদের ছেড়ে দিয়েছিলাম, তারা যেন নিজেদের মতো করে এই ঐতিহাসিক অর্জন উপভোগ করে। আমার তো ঘুমই আসেনি। চেষ্টা করেও চোখ বুজতে পারিনি।”

বরাবরই খুবই প্রাণোচ্ছল মারিয়া ও মনিকা। দলের মাঝমাঠ যেমন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামলান দুজনে। হোটেলের লবিতেও দুজনকে দেখা গেল পাশাপাশি বসে থাকতে। ব্রাভোর চ্যাম্পিয়ন গানের নাচের ভঙ্গি করে মারিয়া জানালেন উৎসবের রজনী কেমন করে কাটালেন তারা। 

“খুব এনজয় করেছি। মাঠ থেকেই শুরু হয়েছে নাচানাচি। টিম হোটেলে আসার বাসে উঠে ডিজে ব্রাভোর চ্যাম্পিয়ন গানের তালে নাচানাচি করলাম। ভিডিও করলাম, সেলফি তুললাম। ওখান থেকে হোটেলে এসে কেক কাটলাম। এরপর ডিনার সেরে আনন্দ করে রুমে ফিরলাম। রুমে ফিরে আমি আর সাজেদা নাচানাচি করেছি, বাকিরা কী করেছে, জানি না… (হাসি)।” 

ডিফেন্ডার নিলুফা ইয়াসমিন নীলা জানালেন অভিনন্দনের বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন তারা। 

গান, নাচানাচি তো করেছিই। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। এরপর তো বন্ধুদের ফোন এসেই যাচ্ছে। কখন দেশে ফিরব, কখন দেখা হবে, কবে মিষ্টি খাওয়াবো-শুধু এই প্রশ্ন।” 

চুপচাপ প্রকৃতির শামসুন্নাহার জুনিয়র মশগুল ছিলেন ফোনে। নেপালের বিপক্ষে বদলি নামার চার মিনিট পর গোল করা এই ফরোয়ার্ড জানালেন সিরাত জাহান স্বপ্নার অভাব পূরণ করতে পারার তৃপ্তির কথা।

“আমাদের মতো করে সেলিব্রেশন করেছি। চিৎকার-চেঁচামেচি করেছি ইচ্ছেমতো। সবচেয়ে ভালো লাগছে গোল করতে পেরে। স্বপ্না আপুর জায়গায় নেমে আমি খুব টেনশনে ছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল, আমি কী পারব! শেষ পর্যন্ত পেরেছি।” 

উদযাপন নিয়ে বলতে গিয়ে ঋতুপর্না ভাষাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। 

মাঠে এনজয় করেছি, বাসে এনজয় করেছি। খুব মজা করেছি। রুমে ফিরে তহুরা আর আমি দারুণ মজা করেছি।” 

সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু জানালেন ছোটন ও অন্যাদের সঙ্গে গল্পে রাত কাটানোর কথা। ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবুর কথায় ভেসে উঠল মেয়েদের মুক্ত বিহঙ্গের মতো উদযাপন। 

“এতদিন মেয়েরা শুধু ম্যাচের টেনশনে ছিল। আমাদের মধ্যেও এই টেনশন ছিল। কাল রাতে এসবের কিছুই ছিল না। আমরাও মেয়েদের সঙ্গে সেলিব্রেট করেছি। মেয়েদের ইচ্ছেমতো সেলিব্রেশনের সুযোগ দিয়েছি।” 

রাতের উৎসবের পুরো চিত্র যেন ফুটে উঠল অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কথায়। 

আমি তো সাড়ে ১২টার সময় দেখি আমার রুমমেট (শামসুন্নাহার) উধাও; সে আমাকে ফেলে রেখে সেলিব্রেট করতে চলে গেছে বাকিদের সঙ্গে! আসলে অন্যরকম রাত ছিল।” 

উদযাপনের বাকি আছে আরও। নেপালে বাংলাদেশ হাই কমিশনের আনন্দ আয়োজন আছে মঙ্গলবার। ট্রফি নিয়ে দল দেশে ফিরবে বুধবার।